ব্রিটেনে দ্বিতীয় লৌহ মানবীর উত্থান হচ্ছে?

ব্রিটিশদের রাজনৈতিক ইতিহাসে ২০১৭ সালের ৮ জুনের বৃহস্পতিবার অন্য যে কোনো দিন বা বৃহস্পতিবারের থেকে স্বতন্ত্র এবং তাৎপর্যপূর্ণ। যুক্তরাজ্যের নাগরিকরা ঘুম ভেঙেই যে বৃহস্পতিবার দিনটার মুখোমুখি হয়েছেন সেটা তাদের ইতিহাসে একটা মাইল ফলক হয়ে থাকবে। ব্রিটিশ সময় সকাল সাতটা, বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা নাগাদ ব্রিটিশ নাগরিকদের জন্য ভোট কেন্দ্রের দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে। তারা সিদ্ধান্ত দিবেন কে হবেন তাদের নতুন প্রধানমন্ত্রী-- থেরেসা মে নাকি জেরেমি করবিন? কার বৃহস্পতি তুঙ্গে? নানা কারণে এই নির্বাচন অতিরিক্ত গুরুত্ব পেয়েছে।

এক বছর আগে ডেভিড ক্যামেরন যদি রাজনৈতিক জুয়া না খেলতেন, তাহলে যুক্তরাজ্যে আজকের নির্বাচন হয়তো হতো না। ২০১৬ সালের জুনে অনুষ্ঠিত গণভোটে তখনকার প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরনের ভাগ্য বিপর্যয় ঘটে। তিনি চেয়েছিলেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে থাকা না থাকা নিয়ে গণভোটে জয়ী হয়ে নিজের ক্ষমতার ভীতকে আরো মজবুত করতে। আগের বছরের সাফল্যে তিনি উৎসাহী হয়েছিলেন। ২০১৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে দলকে বিজয়ী করে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি। ওই নির্বাচনে তার অর্জন মন্দ ছিল না। ২০১০ সালের নির্বাচনে তার দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় কোয়ালিশন সরকার গঠন করতে হয়েছিল। ২০১৫ সালের নির্বাচনে কনজেরভেটিভ পার্টি একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু গত বছর জুনের গণভোটে হেরে গিয়ে ক্যামেরনকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়। ক্যামেরনের পতন থেকে উত্থান হয়েছে থেরেসার।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এক বছর দায়িত্ব পালন করে তিনি আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেন। তার মেয়াদ শেষ হবার তিন বছর আগেই সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আগাম নির্বাচন নিয়ে তিনিও তার পূর্বসূরি ক্যামেরনের মতো এক প্রকার রাজনৈতিক জুয়া খেলছেন। নির্বাচনের জয়ের মাধ্যমে তিনি পার্লামেন্টে আরো বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করতে চান। তার মতে গত গণভোটের রায় অনুযায়ী ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে আরো বেশি শক্তিশালী “ডেমোক্রেটিক” ম্যান্ডেট দরকার।

এই নির্বাচনে দলকে জেতানোর মাধ্যমে থেরেসা ক্ষমতায় ফিরতে পারলে তিনি নতুন ইতিহাসের সূত্রপাত করতে পারবেন। মার্গারেট থ্যাচারের পর তিনিই হবেন দ্বিতীয় ব্রিটিশ নারী যার নেতৃত্বে একটি রাজনৈতিক দল ভোট যুদ্ধে জয় লাভ করছে। মার্গারেট থ্যাচারের ছিলেন ব্রিটিশ ইতিহাসে প্রথম নারী যার নেতৃত্বে কনজেরভেটিভ পার্টি ১৯৭৯ সাল থেকে তিন তিন বার নির্বাচনে জয়লাভ করে; তিনি তিন বার প্রধানমন্ত্রী হন। ১৮৭২ সালের পর তিনিই ছিলেন সবচেয়ে বেশি সময় ধরে থাকা প্রধানমন্ত্রী। খনি শ্রমিক ধর্মঘট নির্মমভাবে মোকাবেলাসহ আরো অনেক বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপের জন্য লৌহ মানবী হিসাবে দুনিয়া জুড়ে পরিচিতি লাভ করেন। তবে নিজ দলের ভিতরে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় পরাজিত হয়ে ১৯৯০ সালে তাকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে হয়। তিনি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আড়াই দশক পর ব্রিটিশ ইতিহাসে দ্বিতীয় নারী হিসেবে থেরেসা মে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন গত বছর জুলাইয়ে। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য তাকে জনগণের কাছে যেতে হয়নি। কেননা, তার দল গত নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল, তিনি শুধু দলের নেতা নির্বাচিত হয়েই প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছেন। এবার তিনি জনগণের কাছে গিয়েছেন; প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য তাদের সমর্থন চেয়েছেন।

থেরেসা মে ইতোপূর্বে মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন যে কঠোর পদক্ষেপ নিতে তিনি পিছপা হন না। এবার নির্বাচনী প্রচারণার সময়ও তিনি সন্ত্রাস দমনে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অবশ্য সেটা করা ছাড়া কিবা করার ছিল, কেননা কিছু দিনের ব্যবধানে যুক্তরাজ্যকে পরপর দুবার সন্ত্রাসী আক্রমণের শিকার হতে হল। থেরেসা বলছেন, সন্ত্রাসী হামলা মোকাবেলায় তিনি মানবাধিকার আইন সংশোধন করবেন। অর্থাৎ সন্ত্রাস দমনে তার সরকারের পদক্ষেপে মানবাধিকার প্রসঙ্গ আর আগের মতো প্রাধান্য নাও পেতে পারে?

কেউ কেউ ইতোমধ্যে পূর্বাভাস দিয়েছেন যে, মার্গারেট থ্যাচারের পর থেরেসার নেতৃত্বে কনজেরভেটিভ পার্টি বড় জয় পেতে যাচ্ছে। কেউ বলছেন, থ্যাচারের নেতৃত্বের অনেক দিক থেরেসার মধ্যে দেখা যাচ্ছে। এ নিয়ে দেশটির রাজনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে। লৌহমানবী হিসেবে তিনি আবির্ভূত হবেন কিনা সেটা সময় বলে দিবে। তবে এই নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারলেই থেরেসা ইতিহাস স্থাপন করবেন। মার্গারেট থ্যাচারের পর তিনি কোন ব্রিটিশ নারী যিনি একটা দলকে নির্বাচনে জিতিয়ে প্রধানমন্ত্রী হবেন এবং তার নেতৃতে যুক্তরাজ্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে। তার দলের নেতা ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথের নেতৃত্বে ১৯৭৩ সালে যুক্তরাজ্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য দেশ হিসাবে যে যাত্রা শুরু করেছিল তার সমাপ্তি ঘটাতে নেতৃত্ব দিবেন থেরেসা মে।

Comments

The Daily Star  | English
Mustafa Zaman Abbasi no more

Mustafa Zaman Abbasi no more

Mustafa Zaman Abbasi, a revered Bangladeshi musicologist, author, and television figure, has passed away at the age of 87. He died at 7 am on Saturday morning at a hospital in Banani. His daughter, Sharmin Abbasi, confirmed the news.

19m ago