ফেসবুকে ইসলাম অবমাননার গুজব রটিয়ে হিন্দুবাড়িতে আগুন

পুড়ে যাওয়া বাড়ির সামনে বয়স্ক এক হিন্দু নারীর আহাজারি। ছবি: সংগৃহীত

ফেসবুকে ইসলাম ধর্ম অবমাননার গুজব রটিয়ে গতকাল রংপুরে হরকলি ঠাকুরপাড়া গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের আটটি পরিবারের অন্তত ৩০টি ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। হামলাকারীদের ঠেকাতে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ারগ্যাস ছুড়লে একজন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছেন।

ফেসবুকে ইসলাম অবমাননাকর পোস্টের একটি গুজবকে কেন্দ্র করে গতকাল বিকালে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে ও হিন্দু পাড়ায় গিয়ে হামলা চালানো হয়। হামলায় বাধা দেওয়া হলে তারা পুলিশের ওপরও চড়াও হয়। এতে অন্তত সাত জন পুলিশ আহত হয়েছেন।

এই ঘটনায় নিহত ব্যক্তির নাম হাবিবুর রহমান। গুলির আঘাত নিয়ে তিনি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। সেখানে আরও আহত ১১ জনের চিকিৎসা চলছে। গতকালের ঘটনায় পাঁচ জন আটক হয়েছেন।

গঙ্গাচড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিন্নাত আলী জানান, গত ৫ নভেম্বর টিটু চন্দ্র রায় নামের একজন ফেসবুকে ইসলাম ধর্ম অবমাননাকর পোস্ট দিয়েছেন এমন অভিযোগ তুলে পার্শ্ববর্তী লালচন্দ্রপুর গ্রামের আলমগীর হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী একই দিন গঙ্গাচড়া থানায় মামলা করেন।

রংপুরে দুর্বৃত্তদের আগুনে পুড়ছে বাড়ি। ছবি: সংগৃহীত

ধর্ম অবমাননায় অভিযুক্ত টিটু গত চার বছর থেকে নারায়ণগঞ্জে তার স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করেন। ত্রিশের কোঠায় তার বয়স। এ ব্যাপারে তার মন্তব্যের জন্য দ্য ডেইলি স্টারের পক্ষ থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। তার নামের ফেসবুক একাউন্ট তিনি ছাড়া অন্য কেউ ব্যবহার করেন কি না বা অ্যাকাউন্টটি হ্যাক করে এমন করা হয়েছে কি না সেটাও নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

সূত্রে জানা যায়, মামলার দিন ফেসবুক পোস্টটি নিয়ে লালচন্দ্রপুর গ্রামে ২০-২৫ জনের একটি বৈঠক হয়। ওই বৈঠক থেকেই শুক্রবার বিক্ষোভ করার পরিকল্পনা করা হয়।

জুম্মার নামাজের পর গতকাল শায়েলা শাহ বাজারে আশপাশের কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। সেখান থেকে একদল দুর্বৃত্ত লাঠি নিয়ে হরকলি ঠাকুরপাড়া গ্রামে হামলা চালিয়ে টিটুর বাড়িসহ আটটি হিন্দু পরিবারের ২০টি ঘরে আগুন দেয় ও প্রায় ১০টি বাড়ি ভাংচুর করে।

ঘটনাটির তদন্তে রংপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান বলেছেন, সাত কর্মদিবসের মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

গত বছর অক্টোবর মাসেও একই কায়দায় ফেসবুকে ইসলাম অবমাননার অভিযোগ তুলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় প্রায় ১০০টি বাড়ি ও পাঁচটি মন্দিরে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালানো হয়েছিল। চার বছর আগে কক্সবাজারের রামুতেও মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগ তুলে বৌদ্ধদের ওপর হামলা করা হয়। সেসময় ফেসবুকে ফটোশপ করা ছবি ব্যবহারের প্রমাণ পেয়েছিল দ্য ডেইলি স্টার।

Comments

The Daily Star  | English

Expatriates, young voters must be allowed to vote: Jamaat chief

Shafiqur holds interim government to its election deadline for April

49m ago