দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের মধ্যেই পদত্যাগপত্র জমা দেন হাথুরু

শনিবার কোচের পদত্যাগের খবর ইএসপিএন ক্রিকইনফোতে বের হলে সে সূত্রে দেশের গণমাধ্যমেও তা ছড়িয়ে পরে। এরপরও বিষয়টি আর গোপন রাখা যায়নি। বোর্ড প্রধান সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে খোলসা করেছেন সব।
এসিসির সভাপতি হচ্ছেন নাজমুল হাসান পাপন
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রধান কোচের পদ থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের সময়েই পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান জানিয়েছেন এমনটাই। কোচ না চাইলে তাকে জোর করে রাখা হবে না বলেও জানান বোর্ড প্রধান।

শনিবার কোচের পদত্যাগের খবর ইএসপিএন ক্রিকইনফোতে বের হলে সে সূত্রে দেশের গণমাধ্যমেও তা ছড়িয়ে পরে। এরপরও বিষয়টি আর গোপন রাখা যায়নি। বোর্ড প্রধান সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে খোলসা করেছেন সব।

বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসানের সংবাদ সম্মেলনের প্রশ্ন-উত্তর:

একটি খবর ছড়িয়ে পড়েছে যে বাংলাদেশ কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহে পদত্যাগপত্র দিয়েছেন…

নাজমুল হাসান: আমার যতদূর মনে পড়ে, ও একটা চিঠি দিয়েছে আমার কাছে। ওটা ছিল অক্টোবরের প্রথম দিকে। সম্ভবত দ্বিতীয় টেস্টের পরে বা ওই সময়টায়। একদম নিশ্চিত নই। তবে নিশ্চিতভাবেই অক্টোবরের ১৫ তারিখের আগে। ওখানটায় সে সুনির্দিষ্ট কারণ দেখায়নি। কাজেই ওর সঙ্গে কথা বলার আগ পর্যন্ত বলা মুশকিল কারণটা কী।

চিঠিটা কি পদত্যাগপত্র?

নাজমুল: সে করতে চায় না, সেটিই বলেছে। বলেছে, সে আর আগ্রহী নয় (দায়িত্ব চালিয়ে যেতে)।

লঙ্কান সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে যে তাকে শ্রীলঙ্কার কোচ করা হচ্ছে। আপনারা কিছু জানেন কিনা?

নাজমুল: এক বছর আগেই শ্রীলঙ্কা থেকে তার প্রস্তাব ছিল। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট ডেকে নিয়ে তাকে প্রস্তাব দিয়েছিল। অন্য জায়গা থেকেও তার প্রস্তাব ছিল, আমাকে দেখিয়েছে। এখন ওর সঙ্গে কথা বলার আগে বলা মুশকিল যে কেন চলে যাচ্ছে, আরও ভালো প্রস্তাব নাকি পারিবারিক কারণ বা অন্য কিছু তাকে ‘বদার’ করছে।

চিঠি পাঠানোর পর আপনারা যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন?

নাজমুল: খেলা চলার সময় তার সঙ্গে এটা নিয়ে কথা বলিনি। শেষের পর থেকেই যোগাযোগ করা হচ্ছে। প্রধান নির্বাহী চেষ্টা করছেন। কিন্তু যোগাযোগ হচ্ছে না। কোনো সাড়া পাচ্ছে না ওখান থেকে।

আপনারা পদত্যাগপত্র গ্রহণ করবেন কিনা, সিদ্ধান্ত হয়েছে?

নাজমুল: পেশাদারিত্বের ব্যাপার, আমরাও পেশাদারভাবে নেব। কেউ থাকতে না চাইলে জোর করার প্রশ্নই আসে না। যেটা করা উচিত, সেভাবেই করব। কেন যেতে চাচ্ছে, সেটা জানতে চাইব।

পেশাদার হলে তো যোগাযোগটাও ভালো হওয়ার কথা ছিল…

নাজমুল: মেইলের চেয়ে আমি মনে করে সামনাসামনি কথা হলেই ভালো। আর যখন গেল, তখন তো এরকম কোনো লক্ষণই ছিল না। সবকিছু খুব ভালো ছিল। হঠাৎ করে কেন তার মন বদলে গেল… ওখানে যাওয়ার পর প্রস্তাব পাওয়াটা তো অস্বাভাবিক। কিছু একটা হয়ত হয়েছে, যেটা তাকে ‘বদার’ করছে, আমি নিশ্চিত নই।

তার তো নোটিশ পিরিয়ড আছে?

নাজমুল: নোটিশ পিরিয়ড আছে। তবে থেকে লাভ কি? যদি না-ই থাকে কেউ, তার নোটিশ পিরিয়ড দিয়ে কি করব? যতদূর দেখেছি, সে পেশাদার মানুষ। হঠাৎ করে কি হলো, সে একটি চিঠি দিয়ে অস্ট্রেলিয়া গিয়ে চুপচাপ বসে আছে… এ রকম কিছু অস্বাভাবিক। সাধারণত কিছু হলে আমাদেরকে জানায়, কথা বলে। এবার কিন্তু এই সিরিজে সে যোগাযোগই করেনি, একবারও কথা বলেনি আমার সঙ্গে, যেটা অস্বাভাবিক।

আপনার কি মনে হয়, এটি ইমোশনাল সিদ্ধান্ত?

নাজমুল: হতে পারে, ইমোশনাল হতে পারে। পারিবারিকও হতে পারে, জানি না।

যেহেতু অনেক আগেই চিঠি দিয়েছে, বিকল্প কিছু আপনারা ভেবেছেন?

নাজমুল: একটি চিঠি দিয়েছে সে। একটি চিঠিতে তো সব বোঝা যায় না। এর আগেও একবার চিঠি দিয়েছিল সে, ভালো প্রস্তাব ছিল। আমরা যেতে দেইনি। এবারেরটি ভিন্ন, কোনো কারণ ছাড়া। কারণ ছাড়া হলে সাড়া দেওয়া কঠিন। আমাদের ভাবনা ছিল যে সিরিজটি শেষ হোক। সিরিজের মাঝে কথা বলা ঠিক নয়। আমাদের নির্বাচনসহ অনেক কিছু ছিল।

সিরিজের পর তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে, একবার মাত্র পেয়েছিল ফোনে, তাকে আসতে বলা হয়েছিল। সে বলেছিল যে ১৫ তারিখের পরে আসবে। এখন যোগাযোগ করা হচ্ছে, কোনো সাড়া নেই।

আপনার কি মনে হয়, তার দিক থেকে এটি পেশাদার আচরণ হলো?

নাজমুল: ওকে আমি যতটুকু চিনি, এরকম হওয়ার কথা নয়। ওর সঙ্গে বোর্ডের সবচেয়ে বেশি যোগাযোগ আমার সঙ্গেই ছিল। আমার এবং খালেদ মাহমুদ সুজনের সঙ্গে। কেন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটা না জেনে বলা কঠিন।

এমনকি হতে পারে, কোনো কিছু নিয়ে সে আপসেট?

নাজমুল: হতে পারে। আমি যেটা ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, আমি ওর জায়গায় থাকলে এভাবেই চিন্তা করতাম। কোচিং ক্যারিয়ারটাকে তো পেশা হিসেবে নিয়েছে। বাংলাদেশে যত কথাবার্তা, লেখালেখি হয় প্রতিদিন ওকে নিয়ে, ও সেই বিতর্কে যেতে চাইবে কেন? অন্য কোনো দেশের কোচ নিয়ে তো হয় না! ও কেন নিজের ক্যারিয়ার নষ্ট করবে!

ক্রিকেটারদের সমালোচনা তো আরও বেশি হয়। তারা সেসব মেনে নেয়। কোচের কি আরও শক্ত হওয়া উচিত ছিল না?

নাজমুল: এখানে ব্যাপারটি আলাদা। অনেক ঘটনা আছে, যেখানে সবাই একরকম করে সাড়া দেবে না। যেমন কয়েকটি ঘটনায় আমি নিজে হস্তক্ষেপ করেছি। সম্পূর্ণ বানোয়াট লেখা হয়েছে, যেটা আমি পরিস্কার করেছি। সবসময় তো সম্ভব নয়।

ক্রিকেটারদের মধ্যে থেকেও আছে। সবাই নয়, দুয়েকজন এরকম কথা বলছে যেটা তাকে কষ্ট দিয়েছে। আমি জানি না কি হয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকায় ছিলাম না। এখন ও যদি মনে করে আমার কথা শুনছে না, তাহলে এই দল আমি চালাব কেন? একটি উদাহরণ দিলাম। তো ওর থেকে লাভ কি? এটা একটা কারণ হতে পারে। ব্যক্তিগত কারণও থাকতে পারে।

আপনার সঙ্গে যেহেতু অনেক কথা হতো, ব্যক্তিগতভাবে আপনি কি আপসেট?

নাজমুল: আপসেট নই, একটু অবাক হচ্ছি। এটাতে মনে হচ্ছে, ইমোশনাল ইস্যু আছে এখানে। এতদিন ওকে দেখেছি ইমোশন ছাড়া। কিন্তু যেহেতু আমার সঙ্গেও কথা বলল না বা জানাল না, এবার হয়তো এমন কিছু একটা হয়েছে, যেটা নিয়ে আর কথাই বলতে চাচ্ছে না, বা হয়ত আমার মুখোমুখি হতে চাচ্ছে না।

তাকে নিয়ে তো আপনাদের একটি পরিকল্পনা ছিল, সেটিতে ধাক্কা লাগল কিনা?

নাজমুল: জানি না। আপনারা ভালো বলতে পারবেন। অনেকে খুশি হবে। মিডিয়া তো প্রচুর খুশি হওয়ার কথা, ও চলে যাচ্ছে। ধাক্কা কিনা জানি না। ক্রিকেটারদেরও অনেকে খুশি হবে, অনেকে বলবে ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। তবে আমি ব্যাক্তিগতভাবে মনে করি, আমাদের একটা পরিকল্পনা ছিল। সেটি বাধাগ্রস্থ হবে তো বটেই।

যে সময়টায় পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছে, তাকে নিয়ে বেশি লেখালেখি হয়েছে তার পরে। দলের ম্যানেজারের রিপোর্টে কি কিছু আছে?

নাজমুল: না, এ ব্যাপারে কিচ্ছু বলে নি।

মিডিয়ার কথা বললেন, মিডিয়া নিয়ে কোচ কি কিছু বলেছে?

নাজমুল: না বলেনি। এমনিতে সবসময় বলত, খেলোয়াড়রা যেসব কথা বলে, সেগুলো কেন বলে? এই প্রশ্ন তো আমাকে সবসময় করত। আমি ওকে নিয়ে কয়েকবার খেলোয়াড়দের সামনেও বসেছি। ও বলত, ‘এ রকম কথা কেন বলে, যেটি সম্পূর্ণ মিথ্যা! মিডিয়াতে বলে, এসব বলে কেন? এসব তো মিথ্যা!’

 

পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা নিয়ে সিদ্ধান্ত কবে হতে পারে?

নাজমুল: গ্রহণ করা না করার কিছু নেই। না করার কিছু নেই। কেউ না চাইলে জোর করতে পারি না। ও উপভোগ করত। সবসময় খেলা নিয়েই ছিল। আমরাও খুশি হয়েছি। এখন তার যদি সেটি ভালো না লাগে, তাহলে থাকবে কেন?

আর থাকতে চাইলে অবশ্যই থাকবে। যদি ওর সমস্যা শুনে মনে হয় যে সমস্যা সমাধান করা যায়, তাহলে চেষ্টা করব। না হলে নাই। তবে ও আরও কিছুদিন থাকলে, ভালো হতো। দর কষাকষির জন্য এমন করছে না, আমি নিশ্চিত। টাকা পয়সার কোনো ইস্যু নয়।

আপনারা কি কিছু আঁচ করতে পারছেন?

নাজমুল: না, পারছি না। তবে আমার মনে হয়, এই সিরিজে গিয়ে সে মনে কষ্ট পেয়েছে। কিসের জন্য আমি ঠিক জানি না। এটা কথা না বলা পর্যন্ত বলা মুশকিল।

নতুন কোচ নিয়োগ দেওয়া নিয়ে ভাবনা শুরু করেছেন?

নাজমুল: ওর সঙ্গে কথা না বলে শুরু করিনি। আমার ধারণা, এই মাসেই যোগাযোগ হবে। কথা বলেই ঠিক করি। অনেক সময় ইমোশনাল হয়ে মানুষ চিঠি পাঠিয়ে দেয়।

আর ও না থাকলে আরেকজন কোচ নিতেই হবে। আর শুধু দুম করে নিলে তো হবে না। আরেকজনকে পেতে হবে। ভালো মানের পাওয়া যায় কিনা দেখতে হবে।

বিদেশি কোনো যতক্ষণ না থাকে, ততক্ষণ তো স্থানীয় কোচ থাকতেই পারে। কিন্তু স্থানীয় কোনো কোচ স্থায়ীভাবে রাখার সুযোগ নেই।

 

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

8h ago