ঘড়িয়ালের বংশ বাড়াতে দেশে প্রথমবারের মত উদ্যোগ
বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী ঘড়িয়ালের বংশ বৃদ্ধি ঘটানোর জন্য দেশে প্রথমবারের মত উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চিড়িয়াখানার ভেতরে ঘড়িয়ালের প্রজননের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ জন্য চিড়িয়াখানাগুলো থেকে স্ত্রী ও পুরুষ ঘড়িয়াল বিনিময় করে জোড়া তৈরি করা হবে।
চিড়িয়াখানায় প্রজননের প্রথম উদ্যোগ হিসেবে রাজশাহী চিড়িয়াখানার একটি প্রাপ্তবয়স্ক ঘড়িয়ালকে আগামীকাল ঢাকায় জাতীয় চিড়িয়াখানায় ও ঢাকার একটি প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ঘড়িয়াল রাজশাহীতে স্থানান্তর করা হবে।
পরিবেশ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইইউসিএন বাংলাদেশের ঘড়িয়াল সংরক্ষণ প্রধান কর্মকর্তা এবিএম সারোয়ার আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “বাংলাদেশের চিড়িয়াখানাগুলোতে ঘড়িয়ালের কোনো জোড়া নেই। এ কারণেই দীর্ঘদিন থেকে প্রজননও নেই।”
তিনি জানান, সরকারের উদ্যোগে গ্রহণ করা “ঘড়িয়াল কনজারভেশন ম্যানেজমেন্ট একশন প্ল্যান”-এর অংশ হিসেবে চিড়িয়াখানাগুলোর কর্তৃপক্ষ ঘড়িয়াল বিনিময় করতে সম্মত হয়েছে।
প্রজননের মাধ্যমে বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীটির আবার প্রাকৃতিক আবাসে ফিরে আসার সম্ভাবনা দেখছেন বন সংরক্ষক কর্মকর্তা মো জাহিদুল কবির। তিনি বলেন, “পদ্মা ও যমুনা নদীতে আমরা ঘড়িয়ালের বসবাস উপযোগী চারটি এলাকা চিহ্নিত করেছি। বাংলাদেশে ঘড়িয়ালের বংশবৃদ্ধির প্রাথমিক ধাপে চিড়িয়াখানাগুলোতে প্রাণীটি বিনিময় করা হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, যে এলাকাগুলো ঘড়িয়ালের জন্য অভয়ারণ্য হিসেবে গড়ে তোলা হবে তার আশপাশের লোকজনের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোসহ বেশ কিছু উদ্যোগ ইতিমধ্যে নেওয়া শুরু হয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) ও বন বিভাগ সম্প্রতি “ঘড়িয়ালস অব বাংলাদেশ” শীর্ষক একটি গবেষণা চালিয়েছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত গবেষণাটিতে চিড়িয়াখানায় ঘড়িয়ালের সংখ্যা সম্পর্কে তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষণায় বলা হয়, এই মুহূর্তে রংপুরে চারটি স্ত্রী ঘড়িয়াল, ঢাকায় চারটি পুরুষ, রাজশাহীতে দুটি স্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে একটি পুরুষ ঘড়িয়াল রয়েছে।
১৯৮৩ ও ১৯৯৭ সালে জেলেদের জালে আটকা পড়া চারটি ঘড়িয়াল উদ্ধার করে ঢাকায় আনা হয়েছিল। জাতীয় চিড়িয়াখানায় থাকা পুরুষ ঘড়িয়ালগুলো সুস্থ সবল থাকলেও কোন স্ত্রী ঘড়িয়াল না থাকায় প্রজনন হয়নি।
অন্যদিকে প্রাপ্তবয়স্ক দুটি স্ত্রী ঘড়িয়াল রাজশাহী চিড়িয়াখানায় রয়েছে। সেখানে যে জায়গায় ঘড়িয়ালদুটি রয়েছে তার মাঝখানে একটি দ্বীপের মত স্থান রয়েছে। কিন্তু দ্বীপটির ঢাল ঘড়িয়ালের জন্য উপযোগী না হওয়ায় তারা সেখানে স্বচ্ছন্দে রোদ পোহাতে পারে না।
রংপুর চিড়িয়াখানাতে থাকা চারটি ঘড়িয়ালও একই রকম অবস্থায় রয়েছে। বাসা তৈরি ও রোদ পোহানোর জন্য সেখানকার অবস্থাও উপযোগী নয়।
আর গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে ১১৫ সেন্টিমিটার দীর্ঘ একটি বাচ্চা ঘড়িয়াল রয়েছে।
চিড়িয়াখানায় ১১টি ঘড়িয়াল ছাড়াও দেশের বড় নদীগুলোতে সম্প্রতি ৫৮টি ঘড়িয়াল দেখতে পাওয়ার খবর রয়েছে। এর মধ্যে পদ্মায় ৩৯টি যমুনায় ১৭টি, ব্রহ্মপুত্র ও মহানন্দায় একটি করে ঘড়িয়াল দেখা গেছে।
ঢাকায় থাকা একটি ঘড়িয়ালের বয়স ৪১ বছর। কিন্তু একবারের জন্যও সে কোনো সঙ্গীর সাথে মিলিত হওয়ার সুযোগ পায়নি। সারোয়ারের আশা, এখানে স্ত্রী ঘড়িয়াল আনায় আগামী বছর নাগাদ বাচ্চা পাওয়া যাবে। আর বাচ্চা পাওয়া গেলেই সেগুলোকে প্রাকৃতিক পরিবেশে বড় হওয়ার জন্য পদ্মা ও যমুনায় বসবাস উপযোগী এলাকাগুলোতে অবমুক্ত করা হবে।
প্রজনন উপযোগী হতে ঘড়িয়ালের দীর্ঘ সময় লাগে। পুরুষ ঘড়িয়াল ১৩ বছরে ও স্ত্রী ঘড়িয়াল ১৬ বছর পর প্রজনন সক্ষম হয়। এই সময়ের মধ্যে তারা প্রায় তিন মিটার লম্বা হয়।
ঘড়িয়াল সাধারণত ৫০ বছর প্রজননক্ষম থাকে। এদের জীবনকাল ১০০ বছর পর্যন্ত দীর্ঘ হয়।
Comments