বিশ্বের অনেক অভিনেতার থেকেও এগিয়ে ভারতীয় অভিনেতারা

রবার্ট ডাওনি জুনিয়র

অমিতাভ বচ্চন, সালমান খান, অক্ষয় কুমারদের চেনে না বা নাম শোনেনি এমন লোক এই ইন্টারনেটের যুগে পাওয়া যাবে খুব কম, বিশেষ করে এই ভারতীয় উপমহাদেশে। আপনি হয়তো বিশ্বাস করবেন না তাদের নাম-ডাকের সঙ্গে সঙ্গে উপার্জনটাও নেহাত কম নয়। এমনকি তারা মার্কিন তারকা মার্ক ওয়ালবার্গ, ডুয়েন জনসন (দ্য রক) বা পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান খ্যাত জনি ডেপদের থেকেও অনেক বেশি আয় করেন। অবিশ্বাস্য মনে হলেও মিথ্যা বলছি না মোটেও।

জ্যাকি চ্যান
ব্রেডলি কুপার
ভিন ডিজেল


ফোর্বস প্রতি বছর বলিউড তারকাদের নিয়ে একটি তালিকা করে থাকে। এই তালিকাটি হয় সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়ার হিসাবে। এই প্রথমবারের মতো তারা হলিউডের সঙ্গে সঙ্গে অন্যদেরও যুুক্ত করেছে এই তালিকায়। তালিকায় যোগ হয়েছে ১২টি নতুন মুখ, যার মধ্যে শুধু ভারত থেকেই যুক্ত হয়েছে পাঁচজন। তালিকার মোট চৌত্রিশ জনের মধ্যে মার্কিনিদের পর বেশি স্থান দখল করে আছে ভারতীয় তারকারাই। ভারতীয়দের যৌথ আয়ের পরিমাণ ১৪০.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তিনজন বলিউড অভিনেতা রয়েছেন শীর্ষ দশের মধ্যে। এই তিনজনের মধ্যে অমিতাভ বচ্চন এবং সালমান খান প্রত্যেকে ৩৩.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে যৌথভাবে তালিকার সপ্তম স্থানে রয়েছেন। তাদের এই আয় ক্রিস প্রাট এবং বেন এফ্লেকের আয়ের যোগফলের থেকে বেশি।

অ্যাডাম স্যান্ডলার
টম ক্রুজ
অমিতাভ বচ্চন

 


৭২ বছর বয়সী অমিতাভ বচ্চন তালিকায় থাকা সবচেয়ে বেশি বয়সী তারকা। তালিকায় থাকা দ্বিতীয় বয়স্ক তারকা ৬২ বছরের লিয়াম নিসনের থেকে তার আয় ১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বেশি। বিভিন্ন বিজ্ঞাপন আর বিশেষ করে ভূতনাথ রিটার্নস তার আয় বৃদ্ধিতে একটি ভূমিকা রেখেছে। অমিতাভ বচ্চনের আয় বৃদ্ধির পেছনে আরো একটি বড় অবদান রয়েছে দীর্ঘ সময় ধরে প্রচারিত হওয়া হু ওয়ানটস টু বি এ মিলিয়নিয়ার-এর হিন্দি সংস্করণ কৌন বানেগা ক্রোড়পতি অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করা। ২০১৪ সালে প্রচারিত বচ্চনের উপস্থাপিত এই অনুষ্ঠানটির অষ্টম আসরে সাপ্তাহিক দর্শক সংখ্যা ছিল প্রায় ৫.২ মিলিয়ন।
বলিউডের ব্যাড বয় খ্যাত সালমান খান তার দীর্ঘ ক্যারিয়ারের পুরোটাই বিতর্কের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা সত্ত্বেও অমিতাভ বচ্চনের পাশাপাশি চলছেন আয়ের দিক থেকে। ২০০৬ সালে ভারতের আদালত তাকে বিপন্ন প্রজাতির হরিণ শিকারের দায়ে অভিযুক্ত করেন। ১৯৯৮ সালে শিকারের জন্য ভ্রমণে বের হয়ে তিনি এই বিপন্ন প্রজাতির হরিণ শিকার করেন, যা ভারতীয় আইনের লঙ্ঘন। শুধু এটাই নয়, ভারতীয় আদালত তাকে এর থেকেও গুরুতর অপরাধের জন্যও দ-িত করেছেন। ২০০২ সালে রাস্তার পাশে ফুটপাতে ঘুমিয়ে থাকা ঘরহীন মানুষের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ আসে সালমান খানের ওপর। ২০১৫ সালে নিম্ন আদালত এই অভিযোগে প্রমাণের ভিত্তিতে তাকে ৫ বছরের কারাবাসের শাস্তি দেন। বর্তমানে মুম্বাইয়ের উচ্চ আদালতে সালমান খানের আপিলের কারণে এই রায়টি স্থগিত রয়েছে। এমনভাবে মামলার জালে ফেঁসে থাকার কারণে তার ক্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও পুরো ভারতজুড়ে এই খানের রয়েছে প্রচুর ভক্ত। শুধু ভারত কেন, তার ভক্ত ছড়িয়ে আছে সারা পৃথিবীজুড়েই। সালমান খানের সিনেমা মুক্তি পেলেই তারা হুমড়ি খেয়ে পড়ে সিনেমা হলগুলোতে। ২০১৪ সালের কিক সিনেমা এবং টেলিভিশন রিয়েলিটি শো বিগ ব্রাদার তার আয়ের উৎস। বিগ ব্রাদার ২০১৪ সালের পর্বটি ৪.৮ মিলিয়ন দর্শক দেখেছে।

 

সালমান খান
অক্ষয় কুমার

তালিকার নবম নামটি ভারতীয় তারকা অক্ষয় কুমারের। তার বার্ষিক আয় ৩২.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা কিনা জর্জ ক্লুনি এবং ব্র্যাড পিটের যৌথ আয়ের সমান। বছরে গড়ে চারটি সিনেমা করে বলিউড এবং হলিউডের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত শিডিউল তার। অক্ষয় কুমার ২০১৪ সালে হলিডে এবং এন্টারটেইনমেন্টের মতো সিনেমাগুলোতে অভিনয় করে সবচেয়ে বেশি ভারতীয় মুদ্রা আয় করেছেন। এর সঙ্গে তার আয়ের খাতা লম্বা করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে ভারতীয় টেলিভিশনের রিয়েলিটি শো ডেয়ার টু ড্যান্স উপস্থাপনা করা।
২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার নিয়ে উইল স্মিথের সঙ্গে এবং ম্যাট ডেমন, হফ জেকম্যান বা রাসেল ক্রোদের থেকে এগিয়ে আছেন শাহরুখ খান। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক নেয়া তারকাদের এই তালিকায় ১৮ নম্বরে অবস্থান করছেন তিনি। সম্প্রতি তার আয়ের বড় উৎস হ্যাপি নিউ ইয়ার ও ফ্যান সিনেমার সঙ্গে সঙ্গে পান মাসালার বিজ্ঞাপন।

মার্ক ওয়ালবার্গ

রণবীর কাপুর ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় নিয়ে তালিকার ভারতীয়দের একদম শেষে অবস্থান করছেন। তার স্বদেশিদের থেকে তার আয় কম হলেও ক্রিস প্রাট, ক্রিস ইভানসদের থেকে তার আয় বেশি। তালিকায় অবস্থান ৩০-এ।
প্রশ্ন জাগতেই পারে, বলিউডের তারকারা কীভাবে এত পয়সা রোজগার করছেন। হলিউডের সিনেমা সারা পৃথিবীজুড়ে ব্যবসা করছে। সিনেমাগুলোতে আয় হচ্ছে ভারতীয় সিনেমা থেকে অনেক গুণ বেশি। কিন্তু এই হিসাবটি সিনেমা হলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ভারতীয় সিনেমা তাদের ব্যবসা পুষিয়ে নিতে পারছে স্যাটেলাইট চ্যানেলের কাছে সিনেমার প্রচার স্বত্ব বিক্রির মাধ্যমে। মার্কিন তারকারা যেখানে সিনেমার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে, সেখানে ভারতীয় তারকারা অর্থ পান সিনেমা হলে বিক্রীত টিকিটের থেকেও। একটি সিনেমা হলে চলতে থাকা অবস্থায় যা টিকিট বিক্রি হয় তার একটি অংশ পান চুক্তিতে থাকা অভিনেতাও।
সিনেমার পাশাপাশি তারা অনেক অর্থ আয় করছেন বিজ্ঞাপনচিত্র থেকে। একেকজন তারকা কয়েকটি পণ্যের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করে থাকেন। উদাহরণ হিসেবে দু-একটা বলা যেতেই পারে। যেমন শাহরুখ খান ট্যালকম পাউডার, মোবাইল, রং ফর্সাকারী ক্রিম ছাড়াও গাড়ির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে আছেন। অক্ষয় কুমার আছেন মোটরসাইকেল, গেঞ্জি, পাইপসহ আরো বেশ কিছু পণ্যের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে।

ফোর্বসের করা তালিকাটি দেখে নিন এক নজরে কার অবস্থান ঠিক কোথায় :
নাম     আয় (মিলিয়ন মার্কিন ডলার)
রবার্ট ডাওনি জুনিয়র    ৮০
জ্যাকি চ্যান    ৫০
ভিন ডিজেল    ৪৭
ব্রেডলি কুপার    ৪১.৫
অ্যাডাম স্যান্ডলার    ৪১
টম ক্রুজ    ৪০
অমিতাভ বচ্চন    ৩৩.৫
সালমান খান    ৩৩.৫
অক্ষয় কুমার    ৩২.৫
মার্ক ওয়ালবার্গ    ৩২
ডুয়েন জনসন    ৩১.৫
জনি ডেপ    ৩০
লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও    ২৯
চ্যানিং ট্যাটাম    ২৯
ক্রিস হ্যামসওয়ার্থ    ২৭
ড্যানিয়েল ক্রেগ    ২৭
ম্যাথিউ ম্যাক কগনি    ২৬.৫
শাহরুখ খান    ২৬
উইল স্মিথ    ২৬
ম্যাট ডেয়ম্যান    ২৫
হিউগ জ্যাকম্যান    ২৩
বেন এফ্লেক    ১৯.৫
লিয়াম নিসন    ১৯.৫
চো ইউন ফ্যাট    ১৮
রাসেল ক্রো    ১৮
সেথ রোগেন    ১৭
জর্জ ক্লুনি    ১৬.৫
ব্র্যাড পিট    ১৬
জোনা হিল    ১৬
উইল ফ্যারেল    ১৫
রণবীর কাপুর    ১৫
ক্রিস ইভানস    ১৩.৫
ক্রিস প্রাট    ১৩
এন্ডি লাও    ১৩

* ১ মিলিয়ন = ১০ লাখ

 

Comments

The Daily Star  | English

Rohingyas may go hungry after November: WFP

Food assistance for over 1.2 million Rohingyas in Bangladesh will end after November 30 unless urgent funds are secured, the World Food Programme has warned.

9h ago