বাজারের সব সবজি নিরাপদ না

খাদ্য নিরাপত্তা আইন কার্যকর হওয়ার চার বছর পার হলেও বাজার থেকে দৈনন্দিন কেনা সবজি ও খোলা খাবার কতটুকু নিরাপদ তা নিয়ে এখনও শঙ্কা রয়েই গেছে। সরকারি একটি গবেষণাগারে নমুনা পরীক্ষা করে অনেকগুলোতেই কীটনাশক ও ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে। এমনকি কিছু নমুনায় আশঙ্কাজনক মাত্রাতেও মিলেছে কীটনাশক।
veggies not safe

খাদ্য নিরাপত্তা আইন কার্যকর হওয়ার চার বছর পার হলেও বাজার থেকে দৈনন্দিন কেনা সবজি ও খোলা খাবার কতটুকু নিরাপদ তা নিয়ে এখনও শঙ্কা রয়েই গেছে। সরকারি একটি গবেষণাগারে নমুনা পরীক্ষা করে অনেকগুলোতেই কীটনাশক ও ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে। এমনকি কিছু নমুনায় আশঙ্কাজনক মাত্রাতেও মিলেছে কীটনাশক।

ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথ দেশের খাবারের মান পরীক্ষাকারী প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরিতে গত জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে খাবারের রাসায়নিক ও জীবাণুঘটিত দূষণ পরীক্ষা করেছে। গতকাল প্রকাশিত ফলাফলে সবজিতে কীটনাশকের উপস্থিতির পাশাপাশি দেখা যায় ভোজ্য তেলের যেসব গুণাগুণ থাকা দরকার বাজারের বেশিরভাগ তেলেই তা পুরোপুরিভাবে নেই। শুধু তাই নয় নুডুলসে যে মাত্রায় আমিষ থাকা দরকার কিছু নমুনায় তা ছিল না।

ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথ পরীক্ষার জন্য রাজধানীর ১৫টি কাঁচাবাজার ও পাঁচটি জেলা শহর থেকে বেগুন, টমেটো, ফুলকপি, কাঁচামরিচ ও শিমের ৩০টি করে নমুনা সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ১৫০টি নমুনায় কীটনাশক পাওয়া যায়। কাঁচামরিচ ও শিমের অবস্থা ছিল সবচেয়ে খারাপ। এসবের প্রায় অর্ধেক নমুনাতেই কীটনাশক অবশিষ্ট ছিল।

কাঁচামরিচের পরীক্ষায় দেখা গেছে প্রথম ও দ্বিতীয়বার ধোয়ার পর এর কীটনাশকের মাত্রা ৪১ ও ৬১ শতাংশ কমে যায়। কিন্তু এর পরও যে মাত্রায় কীটনাশক থাকে তা নিরাপদ মাত্রার চেয়ে বেশি।

শিমের যেসব নমুনা সংগ্রহ করা হয় তার অর্ধেকেই কীটনাশকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একটি নমুনায় তা নিরাপদ মাত্রার চেয়েও বেশি ছিল। অন্যদিকে ফুলকপির ৩০টি নমুনার মধ্যে কীটনাশক পাওয়া গেছে ১২টিতে। আর বেগুনে কীটনাশক ছিল একটি নমুনায়।

সবজিগুলোর নমুনায় ক্লোরোপিরিফস ও ডাইমিথয়েট ব্র্যান্ডের কীটনাশক পাওয়া গেছে। ১৯৫০ ও ’৬০ এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি কোম্পানির বাজারজাত করা মারাত্মক বিষাক্ত এই কীটনাশকগুলো স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করে। মানব স্বাস্থ্যের জন্যও এগুলোকে ঝুঁকি হিসেবে দেখা হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বরাত দিয়ে ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথ আগের এক প্রতিবেদনে জানায়, প্রতি বছর ৩০ লাখ মানুষ কীটনাশকের বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয় যার মধ্যে দুই লাখ ২০ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। কোন দেশে কত মানুষ এভাবে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয় রিপোর্টে তা সুনির্দিষ্ট করা না থাকলেও বলা হয়, উন্নয়নশীল বিশ্বে এর হার বেশি।

ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় স্কুলের সামনে বিক্রি করা নুডুলস, ভোজ্য তেল, ঝালমুড়ি, ফুচকা, ভেলপুরি ও আচারের নমুনা পরীক্ষা করে সেগুলোয় মাত্রাতিরিক্ত কলিফর্ম (ব্যাকটেরিয়া) ও ইস্ট পাওয়া গেছে। তবে সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ মনে করা আচারে সবচেয়ে কম ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া গেছে।

এছাড়াও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৫৫টি নুডুলস নমুনা পরীক্ষায় ১৩টিতে কাঙ্ক্ষিত মাত্রার চেতে কম আমিষ পাওয়া গেছে। সরিষার তেল, সয়াবিন তেল ও ঘি-এর যেসব নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে সেগুলোও মানসম্মত পাওয়া যায়নি।

ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথের প্রতিবেদনে বলা হয়, “ভোজ্য তেলের মান জানতে ৯৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। নমুনার রাসায়নিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে বেশিরভাগ ব্র্যান্ডের ও খোলা সরিষার তেল, সয়াবিন তেল ও ঘি নিম্ন মানের।”

ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির প্রধান অধ্যাপক শাহনিলা ফেরদৌসি গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “পরীক্ষার ফলাফল থেকে দেখা যাচ্ছে জমি থেকে মানুষের খাবারের টেবিলে আসা পর্যন্ত খাবারকে নিরাপদ রাখতে খাদ্য নিরাপত্তায় নিয়োজিত সবাইকেই তদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।” এক্ষেত্রে কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিরও পরামর্শ দেন তিনি।

Click here to read the English version of this news

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

6h ago