আমি ইউনূস-হাসিনা দ্বন্দ্বের বলি: টিউলিপ

যুক্তরাজ্যের ট্রেজারি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিক। ছবি: সংগৃহীত (ফেসবুক থেকে)
টিউলিপ সিদ্দিক। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাজ্যের সাবেক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগকে পুরোপুরি অবাস্তব ও ভিত্তিহীন বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, তিনি মূলত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও তার খালা ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যকার দ্বন্দ্বের মাঝে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে টিউলিপ এটাও বলেন, 'বাংলাদেশে অনেকে অন্যায় করেছে, তাদের শাস্তি হওয়া উচিত। কিন্তু আমি তাদের মধ্যে একজন নই।'

টিউলিপ সিদ্দিক জানান, এক সপ্তাহের বেশি সময় আগে একজন সাংবাদিক তার আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করার পর তিনি প্রথম জানতে পারেন যে, বাংলাদেশে দুর্নীতির দায়ে তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ঢাকায় পূর্বাচলে তার মা, ভাই ও বোনের জন্য প্লট পাইয়ে দিতে প্রভাব খাটানোর অভিযোগে টিউলিপকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

এই মামলায় ঢাকার একটি আদালতে আজ টিউলিপের বিচার শুরু হচ্ছে। এই মামলায় টিউলিপের সঙ্গে আরও ২০ জনের বেশি আসামি রয়েছেন।

পুরো ঘটনাটিকে একটি দুঃস্বপ্নের সঙ্গে তুলনা করে টিউলিপ বলেন, 'আমার মনে হচ্ছে, আমি যেন এক পরাবাস্তব দুঃস্বপ্নের মধ্যে আটকা পড়েছি, যেখানে আমাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে, অথচ আমি জানিই না অভিযোগটা আসলে কী বা বিচারটা কী নিয়ে।'

তিনি জানান, এখনও তিনি কোনো সরকারি সমন পাননি এবং সেটা পেলে কী করবেন সে বিষয়ে আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলছেন। বাংলাদেশে বিচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, '(যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের) কোনো প্রত্যর্পণ চুক্তি নেই, আমি নিজেই বিষয়টি খুঁজে দেখেছি।'

ক্রেমলিনে পুতিনের সঙ্গে সপরিবারে টিউলিপ ও শেখ হাসিনা। এপি ফাইল ছবি

শেখ হাসিনাকে রক্ষার কোনো উদ্দেশ্য তার নেই জানিয়ে টিউলিপ বলেন, 'আমি আমার খালাকে রক্ষা করতে এখানে আসিনি। আমি জানি, তার শাসনামল কীভাবে শেষ হলো, তা নিয়ে তদন্ত চলছে। আমি চাই বাংলাদেশের মানুষ যেন সেই বিচার পায়, যা তারা চায়।'

রূপপুর ও পুতিনের সঙ্গে ছবি নিয়ে অভিযোগ

সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়ার একটি কোম্পানির সঙ্গে করা চুক্তি থেকে পাঁচ বিলিয়ন ডলার আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে টিউলিপের বিরুদ্ধে। গত বছর তার একটি ছবি পুনরায় সামনে আসে, যেখানে ২০১৩ সালে মস্কোতে শেখ হাসিনা ও ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তাকে হাস্যোজ্জ্বল অবস্থায় দেখা যায়।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, 'আমার খালা রাষ্ট্রীয় সফরে রাশিয়ায় গিয়েছিলেন, আর আমার বোন ও আমি লন্ডন থেকে সেখানে তার সঙ্গে দেখা করতে যাই। আমি কোনো রাজনৈতিক আলোচনায় জড়িত ছিলাম না... শেষ দিনে, সেখানে উপস্থিত সব রাজনীতিবিদের পরিবারকে একটি চা-চক্রে আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং সেখানেই ছবিটি তোলা হয়। পুতিনের সঙ্গে আমার মাত্র দুই মিনিটের জন্য দেখা হয়েছিল।'

সাক্ষাৎকারে লন্ডনের কিংস ক্রসে থাকা একটি ফ্ল্যাট নিয়েও কথা বলেন টিউলিপ। অভিযোগ রয়েছে, ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত এক ব্যক্তি তাকে ফ্ল্যাটটি দিয়েছিলেন, যদিও তিনি আগে এক সংবাদপত্রকে বলেছিলেন, তার বাবা-মা ফ্ল্যাটটি কিনে দিয়েছিলেন। টিউলিপের ভাষ্য, তার বাবা-মা প্রবীণ বয়সী হওয়ায় তাদের স্মৃতিবিভ্রমের কারণে তার সেই ভুলটি হয়েছিল।

এদিকে, যুক্তরাজ্যের সরকারি একটি সংস্থা সংস্থা শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্পর্কিত দুই ব্যক্তির লন্ডনে থাকা প্রায় ৯০ মিলিয়ন পাউন্ডের সম্পত্তি জব্দ করেছে। এর মধ্যে একটি সম্পত্তিতে টিউলিপের মা শেখ রেহানা থাকতেন। এক্ষেত্রেও টিউলিপের একটাই কথা, এর সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই এবং ড. ইউনূস ও শেখ হাসিনার দ্বন্দ্বের তার কোনো যোগসূত্র না থাকার পরও তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

Comments

The Daily Star  | English

‘No vote’ option: EC proposes amendments to RPO

Commission moves to expand law enforcement role in proposed RPO amendments

17m ago