আলোয় সাজুক ঘর

বর্তমান সময়ে অন্দরমহলের সাজসজ্জা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মানুষের বসবাসের জায়গা অথবা কর্মক্ষেত্রে অন্য নতুনত্ব আনতে এই গৃহশৈলী আরো জনপ্রিয় করে তুলেছে। যে ঘরে আপনার নিত্য বসবাস, সেটি আকর্ষণীয় হওয়া চাই। এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে আলোকসজ্জা।

ঘর সাজাতে লাইটিংয়ের জুড়ি নেই। শুধু ব্যবহার করার জন্যই নয়; বরং এটি হয়ে উঠতে পারে আপনার ঘর সাজানোর অন্যতম অনুষঙ্গ। যে কারণে ঘরে লাইটের ব্যবহার এতটা নান্দনিক। বর্তমান সময়ে খুব বেশি জাঁকজমকপূর্ণ নয় বরং খুবই সাদামাটা ডিজাইনের লাইট ব্যবহার হচ্ছে। প্রকৃতির আলোর উপযুক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের ঘরকে নান্দনিক ও সুন্দর করে তুলতে পারি। ইন্টেরিয়র ডিজাইনার রেজওয়ানুল হক বলেন, আমরা প্রকৃতির উৎস থেকে পাওয়া আলোর যথাযথ ব্যবহার করে বিদ্যুতের চাপ কমাতে পারি, যার দায়িত্ব নিতে হবে ইন্টেরিয়র ডিজাইনারদের। তিনি বলেন, আমরা কোনো ঘরের ডিজাইন করার সময় প্রাকৃতিক আলোর ব্যবহার করার কথা মাথায় রেখে গ্লাসের ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা করতে পারি, যা ঘরের সৌন্দর্যে আলাদা মাত্রা দেবে, দেখতেও সুন্দর লাগবে। বর্তমান সময়ে ঘর সাজাতে বেশি ব্যবহার হচ্ছে কৃত্রিম লাইট। এই লাইট ব্যবহার করে আপনার ঘরে মাত্রা যোগ করতে পারেন। এক্ষেত্রে ঘর তৈরি করার সময় লাইটের সুইচ ও তার কোথায় বসানো হবে তা আগে থেকেই ভেবে নিন, যাতে লাইটের সুইচগুলো চোখে না পড়ে। কারণ তা সরাসরি থাকলে ঘরের সৌন্দর্য অনেকাংশে নষ্ট হয়ে যায়। তাই অন্দরসাজে লাইটকে এমনভাবে ব্যবহার করুন, যাতে লাইট ও এর আনুষঙ্গিক বিষয়গুলোর উৎস চোখে না পড়ে, যা আপনার চোখের জন্য আরামদায়ক।

কিছু দরকারি পরামর্শ

 বসার ঘর হলেই হবে না, ঝাড়বাতির জন্য চাই বড় আয়তনের বসার ঘর। ছোট ঘরে বেমানান লাগে ঝাড়বাতি। মাঝারি ধরনের বসার ঘরের জন্য সিলিং  লাগোয়া ছোট আকারের ঝাড়বাতি বেছে নিতে পারেন। বিভিন্ন ফুলের নকশা বা চার কোনাকৃতির ঝাড়বাতি মাঝারি ধরনের বসার ঘরে ভালো মানায়। বড় বসার ঘরের ঝাড়বাতি নির্বাচনে ডিজাইন ও নকশায় পূর্ণ স্বাধীনতা পাবেন। ডুপ্লেক্স বাড়ি হলে দোতলায় ওঠার পেঁচানো সিঁড়ি বরাবর ঝাড়বাতি লাগালে ভালো দেখাবে। মডার্ন সাজের সঙ্গে লাগাতে পারেন ক্রিস্টালের ঝলমলে ঝাড়বাতি।

ঝাড়বাতি ছাড়াও ঘরের সৌন্দর্য বাড়াতে এখন নানারকম ফ্যাশনেবল বাতি পাবেন। প্যাসেজ থেকে শোবার ঘর এমনকি শিশুর ঘরের জন্যও পাবেন বিভিন্ন রকমের মানানসই বাতি। ঘরের ইন্টেরিয়র পরিকল্পনার শুরুতেই লাইটিং প্ল্যান করে নিন। অন্দরসজ্জায় সাধারণত তিন ধরনের বাতির ব্যবহার হয়। জেনারেল, টাস্ক এবং একসেন্ট লাইটিং। এ তিন ধরনের লাইটিংয়ের পরিকল্পনামাফিক ব্যবহার সব ঘরেই জমকালো আমেজ দিতে যথেষ্ট। আলোর সাধারণ ব্যবহারের জন্য জরুরি জেনারেল লাইটিং। ঘরের প্রতিটি অংশে পর্যাপ্ত আলো পৌঁছে দিতে ব্যবহৃত হয় এটি। সিলিং লাইট, টেবিল এবং ফ্লোর ল্যাম্প, আপ অ্যান্ড ডাউন ওয়াল লাইট ইত্যাদি জেনারেল লাইটিংয়ের মধ্যে পড়ে। টাস্ক লাইটিংয়ের কাজ হচ্ছে জরুরি কাজের জায়গাগুলো আলোকিত করা। শোবার ঘরের স্টাডি টেবিলই হোক বা রান্নাঘরের কাউন্টারটপ। ট্র্যাক লাইটিং, বিভিন্ন ধরনের পেনডেন্ট ল্যাম্প, আন্ডার কেবিনেট লাইট স্ট্রিপ ব্যবহৃত হয় ঘরের টাস্ক লাইটিংয়ের জন্য। একসেন্ট লাইটিং ব্যবহৃত হয় ঘরের কোণ কিংবা একটি নির্দিষ্ট জিনিসকে হাইলাইট করার জন্য। দেয়ালের পেইন্টিং, স্কাল্পচার, গাছ অথবা কোনো বিশেষ শোপিস। হ্যালোজেনসহ বিভিন্ন ধরনের স্পটলাইট ব্যবহার হয় একসেন্ট লাইটিংয়ে।

বসার ঘরে লাগাতে পারেন রকমারি ওয়াল ব্রাকেট। স্টিল, পিতল ইত্যাদি ফ্রেমের ওপর একটি বা দুটি আলোর সেট। ঝাড়বাতির সঙ্গে ম্যাচিং করে ওয়াল ব্রাকেট পাওয়া যায়। ব্রাকেট ব্যবহার করতে চাইলে বসার ঘরের জানালার ওপর সেট করুন। বড় বসার ঘরে অথবা ফলস সিলিং বসানো থাকলে সোফার এক পাশে রাখতে পারেন গাছের আদলের স্ট্যান্ডিং লাইট। অ্যালুমিনিয়াম স্ট্যান্ডে ক্রিস্টাল আর কাচের তৈরি এই লাইট বেশ জমকালো ভাব আনবে ঘরে।

খাবার টেবিলের ওপর পছন্দসই শেডযুক্ত পেনডেন্ট লাইটের ব্যবস্থা রাখুন। ঘর বড় হলে ওয়াল লাইট ব্যবহার করতে পারেন। বিশেষ কিছু হাইলাইট করতে ব্যবহার করতে পারেন স্পটলাইটও। আবার খাবার টেবিল বরাবর সিলিং থেকে ছোট-বড় কয়েকটি হ্যাংগিং লাইটও ঘরে আনবে ভিন্ন মাত্রা। 

শোবার ঘরে ওয়াল লাইটের সঙ্গে ঘরের এক কোণে পেনডেন্ট লাইটও লাগিয়ে নিন। বিছানার পাশে ওয়াল ব্রাকেট লাগালে বই পড়ার কাজে লাগবে। শোবার ঘরে ডিমার লাইটিংয়ের ব্যবস্থা রাখুন। আবার ড্রেসিং টেবিলের ওপর লাগানোর জন্য স্পটলাইটই উপযুক্ত।

ঘরের প্যাসেজ বা প্রবেশপথে দরকার পর্যাপ্ত আলো। সিলিং লাইট কিংবা আপ অ্যান্ড ডাউন লাইটের ব্যবহার এখানে বেশি মানানসই। আর দেয়ালে কোনো পেইন্টিং, আয়না বা শিল্পকর্ম থাকলে তার ওপর ব্যবহার করুন স্পটলাইটের মতো একসেন্ট লাইটিং।

ছোটদের ঘরেও ব্যবহার করুন বিভিন্ন ডেকোরেটিভ লাইট। যেমন- খেলার ঘর সাজাতে পারেন রিকশা, সাইকেল, জিপ, ফুটবল ইত্যাদির আদলে তৈরি সিলিং হ্যাংগিং দিয়ে। অথবা লাগানো যেতে পারে বাস্কেটবল, ব্যাডমিন্টন বা মিকি মাউসের আদলে তৈরি ওয়াল ব্রাকেটও। পড়ার টেবিলে রাখার জন্য মজার কবিতা লেখা ল্যাম্পশেড পাবেন।

কোথায় পাবেন

ঢাকার উত্তরার লাইটিং সিটি, লাইটিং সেন্টার ও গুলশানের লাইটিং ওয়ার্ল্ড এসব লাইট বিক্রি করে থাকে। এ ছাড়া পুরান ঢাকার নবাবপুর, ধানমন্ডি, পল্টন, বিজয়নগর ও নিউ মার্কেটের বিভিন্ন দোকানেও এসব লাইট পওয়া যায়।

দরদাম

লাইটিং সিটির কর্মচারী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিভিন্ন ডিজাইনের লাইটের ওপর ভিত্তি করে এর দাম নির্ধারণ করা হয়। যেমন বিভিন্ন ধরনের ওয়াল লাইট, ওয়াল বেকেট, টিউব শেড, স্টাডি লাইট, টেবিল ল্যাম্প ইত্যাদির দাম ৮০০ থেকে শুরু করে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত হয়। আবার প্রেনেন্ড লাইট, স্যান্ডেলিয়ার লাইটগুলো ১০ হাজার থেকে শুরু করে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত পাওয়া যায়।

Comments

The Daily Star  | English
rooppur-nuclear-power-plant

Power division gets 30% lower budget allocation

The allocation for the power division in the national budget for fiscal year 2025-26 is around 30 percent less than that of the previous fiscal year, while it has been nearly doubled for the energy and mineral resources division. .The government has decided to cut electricity production c

2h ago