সিরিয়ায় ছেলে হারানো এক বেলজিয়ান মায়ের আর্তি
সিরিয়ায় ছেলেকে হারানো এক বেলজিয়ান মা বলেছেন, সন্ত্রাসবাদ দমনের জন্য প্রথমেই উচিত পরিবারের দিকে নজর দেওয়া, বিশেষ করে মায়েদের দিকে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন।
বেলজিয়ান নাগরিক সালিহা বিন আলি আজ ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেন।
সালিহার ১৯ বছর বয়সী ছেলে সাব্রি সিরিয়ায় ইসলামী উগ্রপন্থিদের পক্ষে লড়াই করতে গিয়ে ২০১৩ সালে মারা যায়।
তিনি বলেন, “পরিবার এবং মায়েদের ওপর নজর রাখুন। কেননা, মায়েদের সঙ্গে সন্তানদের যোগাযোগটা বেশি থাকে। মায়েরাই পারেন সন্তানদের উগ্রপন্থা থেকে রক্ষা করতে।”
সালিহার মতে, সন্তানরা সবার আগে মায়েদের কাছ থেকেই সত্যটা শিখতে পারে। তাই মায়েদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের উদ্বেগের কারণগুলো জেনে নেওয়া যেতে পারে।
এই বেলজিয়ান মা জানান, সাব্রি বেলজিয়াম থেকে নিখোঁজ হয়ে যান। তিন মাস পর তিনি জানতে পারেন যে তাঁর ছেলে সিরিয়ায় এক সংঘর্ষে মারা গেছে। ইসলামী উগ্রপন্থিরা সাব্রির মতো শত শত তরুণকে বেলজিয়াম থেকে সংগ্রহ করেছিল সিরিয়াতে যুদ্ধ করার জন্য।
নেদারল্যান্ডস-ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর কাউন্টার টেরোরিজমের বরাত দিয়ে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট গত ৮ মে জানায়, সিরিয়ায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর গত ছয় বছরে প্রায় ৫০০ বেলজিয়ান সে দেশে গিয়েছে।
“সাব্রি নিজেকে অপদার্থ ভাবতো। সে জীবনের অর্থ খোঁজার চেষ্টা করতো। আমার মনে হয়, এটা খুঁজতেই সে অন্যান্য বেলজিয়ানদের সঙ্গে সিরিয়ায় যুদ্ধ করতে গিয়েছিল।”
সন্তান হারানোর পর থেকে সালিহা একটি গ্রুপ তৈরি করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, এই সমস্যা দূর করার জন্য রাজনীতিবিদদের সংশ্লিষ্টতা প্রয়োজন। “রাজনীতিবিদরা আগে সমস্যাটি নিয়ে কোন কথা বলেননি। এখন তাঁরা বিষয়টি নিয়ে ভিন্নভাবে ভাবছেন। কেননা, সরকার জানতে পেরেছেন যে আরও অনেক বেলজিয়ান সিরিয়ায় যুদ্ধ করার জন্য দেশ ছেড়েছে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে দ্য অ্যামেরিকান সেন্টারের সহায়তায় এবং ইনোভেশন ফর ওয়েলবিইং ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘ক্যাম্পেইন টু কাউন্টার ভায়োলেন্ট এক্সট্রিমিজম: লার্নিং ফ্রম দ্য সোসাইটি অ্যাগেনস্ট ভায়োলেন্ট এক্সট্রিমিজম (সেভ)’ শিরোনামের একটি অনুষ্ঠানে বেলজিয়ান নাগরিক সালিহা বিন আলি বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশ নেন।
সালিহার ভাষায়, “যদি মায়েদেরকে শিক্ষা, গণমাধ্যম এবং ইন্টারনেট সম্পর্কে বেশি বেশি করে তথ্য দেওয়া হয়, তাহলে তাঁরা নিজেরাই তাঁদের সন্তানদের সুন্দর জীবনের জন্য আরও বেশি সহযোগিতা করতে পারবেন।”
ইসলাম নয়, উগ্রপন্থাই দায়ী
সালিহার মতে, তিনি প্রথম ইউরোপীয় মুসলমানদের একজন যিনি উগ্রপন্থা সম্পর্কে পারিবারিক সচেতনতা তৈরিতে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হয়েছেন।
তাঁর বিশ্বাস ইসলাম নয় বরং উগ্রপন্থাই সন্ত্রাসের জন্য দায়ী।
“এই সন্ত্রাসবাদ দূর করার জন্য আপনারা হয়তো বিভিন্ন বিকল্প পথের প্রস্তাব দিবেন। কিন্তু মনে রাখবেন এ বিষয়ে পরিবারের সমর্থনের প্রয়োজনীয়তার কথা ভুলে গেলে চলবে না।”
তিনি বলেন, চরমপন্থা এবং সন্ত্রাসবাদ দমনের জন্য পরিবারগুলোকে শিশুদের লালন-পালন বিষয়ে শিক্ষা ও সমর্থন দেওয়া যেতে পারে।
সন্ত্রাসবাদের কারণে সন্তান হারানোর বেদনা প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমরা যারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার তাঁদেরকে কথা বলতে দেওয়া হতো না। বরং তাঁদেরকে দরজা-জানালা বন্ধ করে চুপচাপ ঘরে থাকতে বলা হয়।”
“আমার জীবনের এই দুঃখজনক ঘটনাটিকে আমি একটি ইতিবাচক ঘটনায় রূপান্তরিত করতে চাই। নিজের কথাগুলো প্রকাশ করার মধ্য দিয়ে আমি অন্যদের সহযোগিতা করতে চাই।”
মায়েদের স্কুল
সকল ধরনের সন্ত্রাস ও উগ্রপন্থা দূর করার লক্ষ্য নিয়ে ব্রাসেলস-ভিত্তিক একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান সেভ বেলজিয়াম বিভিন্ন প্রকারের কর্মশালা আয়োজন করে থাকে। এসব কর্মশালাতে মায়েদের শেখানো হয় কিভাবে তাঁরা সন্তানদের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্কটা সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারেন।
এছাড়াও, অস্ট্রিয়া-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ওমেন উইদাউট বর্ডার প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলগুলো বেলজিয়াম এবং ইন্দোনেশিয়াসহ ৩৫টি দেশে কাজ করছে। স্কুলগুলো মা-বাবাদের সহযোগিতায় সন্তানদের চরমপন্থা থেকে দূরে রাখতে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে থাকে।
Click here to read the English version of this news
Comments