২০১৬ সালে বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের সেরা পাঁচ উদ্ভাবন

হাবল টেলিস্কোপে দেখা এম৮৩ গ্যালাক্সির ছবি। বিজ্ঞানী রুবাব খান ও তাঁর দল এরকম কয়েকটি গ্যালাক্সি থেকে পাঁচটি ‘এটা টুইনস’ নক্ষত্র আবিষ্কার করেছেন। ছবি: ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি

এ বছর বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার দেশের জন্য সম্মান বয়ে এনেছে। এদের মধ্যে কয়েকজন আন্তর্জাতিক পুরস্কারও পেয়েছেন। বিশ্বব্যাপী জ্যোতির্বিজ্ঞান, ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, পদার্থবিজ্ঞান ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন এমন পাঁচ জনের কাজ সম্পর্কে এখানে দেওয়া হলো।

পাঁচটি বিশালাকার নক্ষত্র: রুবাব খান

এ বছর জ্যোতির্বিজ্ঞানে বাংলাদেশি বিজ্ঞানী রুবাব খান গুরুত্বপূর্ণ একটি আবিষ্কার করেছেন। রুবাব ও তাঁর দল যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারে গবেষণার সময় পাঁচটি বিশালাকার ‘এটা টুইনস’ নক্ষত্রের সন্ধান পান। হাবল স্পেস টেলিস্কোপ ও নাসার স্পিটজার স্পেস টেলিস্কোপের মাধ্যমে তাঁরা এই আবিষ্কার করেন।

ওহায়ো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কট অ্যাডামস ও ক্রিস্টোফার কোচানেক এবং ও জর্জ সনবর্নের সঙ্গে গোডার্ড-এ কাজ করার সময় রুবাব এক ধরনের অপটিক্যাল ও ইনফ্রারেড ফিঙ্গারপ্রিন্ট আবিষ্কার করেন যা সম্ভাব্য ‘এটা টুইনস’-এর সন্ধান পাওয়ার জন্য কার্যকর। নাসা জানিয়েছে, রুবাব ও তাঁর দল ২০১২ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে এটা টুইনস-এর খোঁজে সাতটি গ্যালাক্সি পর্যবেক্ষণ করেছেন।

রুবাবের গবেষণাপত্রটি ২০ ডিসেম্বর দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটারসে প্রকাশিত হয়েছে।

মহাকর্ষীয় তরঙ্গ: সেলিম শাহরিয়ার

যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশি বিজ্ঞানী সেলিম শাহরিয়ার মহাকর্ষীয় তরঙ্গ আবিষ্কার করেছেন। আলবার্ট আইনস্টাইন তাঁর সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বে এই তরঙ্গের ধারণা দিয়েছিলেন।

শাহরিয়ারের নেতৃত্বে নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের দল এক দশমিক তিন বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে দুটি কৃষ্ণগহ্বরের সংঘর্ষে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ উৎপন্ন হওয়ার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেন। (শূন্যস্থানে আলো এক বছরে যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে এক আলোকবর্ষ বলা হয় যা নয় দশমিক ৪৬ ট্রিলিয়ন কিলোমিটারের সমান।)

মহাকর্ষীয় তরঙ্গ ও মহাশূন্যের ঢেউ: দীপঙ্কর তালুকদার

বিজ্ঞানী দীপঙ্কর তালুকদার মহাকর্ষীয় তরঙ্গ আবিষ্কারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে বাংলাদেশের জন্য সম্মান বয়ে এনেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের এই সাবেক ছাত্র ও তাঁর দল যুক্তরাষ্ট্রে একজোড়া বিশালাকার লেজার ডিটেক্টর দিয়ে এই আবিষ্কার করেন। লেজার ডিটেক্টর দুটির একটি ছিলো লুইজিয়ানায় ও অপরটি ছিলো ওয়াশিংটনে। লেজার ইন্টারফেরোমিটার গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ অবজারভেটরিতে তাঁরা দুইটি কৃষ্ণগহ্বরের সংঘর্ষের ফলে সৃষ্ট মহাকর্ষীয় তরঙ্গ সনাক্ত করেন।

অতি ক্ষুদ্র ইলেক্ট্রনিক ও স্পিনট্রনিক যন্ত্র: সাঈফ সালাহউদ্দিন

স্বল্প শক্তি চালিত লজিক ও মেমোরি অ্যাপ্লিকেশনের জন্য উপযোগী অতি ক্ষুদ্র ইলেক্ট্রনিক ও স্পিনট্রনিক যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী সাঈফ সালাহউদ্দিন। ইলেকট্রনের বৈশিষ্ট্যকে কাজে লাগিয়ে এই যন্ত্রটি তথ্য প্রেরণ, প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণের কাজ করতে পারে। প্রচলিত ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রগুলো ডেটা এনকোডিংয়ের জন্য ইলেক্ট্রিক্যাল চার্জ ব্যবহার করে। স্পিনট্রনিক যন্ত্র চার্জের বদলে ইলেকট্রনের আরেকটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য ‘স্পিন’ ব্যবহার করে।

ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলের ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কম্পিউটার সায়েন্স এর অধ্যাপক সালাহউদ্দিন গত ফেব্রুয়ারিতে ‘প্রেসিডেন্সিয়াল আর্লি ক্যারিয়ার অ্যাওয়ার্ডস ফর সায়েন্টিস্টস অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারস’ পুরস্কার পেয়েছেন।

সাঈফ সালহউদ্দিন বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে ২০০৩ সালে বিএসসি ডিগ্রি গ্রহণ করেন। ২০০৭ সালে তিনি পুর্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল ও কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পিএইচডি অর্জন করেন। ২০০৮ সাল থেকে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলেতে ইলেক্ট্রিক্যাল ও কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে শিক্ষকতা করছেন সাঈফ সালহউদ্দিন।

শৈবাল থেকে জৈব জ্বালানি: ড. তামজিদুল হক

শৈবাল থেকে জৈব জ্বালানি তৈরির তাত্ত্বিক বিষয় উদ্ভাবনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের কম্পিউটার বিজ্ঞানী ড. তামজিদুল হক পুরস্কৃত হয়েছেন। কম্পিউটার সায়েন্সের সহকারী অধ্যাপক তামজিদুলের মতে, যে কোন উদ্ভিদের তুলনায় শৈবাল থেকে অধিক মাত্রায় জৈব জ্বালানি বানানো সম্ভব। এছাড়াও শৈবাল সৌর শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বায়ুমণ্ডলের কার্বন-ডাইঅক্সাইড কমায়। তাঁর উদ্ভাবন জৈব জ্বালানি ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।

জেনেটিক মিউটিলেশন ও পার্কিনসন্স রোগ: ড মিরাতুল মোহামিদ খান মুকিত

পার্কিনসন্স রোগ নিয়ে গবেষণার জন্য ইউরোপিয়ান মলিকুলার বায়োলজি অর্গানাইজেশন থেকে পুরস্কার পেয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ড. মিরাতুল মোহামিদ খান মুকিত।

লন্ডনভিত্তিক একটি গবেষক দল ২০০৪ সালে আবিষ্কার করে যে পিআইএনকে১ নামের একটি জিনে মিউটেশন পার্কিনসন্স রোগ সৃষ্টি করে। গবেষক দলটির একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন মুকিত। এই আবিষ্কারের চার বছর পর তিনি খুঁজতে শুরু করেন কিভাবে এই জিনের গোলমাল পার্কিনসন্স তৈরি করে। স্কটল্যান্ডের ডান্ডি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিজ্ঞানীর গবেষণা পার্কিনসন্স রোগের জন্য দায়ী জেনেটিক্যাল মিউটেশনকে আরও ভালোভাবে বুঝতে সহায়তা করবে।

মুকিত ১৯৯৭ সালে ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গ থেকে এমবিসিএইচবি সম্পন্ন করেন। হার্ভার্ড থেকে এমডি ও ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে পিএইচডি করেন তিনি।

স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে ১৯৭৩ সালের ১২ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন মুকিত। তাঁর বাবা আব্দুল মুকিত পেশায় একজন ডাক্তার ও মা মমতাজ বেগম একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ।

Comments

The Daily Star  | English
International Crimes Tribunal 2 formed

Govt issues gazette notification allowing ICT to try political parties

The new provisions, published in the Bangladesh Gazette, introduce key definitions and enforcement measures that could reshape judicial proceedings under the tribunals

10m ago