সীতাকুণ্ডে ৯ শিশুর মৃত্যুর কারণ হাম, অবহেলা

টিকাদানের ব্যর্থতার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দুঃখ প্রকাশ, অপুষ্টি ও যথাযথ চিকিৎসা না পাওয়াও মৃত্যুর অন্যতম কারণ
ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ত্রিপুরা পাড়ার শিশুগুলো। হাসপাতালের বিছানায় শুয়েও তাদের মুখে দেখা যাচ্ছে হাসি। আর বাচ্চাদের সুস্থ হতে দেখে মা-বাবারও মুখে ফুটেছে হাসি। ছবিটি সোমবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে তোলা। ছবি: অনুরূপ কান্তি দাশ

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ত্রিপুরা পাড়ায় মারা যাওয়া ৯ শিশু হামে আক্রান্ত ছিল। ডাক্তারি পরীক্ষায় তাদের দেহে হামের জীবাণু পাওয়া গেছে। সরকারি টিকাদান কর্মসূচির বাইরে থেকে যাওয়া এই শিশুরা অপুষ্টিতেও ভুগছিল। সর্বোপরি হাম ও অবহেলার কারণেই তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে তদন্তে উঠে এসেছে।

সীতাকুণ্ডে শিশু মৃত্যু নিয়ে গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছিল। অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, মারা যাওয়া শিশুদের কখনো টিকা দেওয়া হয়নি। ওই এলাকার লোকজনও ছিল সরকারি স্বাস্থ্য সুবিধার আওতার বাইরে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, আক্রান্ত শিশুদের রক্ত ও সিরামের নমুনায় হামের জীবাণু থাকার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত হয়েছে।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, তারা [মৃত শিশুরা] অপুষ্টিতেও ভুগছিল। এর ফলে রোগটি প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে।

প্রতিরোধযোগ্য এই শিশুমৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পেলে শিশুগুলো বেঁচে যেতো।

এর মধ্যেই গতকাল সোনাইছড়ি ইউনিয়ন থেকে আরেকটি শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে চট্টগ্রাম থেকে আমাদের প্রতিনিধি জানিয়েছেন। সর্বশেষ এই শিশুসহ ওই এলাকা থেকে হাসপাতালে ভর্তি শিশুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৮। তাদের সবার একই রকম রোগের উপসর্গ রয়েছে।

এদের মধ্যে ৫৩ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও অন্যদের ফৌজদারহাটে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

ঢাকা থেকে একদল চিকিৎসক সেখানে গিয়ে আক্রান্ত শিশুদের রক্ত ও সিরামের নমুনা সংগ্রহ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য মহাপরিচালকের সাথে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) একজন চিকিৎসা কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন। আর নতুন করে সেখানে কেউ হামের ভাইরাসে আক্রান্ত হবে না বলেও আশ্বাস দিয়েছেন মহাপরিচালক। তিনি জানান, দুর্গত এলাকাটিতে টিকাদান কর্মসূচি চালাতে একটি অস্থায়ী শিবির খোলা হয়েছে।

তবে ত্রিপুরা পাড়াটি কিভাবে সরকারি টিকাদান কর্মসূচির বাইরে থেকে গেল তার কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি। বিষয়টি ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে অধ্যাপক আবুল কালাম বলেন, ওয়ার্ড পর্যায়ে ‘মাইক্রো প্ল্যান’ অনুযায়ী টিকাদান চলছিল। কিন্তু কোনভাবে ৮৫ পরিবারের ত্রিপুরা পাড়াটি এর আওতার বাইরে থেকে যায়। এর জন্য দায়ীদের খুঁজে বের করতে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।

আর কোনো এলাকা টিকাদান কর্মসূচির বাইরে রয়ে গেছে কিনা জানতে পুরো ‘মাইক্রো প্ল্যান’ পদ্ধতিটিকেই গ্রাম পর্যায়ে ঢেলে সাজানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিক জানিয়েছেন, চিকিৎসাধীন শিশুরা সবাই এক থেকে ১২ বছর বয়সী। যেসব লক্ষণ নিয়ে শিশুরা এসেছে তার মধ্যে রয়েছে, জ্বর, ত্বকে ফুসকুড়ি, শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা, বমি, মলের সাথে রক্ত।

Click here to read the English version of this news

Comments

The Daily Star  | English
bad loans rise in Bangladesh 2025

Bad loans hit record Tk 420,335 crore

It rose 131% year-on-year as of March of 2025

10h ago