অবশেষে সিনেমাই বানালেন হিমেল আশরাফ

sultana-bibiana
‘সুলতানা বিবিয়ানা’ চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

চলচ্চিত্র: সুলতানা বিবিয়ানা

পরিচালক: হিমেল আশরাফ

অভিনয়: বাপ্পী, আঁচল, শহীদুজ্জামান সেলিম, মামুনুর রশীদ, অমিত হাসান

প্রযোজনা: ভার্সেটাইল মিডিয়া

ছবির দৈর্ঘ্য: ২ ঘণ্টা ২ মিনিট

দুর্বলতা: পোশাক

মুক্তি তারিখ: ৩১ মার্চ

 

কাহিনী: অন্য গ্রাম থেকে ফুলের চাষ শিখতে এসে সেই গ্রামের মেয়ে সোনালির (আঁচল) প্রেমে জড়িয়ে পড়েন সুলতান (বাপ্পী)। এক সময় বিয়ে ঠিক হয় আঁচলের। ইতোমধ্যে দুজনার প্রেমের বিষয়টিও জানাজানি হয়ে যায়। সোনালির বাবা মামুনুর রশীদ ভিনদেশী কোন মানুষের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিতে রাজি নন। তাঁরা দুজন-দুজনকে অনেক ভালোবাসে। এরইমধ্যে খুন হোন মামুনুর রশীদ। দায় এসে পড়ে সুলতানের ওপর। পুলিশের ভয়ে ফেরারির জীবন বেছে নিতে হয় তাঁকে। দুজন দুদিকে পুড়তে থাকেন ভালোবাসার যন্ত্রণায়। কী হবে এরপর?

বাকিটা পর্দায় দেখে নিতে হবে। কেননা, ‘সুলতানা বিবিয়ানা’ মুক্তির আজ কয়েকদিন মাত্র। এ ছবির গল্পটি একেবারে মৌলিক। আমাদের গল্পে আমাদের সিনেমা। তামিল কিংবা হিন্দি চলচ্চিত্র থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বানানো হয়নি এটি।

এমন একটি মৌলিক গল্পের জন্য প্রথমেই ধন্যবাদ পেতে পারেন প্রয়াত নাট্যকার ফারুক হোসেন। তিনি এই ছবির গল্প আর সংলাপ লিখেছেন। গল্পের পরতে পরতে ছিড়িয়েছেন মুগ্ধতা। সংলাপে রয়েছে দারুণ মুন্সিয়ানা। কিছু সংলাপের উচ্ছাসে ভেসেছেন হলভর্তি দর্শক। তাঁদের মুহুর্মহু করতালি তারই প্রমাণ ছিল।

গল্প, সংলাপ, চিত্রনাট্য ভালো হলে একটা সিনেমা এগিয়ে যায়। ‘সুলতানা বিবিয়ানা’ এর প্রমাণ। হিমেল আশরাফ অনেকগুলো জনপ্রিয় নাটক বানিয়েছেন। অনেকের ধারণা ছিলো সিনেমার ফ্রেমে তিনি নাটক খুঁজবেন। সব ধারণা ভেঙে দিয়ে পরিপূর্ণ সিনেমা বানিয়েছেন তিনি। নাটকের ‘ন’-ও খুঁজে পাওয়া যায়নি তাঁর চলচ্চিত্রে। অবশেষে, সিনেমা বানিয়ে ফেললেন হিমেল আশরাফ। স্বাগত নতুন দিনের পরিচালককে। দর্শক তাঁর নতুন সিনেমার অপেক্ষায় থাকবে।

অন্যান্য সিনেমায় বাপ্পী যেমন অভিনয় করেন, এই সিনেমাটিতে তাঁর ছিটেফোঁটাও ছিল না। নতুন এক বাপ্পীকে আবিষ্কার করবেন দর্শকরা। অভিনয়ের সব ভালোটুকু বের করে আনার চেষ্টা করেছেন পরিচালক। দর্শকদের মনের মধ্যে অনেকদিন গেঁথে থাকবেন ‘সুলতান’।

তাঁর অভিনয়ের কিছু দুর্বলতা গল্পের কারণে চাপা পড়ে গেছে। বাপ্পীকে অভিনয় আর সংলাপ বলতে আরেকটু মনোযোগী হওয়ার প্রয়োজন ছিল। আর একটি কথা, গ্রামের কোন শিক্ষিত ছেলে কি এতো চকচকে জিনস-শার্ট পরে ফুল চাষ করেন? তা কিন্তু মনে হয় না।

আঁচল কেন সিনেমায় নিয়মিত না – প্রশ্নটা আঁচলের কাছে রাখলাম। অভিনয়-নাচ সবকিছুতেই দক্ষতা রয়েছে তাঁর। দর্শকরা কিন্তু দেখতে চায় তাঁকে।

শহীদুজ্জামান সেলিম একজন শক্তিমান অভিনেতা। এর প্রমাণ বহুবার মিলেছে। চরিত্র হয়ে উঠতে কোন জুড়ি নেই তাঁর। এই সিনেমাতেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে এক মহিলার স্নানের দৃশ্য দেখার ভঙ্গি ও আঁচলের ঘরে গিয়ে তাঁকে পাওয়ার বাসনার দৃশ্যটিও অতুলনীয়। তাঁর পক্ষেই সম্ভব এমন সুন্দর চরিত্র হয়ে ওঠা।

বাবার চরিত্রে মামুনুর রশীদকে বড় বেশি ‘রোবটিক’ মনে হয়েছে। নিজেকে ‘মুক্ত’ করে অভিনয় করেননি তিনি। অথচ অভিনয় করার সব রকমের যোগ্যতা তাঁর রয়েছে। অমিত হাসান শুরুটা যত ভালো করেছিলেন, শেষে এসে তার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেননি।

এছাড়াও, সিনেমার প্রতিটি গানই সুন্দর এবং শ্রুতিমধুর। তবে হাবিব ওয়াহিদ ও ন্যানসির গাওয়া ‘তুমি আমার’ গানটায় দর্শক-শ্রোতারা বেশি মুগ্ধ হয়েছেন। একটা দোলা ছিল গানটিতে।

লোকেশন নির্বাচন চোখ জুড়িয়েছে। এমন অপরূপ সুন্দর ফুল চাষের গ্রাম, নদী, প্রাকৃতিক দৃশ্য অনেকদিন দেখা যায়নি সিনেমার ফ্রেমে। চিত্রায়ণ সুন্দর হয়েছে; চোখে যন্ত্রণা দেয়নি।

ভুল কিছুটা ছিল ‘সুলতানা বিনিয়ানা’ সিনেমায়। সেই ভুলগুলো বড় করে না দেখে বাংলা সিনেমার উত্তরণের স্বার্থে এড়িয়ে যাওয়াটাই উত্তম। আরো বেশি বেশি এমন দেশি গল্পের সিনেমা তৈরি হোক।

অবশেষে, বড় একটা ধন্যবাদ ছবির প্রযোজক আরশাদ আদনানকে – এমন দেশি ও মৌলিক গল্পের ঝুঁকি নেয়ার জন্য। তাঁর এই ধারা অব্যাহত থাকুক। ‘সুলতানা বিবিয়ানা’ সিনেমাটি নতুন প্রজন্মের দর্শক, বিশেষ করে, মহিলা দর্শকরা বেশি দেখছেন যা সিনেমাটির জন্য শুভকথা।

Comments

The Daily Star  | English
Yunus concern over situation before election

Attempts being made to foil election by creating volatile condition: Yunus

He made the remark during a meeting with seven parties and one platform

1h ago