বিমানের রেকর্ড মুনাফা

৫৫ বছরের যাত্রায় কেবল ২৬ বছর মুনাফা করেছে জাতীয় পতাকাবাহী উড়োজাহাজ সংস্থাটি
বিমানের ফ্লাইট
ছবি: সংগৃহীত

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস লিমিটেড ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রেকর্ড ৯৩৭ কোটি টাকার অনিরীক্ষিত মুনাফার ঘোষণা দিয়েছে।

৫৫ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ এই অর্জনের পেছনে দক্ষ সম্পদ ব্যবস্থাপনা, কৌশলগত পরিকল্পনা ও যাত্রীসেবার উন্নয়নকে কৃতিত্ব দিয়েছে বিমান।

বিমানের জনসংযোগ বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার এ বি এম রওশন কবির বলেন, '১৯৭২ সালে মাত্র ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা রাজস্ব নিয়ে যাত্রা শুরু করা বিমান ধীরে ধীরে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের সীমিত অবকাঠামো ও সম্পদ থেকে আজকের আধুনিক ও প্রতিযোগিতামূলক এয়ারলাইনসে রূপ নিয়েছে।'

সম্প্রতি বিমানের উড়োজাহাজে প্রযুক্তিগত সমস্যা দেখা দেওয়ায় রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা মান নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি, এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বিমানের বকেয়া ও দায়ের পরিমাণ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। এমন সময় বড় অংকের এই মুনাফার ঘোষণা দিলো সংস্থাটি।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) বিমানের কাছে পাবে ৮ হাজার ১২৭ কোটি টাকা।

কেবলমাত্র বেবিচকই বিমানের কাছে পাবে ৬ হাজার ৩২৭ কোটি। এর মধ্যে ৯১৯ কোটি টাকা মূল বকেয়া এবং বাকি ৫ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা সারচার্জ, মূসক (ভ্যাট) ও আয়কর। জ্বালানি তেল বাবদ বিপিসির প্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে বিমানের কাছে।

বিমান কর্মকর্তারা জানান, এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে বিমানের সর্বোচ্চ মুনাফা হয়েছিল ৪৪০ কোটি টাকা।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিমানের আয় দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা। এ নিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো সংস্থাটির আয় ১০ হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করেছে।

১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিমান ২৬ বছর মুনাফা করেছে, আর বাকি বছরগুলো থেকেছে লোকসানে।

২০০৭ সালে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরের পর গত ১৮ বছরে বিমান মোট ৫৮৯ কোটি টাকা মুনাফা করেছে।

বর্তমানে বিমানের বহরে আছে ২১টি উড়োজাহাজ—যার মধ্যে ১৯টির মালিকানা সরাসরি বিমানের। এর মধ্যে রয়েছে ছয়টি বোয়িং ৭৮৭, চারটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর, চারটি বোয়িং ৭৩৭ এবং পাঁচটি ড্যাশ-৮ কিউ৪০০। বিমান বর্তমানে ২১টি আন্তর্জাতিক ও সাতটি অভ্যন্তরীণ গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করে।

বিমান জানায়, নিয়মিত নিরীক্ষা থেকে বড় ধরনের সংস্কার পর্যন্ত সর্বত্র নিজস্ব রক্ষণাবেক্ষণ সক্ষমতাই তাদের অন্যতম শক্তি। এর ফলে তাদের খরচ কমে, বিলম্ব কমায় এবং আন্তর্জাতিক মানের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিমান ৩৪ লাখ যাত্রী এবং প্রায় ৪৪ হাজার টন কার্গো পরিবহন করেছে। এর কেবিন ফ্যাক্টর দাঁড়িয়েছে ৮২ শতাংশে, যা আগের বছরের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে।

২০২৫ সালের জানুয়ারিতে বিমান তার ইতিহাসে সর্বোচ্চ টিকিট বিক্রির রেকর্ড করেছে। দ্রুত লাগেজ সরবরাহ, উন্নত ইন-ফ্লাইট সেবা ও আধুনিক বিমানবন্দর কার্যপ্রণালী যাত্রীদের সন্তুষ্টিও বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে বিমান।

অন্তর্বর্তী সরকারের নিয়োগকৃত নতুন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কঠোর আর্থিক নিয়ন্ত্রণ, সম্পদের উন্নত ব্যবহার ও দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণকে বিমান এই রেকর্ড মুনাফার কৃতিত্ব দিয়েছে।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ এটিএম নজরুল ইসলাম বিমানের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মুনাফা নিয়ে আরও স্বচ্ছতা দাবি করে বলেন, 'বিমান যদি তাদের দায়-দেনা এবং বেবিচক ও বিপিসির কাছে কত টাকা বকেয়া আছে তা স্পষ্ট করত, তাহলে ভালো হতো।'

যদিও বিমানের জেনারেল ম্যানেজার রওশন কবির মনে করেন, এ ধরনের উদ্বেগ অমূলক।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ব্যালান্স শিটে সম্পদ ও দায়ের পরিমাণ স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকে। যেমন: বেবিচক ও বিপিসির কাছে বকেয়া থাকলে সেটা দায় অংশে দেখানো হবে।'

নিজেদের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, 'ধরা যাক বিমানের কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে ১০০ কোটি টাকা বকেয়া আছে। আমি মাসিক কিস্তিতে সেটা পরিশোধ করি। এটা আমাদের ব্যয়। বিমান কিস্তিসহ সব ব্যয় আয় থেকে বাদ দেয়। বাকিটাই বিমানের নিট মুনাফা।'

তিনি জানান, বার্ষিক সাধারণ সভায় নিরীক্ষা শেষে হিসাব অনুমোদন করা হবে। তারপর ব্যালান্স শিট প্রকাশ পাবে। 'তখন জানা যাবে কার কাছে বিমানের কত বকেয়া আছে।'

তিনি আরও উল্লেখ করেন, বকেয়া হিসাব নিয়ে বিমান ও বেবিচকের হিসাবের মধ্যে অমিল রয়েছে।

'জাতীয় গৌরব ধরে রাখার লক্ষ্য নিয়ে বিমান বিশ্বমানের সেবা, নির্ভরযোগ্যতা ও যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ এয়ারলাইনস হওয়ার প্রত্যাশা করছে,' বলে জানান রওশন কবির।

Comments

The Daily Star  | English

With acreage and output falling, is there any prospect for wheat in Bangladesh?

Falling wheat acreage raises questions about food security amid climate change

15h ago