রহস্যে ঘেরা ‘নিষিদ্ধ শহর’

forbidden city temple of heaven and summer palace
“নিষিদ্ধ শহর”-এর ভেতরে অবস্থিত “স্বর্গ মন্দির” ও “গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদ”। ছবি: সংগৃহীত

ব্রিটিশ-ইতালীয় চলচ্চিত্র “দ্য লাস্ট এম্পেরর”-এ দেখা যায় চীনের শেষ সম্রাট পুই-এর জীবনের অংশবিশেষ। সেই ছবিটির কিছু অংশের শুটিং হয় “নিষিদ্ধ শহর”-এ। চীনের আধুনিক বেইজিং নগরীর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ১৮০ একরের এই এলাকাটি সবার কাছে পরিচিত “ফরবিডেন সিটি” বা “নিষিদ্ধ শহর” হিসেবে।

দেশটির সাধারণ প্রজা তো বটেই, রাজপরিবারের সব সদস্যও এ শহরে প্রবেশের অনুমতি পেতেন না। যারা পেতেন তাদেরও আবার সব জায়গায় যাওয়ার অনুমতি মিলতো না। শুধুমাত্র সম্রাটই ছিলেন এ নিষেধাজ্ঞার ঊর্ধ্বে। আর এ কারণেই “নিষিদ্ধ শহর” বলা হয় একে।

মিং রাজবংশের ইয়ংলি সম্রাট ১৪০৬ সালে এ শহরের নির্মাণ কাজ শুরু করার পর মূল কাজ শেষ করতে সময় লাগে ১৪ বছর। এরপর, প্রায় ৫০০ বছর এটিই ছিলো চীনের রাজধানী। এ সময়ে এই “নিষিদ্ধ” শহরটিতে থেকেছেন ২৪ জন সম্রাট।

শহরটির অনেক কিছুই এখনো অজানা রয়ে গেছে। অনেক কিছুই রয়ে গেছে রহস্যে ঘেরাটোপে। এই শহরে রয়েছে ৯৮০টি বাড়ি। জনশ্রুতি রয়েছে, এসব বাড়িতে রয়েছে ৯,৯৯৯টি কক্ষ। তবে কক্ষের প্রকৃত সংখ্যা নিয়েও রয়েছে রহস্য।

মূলত কাঠ দিয়ে তৈরি হওয়া এ বাড়িগুলোর নির্মাণ কৌশল নিয়েও রহস্য রয়েছে। কেননা, গত ৫০০ বছরে চীনে ঘটে যাওয়া ছোট-বড় সব ভূমিকম্পকে ঠেকিয়ে দিয়ে মাথা উঁচু করে রয়েছে এই বাড়িগুলো।

“নিষিদ্ধ শহর”-এর “হল অব সুপ্রিম হারমনি”-র আঙ্গিনায় কোন গাছ নেই কেন? এমন প্রশ্নের উত্তর এখনো অজানা। এমন আরও প্রশ্নের মধ্যে রয়েছে, রহস্যময় এ শহরের নকশা করেছেন কে? আগে ধারণা করা হতো, মিং রাজবংশের খ্যাতনামা শিল্পী কুয়াই জিয়ঙ এই শহরের নকশাকার। কিন্তু, সাম্প্রতিক তথ্যে বলা হচ্ছে, এর প্রকৃত নকশাকার হলেন কাই জিন নামের অন্য একজন।

শহরটির বাড়ি ও আঙ্গিনার মাপগুলো অবাক করছে গবেষকদের। বাড়িগুলো যত বড় বা ছোটই হোক না কেন এর দৈর্ঘ্য-প্রস্তের মাপের হার ৬:১১। এছাড়াও, বাড়ির আঙ্গিনাগুলোর মাপের হারও এমনই। এই মাপের মধ্যে প্রাচীন চীনের কোন গুপ্তজ্ঞান লুকিয়ে রয়েছে কী না সেটি নিয়েও ভাবছেন গবেষকরা।

এছাড়াও, বাড়িগুলোর ছাদে, দেয়ালে ও বিভিন্নস্থানে ব্যবহৃত ফিনিক্স, ড্রাগন ও অন্যান্য পৌরাণিক জীব-জন্তুর প্রতিকৃতি বা ভাস্কর্যের ব্যবহার নিয়েও রহস্য রয়েছে। কেননা, এগুলো ব্যবহার করা হয়েছে প্রতীক হিসেবে। প্রাচীন চীনে প্রতীকের ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসব প্রতীকের মধ্যে অনেক দিক-নির্দেশনা দেওয়া থাকে।

উল্লেখ্য, ১৯১২ সালে চীনে রাজবংশের পতনের পর শহরটিকে জাদুঘর হিসেবে ঘোষণা করা হয় ১৯২৫ সালে। এরপর, এ শহরের রূপ-সৌন্দর্যের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা খুঁজতে থাকেন রহস্যের সব উত্তর।

এদিকে, গত বছর চীনা প্রত্নতাত্ত্বিকরা “নিষিদ্ধ শহর”-এর মাঝখানে খনন কাজ চালিয়ে জানতে পারেন যে ১৩ শতকের বিখ্যাত কুবলাই খানের রাজপ্রাসাদের ধ্বংসাবশেষের ওপরই গড়ে উঠেছে এই শহরটি। তবে এ নিয়ে বিশেষ আর কিছু জানা যায়নি।

অসাধারণ নির্মাণশৈলী এবং সমৃদ্ধ ইতিহাসের গুণে এই “নিষিদ্ধ শহর”-টি এখন ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য।

Comments

The Daily Star  | English
Khaleda Zia calls for unity

‘Seize the moment to anchor democracy’

Urging people to remain united, BNP Chairperson Khaleda Zia has said the country must quickly seize the opportunity to institutionalise the democratic system.

6h ago