চোখের জলে স্বজন হারানোর শোক

গতকাল পুলিশ সদর দপ্তরে কোলে বসে মায়ের কান্না দেখছে ১৫ মাসের ফারাবি। তার বাবা জালালাবাদ থানার পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম গত মাসে সিলেটের জঙ্গিবিরোধী অভিযানের সময় নিহত হন। ছবি: পলাশ খান

পুলিশ সদর দপ্তরের সম্মেলন কক্ষের ভেতর তখন পিনপতন নীরবতা। গত মাসে সিলেটে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের সময় নিহত দুই পুলিশ পরিদর্শকের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এক মিনিট নীরবতা পালনের জন্য সবাই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ান। সেই নীরবতা ভেঙেছে স্বজন হারানো পরিবারের সদস্যদের কান্না আওয়াজে। বহু চেষ্টার পরও চোখের পানি সামলে রাখতে পারেননি তাঁরা। তাঁদের শোকে আর্দ্র হয়েছে সেখানে উপস্থিত আর সবার চোখ।

গত ২৫ মার্চ সিলেটের কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ আবু কায়সার ও জালালাবাদ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম জঙ্গি আস্তানা আতিয়া মহলের বাইরে জোড়া বিস্ফোরণে মারাত্মকভাবে আহত হন। ঘণ্টাখানেক পর হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তাঁরা।

মনিরুলের স্ত্রী পারভিন আক্তার গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, স্বামীই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি। তাঁর হঠাৎ মৃত্যু পুরো পরিবারকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে।

“আমি জানি না এখন কী করবো। মাত্র ১৫ মাস বয়সের এক ছেলেকে বড় করতে হবে আমাকে। বড় হয়ে সে যেন পুলিশে যোগ দিয়ে দেশের সেবা করতে পারে সেভাবেই আমি আমার ছেলেকে মানুষ করার চেষ্টা করবো।”

সন্তান ও পরিবারের দেখাশোনার জন্য সরকারের কাছে চাকরি চেয়েছেন তিনি।

কায়সারের স্ত্রী সায়রা ফারহানা চৌধুরী আবেগতাড়িত কণ্ঠে বলেন, “কী বলবো… বলার মত আর কিছু বাকি নেই। এরকম যেন আর কারও সাথে না হয় শুধু সেটাই চাই।”

“বিস্ফোরণের কিছুক্ষণ আগেই আমাকে ফোন করে বলেছিলেন তাঁর জন্য দোয়া করতে। কল্পনাও করতে পারিনি সেটাই আমাদের শেষ কথা হবে।”

সায়রা জানান, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে দেশের বাইরে গিয়ে কায়সারকে অনেক কঠিন সময় পার করতে হয়েছিল। কিন্তু সেদিনই যে তাঁর জীবনের শেষ দিন হবে তা ভাবতে পারেননি।

তাঁর বিশ্বাস সমাজের সর্বস্তরের মানুষ জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে যেন ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়।

কায়সারের বাড়ি সুনামগঞ্জে। উপ-পরিদর্শক হিসেবে ১৯৯১ সালে পুলিশে যোগ দেন তিনি। আর মনিরুলের বাড়ি নোয়াখালী। একই পদে ২০০৪ সালে চাকরি শুরু করেন তিনি।

সিলেটের দক্ষিণ সুরমার আতিয়া মহলে জঙ্গি দমন অভিযান চলার সময় বাড়িটির বাইরে জোড়া বিস্ফোরণে সাত জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে এই দুই পুলিশ কর্মকর্তা ও র‍্যাবের গোয়েন্দা প্রধান লেফটেনেন্ট কর্নেল আবুল কালাম আজাদ রয়েছেন।

গতকাল পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহিদুল হক নিহত পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রত্যেক পরিবারের কাছে ২৪ লাখ টাকা তুলে দেন।

এর মধ্যে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) সায়রাকে নগদ চার লাখ টকা ও ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দিয়েছে। আর মনিরুলের স্ত্রী পারভিনকে নগদ দুই লাখ টাকা ও ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দেওয়া হয়েছে। মনিরুলের মা পেয়েছেন ১২ লাখ টাকা।

এছাড়াও সিলেট, মৌলভীবাজার ও চট্টগ্রামে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের সময় আহত হওয়া সাত জন পুলিশকে ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

আর সপ্তাহখানেক আগে নিহত র‍্যাব কর্মকর্তা লেফটেনেন্ট কর্নেল আবুল কালাম আজাদের পরিবারকে দেওয়া হয় ১০ লাখ টাকা।

গতকালের অনুষ্ঠানে আইজিপি শহীদুল বলেন, অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করছে পুলিশ। অভিযান নিয়ে কিছু রাজনৈতিক নেতার বক্তব্যকে “দায়িত্বজ্ঞানহীন” বলেও তিনি মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক জঙ্গি দমন অভিযানের ব্যাপারে কিছু রাজনৈতিক নেতার দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য আমাদের নজরে এসেছে। জঙ্গিবাদ দমনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রচেষ্টাকে খাটো করার চেষ্টা করছেন তাঁরা।”

দেশের সবাই যখন জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ঠিক সেসময় এ ধরনের “দায়িত্বহীন”, “বানোয়াট” ও “মিথ্যা” মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান তিনি। এ ধরনের কথা জঙ্গিদের উৎসাহ যোগায় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

অনুষ্ঠানে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোখলেসুর রহমান, ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়াঁ, কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট প্রধান মনিরুল ইসলাম ও এসএমপি কমিশনার গোলাম কিবরিয়া উপস্থিত ছিলেন।

Click here to read the English version of this news

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

42m ago