এনজয়, লং ড্রাইভ ইন ঢাকা!

ছবি: প্রবীর দাশ

রাজধানীবাসীর কপাল খুলেছে! খেটে খাওয়া মানুষগুলো এখন প্রতিদিন, সকাল বিকাল লং ড্রাইভের স্বাদ-আনন্দ উপভোগ করছেন। এ জন্য কাউকে আর গাড়ি হাঁকিয়ে শহরের বাইরে যাওয়ার ঝক্কি পোহাতে হচ্ছে না। অফিস কামাই করতে হচ্ছে না। বসের বকাঝকাও খেতে হচ্ছে না। বস নিজেও দুই বেলা লং ড্রাইভের আনন্দে আহ্লাদিত আছেন। তাই বসেরাও এখন উদার।

এত বেশি আনন্দে আত্মহারা হয়ে আছেন যে অনেকে বুঝতে পারছেন না যে তারাও প্রতিদিন লং ড্রাইভ করছেন। যারা অনেক বেশি সামাজিক, প্রতিনিয়ত তারা তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করছেন সামাজিক মাধ্যমে। চলুন তেমন কয়েকজনের অভিজ্ঞতার কথা পড়ি, তাহলে নিজেরাও বুঝতে পারব লং ড্রাইভ সম্পর্কে। তখন আনন্দ দিগুণ, তিন গুণ, বহু গুণ হবে।

একজন বলেছেন, উত্তরা থেকে তার অফিস গুলশান এলাকায় পৌঁছাতে তার আড়াই ঘণ্টা সময় লেগেছে। সাত সকালে আড়াই ঘণ্টা লং ড্রাইভ কোন দেশে, কোন শহরে কয় জনের কপালে এমন জোটে? আরেক জন বলেছেন, নিউ মার্কেট থেকে মিরপুর গেছেন তিন ঘণ্টা ড্রাইভ করে। যারা উত্তরা থেকে মতিঝিল বা সদরঘাটে যাচ্ছেন তাদের কপাল আরও বেশি খুলে যাচ্ছে, সারা দিনই লং ড্রাইভ!

লং ড্রাইভের উপকারিতা অনেক। শহরের কোলাহলময় জীবনের চাপে হাঁপিয়ে উঠলে অনেকেই গাড়ি চালিয়ে রাজধানীর বাইরে চলে যান। একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয়ার জন্য। প্রেমিক প্রেমিকারাও যায় লং ড্রাইভ অভিসারে, তাতে নাকি সম্পর্কে নতুন জোয়ার আসে। রাজনৈতিক নেতাদেরও কেউ কেউ নাকি যান লং ড্রাইভে, দেশ ও জাতি গঠনে সে সময় কত গুরুত্বপূর্ণ আলাপ আলোচনা করেন।

শহুরে লং ড্রাইভে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কম, নেই বললেই চলে। কেননা সবাই সাবধান, জান মালের প্রতি যত্নবান। তাই কেউ গাড়ির গতি বাড়াতে চান না। বাইরে গেলে যারা ঘণ্টায় ৮০, ৯০ থেকে ১২০ কিলোমিটারের ঝড় বেগে চলেন, তারাই শহরের লং ড্রাইভে গড়ে ৭ কিলোমিটার গতিতে চলেন। এত সতর্ক চালক দুনিয়ার আর কোন শহরে আছে বলতে পারবেন? শুধু তাই নয়, ঘণ্টার পর ঘণ্টা এক জায়গা স্থির দাঁড়িয়ে থাকার মত ধৈর্য তাদের আছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে লং ড্রাইভে থাকার সময় চাইলে কেউ শপিংয়ের কাজটাও সেরে নিতে পারেন। শপিং মলে নেমে যেতে পারেন। কেনা কাটা শেষ করে এসে দেখবেন গাড়ি আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। যাদের নিজেদের গাড়ি আছে, তাদেরকে পার্কিংয়ের জন্য অতিরিক্ত ফি দিতে হবে না। গাড়ি রাস্তায় পার্ক করা রাখা যাবে কয়েক ঘণ্টা। সব কিছু মিলিয়ে রাজধানী শহরের ভেতরে লং ড্রাইভ অতুলনীয়।   

এই আনন্দ থেকে বঞ্চিত ছিলেন খেটে খাওয়া লাখো মানুষ। কাজের ফাঁকে দম ফেলার সময় পেতেন না, আর লং ড্রাইভ! তাদের জন্যও এখন সুসময়। ঘর থেকে দুই পা বের হয়ে রাস্তায় নামলেই লং ড্রাইভের আনন্দ হাতের মুঠোয়। তারা চাইলে পরিবারের সব সদস্যদের নিয়ে বের হতে পারেন লং ড্রাইভে। কাজের চাপে পরিবারের সদস্যদের সাথে যারা বেশি সময় কাটাতে পারেন না, তারা অফিসে যাবার বেলায় অন্যদের সাথে নিয়ে বের হতে পারেন। সাত সকালে সবাই মিলে লং ড্রাইভের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে পারবেন। সাথে কিছু খাবার দাবার নিলে আরও ভালো, বনে না গিয়েই বনভোজন হয়ে যাবে! 

শহরের পাবলিক বাসের হেলপাররা যাত্রী সংগ্রহে তাদের পুরনো পন্থায় সংস্কার আনতে পারেন। বাসের শরীর জুড়ে কোন এলাকার নাম নয়। লেখা থাকবে--স্বল্প লং ড্রাইভ, মাঝারি লং ড্রাইভ, অথবা দিনব্যাপী লং ড্রাইভ। যারা ৫-৭ কিলোমিটার দূরে যাবেন তারা স্বল্প লং ড্রাইভে যাওয়া বাসে চড়বেন। তারা দুই ঘণ্টার জন্য পেমেন্ট করবেন। যারা উত্তরা বা মিরপুর থেকে মতিঝিল বা সদরঘাট যাবেন তার দিনব্যাপী লং ড্রাইভের বাস বেছে নিবেন।

বড় হতে হলে নতুন নতুন স্বপ্ন দেখতে হবে। নতুন নতুন পরিকল্পনা করতে হবে। বেকার সমস্যা সমাধানে লং ড্রাইভ দারুণ ভূমিকা রাখতে পারে। লং ড্রাইভকে কেন্দ্র করে কিছু ব্যবসা বাণিজ্য হতেই পারে। দিনব্যাপী লং ড্রাইভে যারা যাবেন তাদের জন্য খাবার ও পানীয় সরবরাহ ব্যবসা জমজমাট হতে পারে। যেমন হয় আকাশ পথে! ভেবে দেখুন, প্রতিদিন কত লাখ মানুষ শহরে লং ড্রাইভ করছেন। তাদের চাহিদা নিয়ে গবেষণা করুন। পেয়ে যাবেন নতুন নতুন আইডিয়া। বড় বড় ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগের নতুন জায়গা খুঁজে পেতে পারেন। দেখুন, চট্টগ্রামে কর কর্মকর্তারা কী সুন্দর নৌকা কিনে ফেলেছেন। অফিস করার নাম করে নৌভ্রমণের আনন্দ পাচ্ছেন তারা।  

তবে সাবধান থাকতে হবে। দেশে আভ্যন্তরীণ রুটে যারা আকাশযান পরিচালনা করেন, তারা যেন বিমানবন্দর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত বিমানের নতুন রুট চালু করতে না পারে। আবার রেল মন্ত্রণালয় শহরের ভেতর দিয়ে রেলের নতুন লাইন বসানোর ফন্দি আঁটতে পারে, কেননা শহরের বাইরে না গিয়েই প্রতিদিন এত যাত্রী পাওয়ার লোভ সামলানো খুব কঠিন।

লং ড্রাইভের এমন সুযোগ যেন হাত ছাড়া না হয় সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সতর্ক থাকলেই এ সুযোগ স্থায়ী হবে। আরও অনেক বছর শহরে লং ড্রাইভ উপভোগ করা যাবে।

 

এই সুযোগে সংগ্রহ করা একটা লং ড্রাইভ জোক শেয়ার করছি:

রহিম গুলশানের এক অফিসের সাপোর্ট স্টাফ। ছুটি চেয়ে আবেদন করেছেন।

বসঃ কয়েক দিন আগেই তো ছুটি নিয়েছ। আবার ছুটি কেন?

রহিমঃ স্যার, বিষয়টা মানবিক। দাদী অসুস্থ, দেখতে যাব।

বসঃ দাদী থাকেন কোথায়?

রহিমঃ যাত্রাবাড়ি।

বসঃ তাই বলে তিন দিন ছুটি।

রহিমঃ স্যার, একদিন যেতে লাগবে, একদিন দাদীর কাছে থাকব। পরদিন সকালে রওনা দিব, আসতে আসতে সন্ধ্যা হতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English

Effective tariff for RMG exports to US climbs to 36.5%: BGMEA

The tariff will be a bit less if 20% of the cotton used in garment production is sourced from the USA

2h ago