পথরসনা

শূল্যমাংস

রাজা কিংবা শাহজাদা, শখের বশে তারা বের হতেন শিকারে। মাঝে মধ্যে দুই বা ততোধিক রাজ্যের রাজারা একত্র হয়েই যাত্রা করতেন এহেন পাষ- কীর্তিতে। তীর-বাণ, ইট-পাটকেল ছুড়ে যে ক’টি পশুর দফারফা করে দিতেন, সেগুলোর মাংস আগুনে ঝলসে নিয়ে, তার ওপর কিছুটা লবণ ও লেবু মালিশ করে উদরে চালান করতেন।

রাজা কিংবা শাহজাদা, শখের বশে তারা বের হতেন শিকারে। মাঝে মধ্যে দুই বা ততোধিক রাজ্যের রাজারা একত্র হয়েই যাত্রা করতেন এহেন পাষ- কীর্তিতে। তীর-বাণ, ইট-পাটকেল ছুড়ে যে ক’টি পশুর দফারফা করে দিতেন, সেগুলোর মাংস আগুনে ঝলসে নিয়ে, তার ওপর কিছুটা লবণ ও লেবু মালিশ করে উদরে চালান করতেন।

খেতে খেতেই সেরে নিতেন অভ্যন্তরীণ কূটনীতি। তখন তো আর জাতিসংঘ ছিল না। মোটামুটি এটিই হলো কাবাবের আনুমানিক ইতিহাস। বন-জঙ্গলের সেই রেসিপি এখন সভ্য সমাজে এসে ঠাঁই নিয়েছে বিচিত্র রঙে ও ঢঙে। তবে রুচিতন্ত্রে বহুল জনপ্রিয় হচ্ছে ‘শূল্যমাংস’ তথা শিক কাবাব। রসুইশাস্ত্র মতে, কাবাবের ঘটা বর্ণিত হয়েছে এভাবেÑ ‘ছেঁচা মাংসে দধি ও মসলা লেপন মারফত শিকে বিদ্ধ করিয়া মৃদু অগ্নির ক্ষীণ আঁচে সেঁকিতে হইবে’। কে শোনে কার কথা! বর্তমানে কাবাবে দই না মেশালে পাপ নেই বটে, তবে মসলা না মাখালে কাবাব কলঙ্কিত হয়। যাহোক, কলিযুগের এই অর্ধ-কলঙ্কিত কাবাব খেতে হলে আপনাকে রাজা-মহারাজা হতে হবে না, অস্ত্র সমেত রথে চড়ে বনেও যেতে হবে না। নিরস্ত্র অবস্থায় চলে যেতে পারেন মিরপুর ১১ নম্বরের বেনারসি পল্লীতে। জায়গার নাম ঢালের পার মিল্লাত ক্যাম্প। খোঁজ করুন গরীবুল্লাহ শাহ-এর কাবাব ঘর। এটি একটি মৌলিক শূল্যমাংসের বিক্রয়কেন্দ্র, অর্থাৎ এখানে শিক কাবাব ছাড়া আর কিছুই নেই। তবে ওই পদেরই রয়েছে মুখরোচক হরেক রকমÑ ক্ষিরি, বট ও তিল্লি। যদিও মসলা সহযোগে এই কাবাবের স্বাদ ছড়ায় জিহ্বা পর্যন্ত, ঘ্রাণ ছড়ায় দোকান সীমা পর্যন্ত, তবে খ্যাতি ছড়িয়ে গেছে গোটা ঢাকার এ-মাথা থেকে ও-মাথা পর্যন্ত। কাবাব ঝলসাতে ব্যবহৃত হয় কয়লা। সেকালের রাজাদের মতো লেবু মাখা না হলেও তেঁতুলের টক মিশিয়ে পরিবেশন করা হয় এ দোকানের কাবাব। এর পাশেই রয়েছে ‘কাল্লু মামার চাপ’ এবং ‘জুম্মনের চাপ’ নামক আরো দুটি কাবাব ঘর। এই তিনটি দোকানেই সন্ধ্যার পরপর নামে ক্রেতাদের ঢল। সুতরাং চাপ খেতে হলে একটু চাপাচাপি সহ্য করাই বাঞ্ছনীয়। এ রকমই ভিড় জমে মোহাম্মদপুরেও। শাহজাহান রোডের জেনেভা ক্যাম্পে। মুরসালিন, মোস্তাকিম, মুসলিম ও রহিম নাম নিয়ে বেশ কয়েকটি কাবাব ও চাপের দোকান রয়েছে একসারিতেই। মিরপুরের সঙ্গে মোহাম্মদপুরের কাবাবের পার্থক্য হচ্ছেÑ মোহাম্মদপুরের পদগুলো কয়লায় ঝলসানো নয় বরং তেলে ভাজা। স্বস্তির বিষয় হচ্ছেÑ মিরপুরের মতো এখানে কেবল গোটা কয়েক পদই নয়, মেন্যুকার্ড হাতে পেলে চিন্তায় পড়ে যাবেনÑ কাবাবেও এত বৈচিত্র্য থাকতে পারে! গরুর চাপ, মগজ ফ্রাই, বটি কাবাব, গুর্দা কাবাব, শামি কাবাব, টিকিয়া আরো কত কী! সহকারী পদ হিসেবে মিলবে লুচি আর স্বাদবর্ধক অনুঘটক হিসেবে সসে ডোবানো শসার স্যালাড। এসব খেতেই এত হুড়োহুড়ি। ঢাকাস্থ এই পথকাবাবগুলো জিভবান্ধব হলেও কতটা স্বাস্থ্যসম্মত, তা নিয়ে হামেশাই দু’দশ কথা কানাঘুষা হয়। প্রশ্ন যখন স্বাদের, স্বাস্থ্যের চিন্তা ক’জনইবা করে; তবে সেটা ভাবা উচিত বটে। তো আর কী, নিজে খেতে পারেন অথবা অভিমানী প্রেমিকার ‘নিস্তব্ধতা’ ভাঙাতে একদিন জোড়া বেঁধে নোঙর ফেলতে পারেন এসব পথরসনার আয়োজনে।
 শিবলী আহমেদ
ছবি : আনন্দধারা

Comments

The Daily Star  | English

Where lives get 're-rolled' into misery

Workers compelled to work in unsafe conditions with low wages

1h ago