বিক্রম চাকমার দুবার ঘর হারানোর গল্প

বিক্রম চাকমা

মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে দুবার ঘরহারা হয়েছেন রাঙামাটির বিক্রম চাকমা (৪৭)। ঘর হারানোর পর এখন সম্পদ বলতে কিছুই অবশিষ্ট নেই তার।

এ মাসের শুরুতে রাঙামাটির লংগদুতে বিক্রমের পৈত্রিক বাড়িটিতে বাঙালি সেটেলাররা আগুন দেয়। এখানে তিনি বাবার সাথে থাকতেন। বসত ভিটা পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার পর কয়েকদিন জঙ্গলে থেকে একটি বৌদ্ধ মন্দিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি।

অন্যদিকে তার স্ত্রী ও কন্যা রাঙামাটি শহরে তাদের বাড়িতে বসবাস করছিলেন। গত সোমবার পাহাড়ধসে অন্য অনেকের মতই তার এই শেষ আশ্রয়স্থলটিও মাটিতে মিশে গেছে। তিনি জানান, বাড়ি থেকে স্ত্রী ও সন্তান কোনমতে প্রাণে বেঁচে বের হতে পারলেও জমির দলিল, পরীক্ষার সার্টিফিকেট, গয়না, নগদ টাকাসহ সবকিছুই শেষ হয়ে গেছে।

পাহাড়ধসের কয়েক ঘণ্টা পর রাঙামাটির উদান্তি আদম এলাকায় পৌঁছে বিক্রম দেখেন তাদের বাড়ি ঘন কাদার নিচে ডুবে রয়েছে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় রাঙামাটির যুব উন্নয়ন কেন্দ্রে দ্য ডেইলি স্টারের সাথে বিক্রমের কথা হয়। ঘরহারা হলেও ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি সবকিছু হারালেও পরিবার আমার সাথে রয়েছে। পাহাড়ধসের পর অনেকের তাও নেই।”

বিক্রমের এক ছেলে, এক মেয়ে। বড় ছেলে কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য ঢাকায় থাকছেন। আর মেয়ে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। মা বাবার সাথে সেও এখন যুব উন্নয়ন কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। আগামী মঙ্গলবার কলেজে ভর্তি হওয়ার কথা থাকলেও বইপত্র ও সার্টিফিকেট হারিয়ে এখন অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে তার।

ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিক্রমেরও সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা। তাদের পড়ালেখা কিভাবে চলবে সে ভাবনাতেই এখন তার কপালে ভাঁজ।

গত ৫ জুন লংগদুতেও বিক্রমের সাথে দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদকের দেখা হয়েছিল। সেটেলারদের দিক থেকে ফের হামলার ভয়ে তখন জঙ্গলে পালিয়ে ছিলেন তিনি। এর তিন দিন আগে লংগদুর তিনটি গ্রামে দুই শতাধিক আদিবাসী বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ওই আগুনেই বিক্রমের বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

ওই বিভীষিকা কাটতে না কাটতেই গত ১২ জুন প্রবল বর্ষণের পর পাহাড়ধসে শুধুমাত্র রাঙামাটি জেলাতেই ১১২ জন প্রাণ হারান।

Click here to read the English version of this news

Comments