পর্দা উঠল কলকাতা ২৩তম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের

উৎসবের সূচনা করতে প্রদীপ জ্বালাচ্ছেন অভিনেত্রী কাজল। পাশে রয়েছেন বলিউডের সুপার স্টার অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান, মাইকেল উইন্টারকম, কুমার শানু এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। ছবি: স্টার

এক দিকে বলিউডের অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান, মহেশ ভাট, কামলা হাসান, কাজল, কুমার শানু। অন্যদিকে প্রজেনজিৎ, দেব, পাওলি দাম, মিমি কিংবা বর্ষীয়ান রঞ্জিত মল্লিক, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, মাধবী মুখোপাধ্যায়। বলিউড-টলিউডের মহাতারকাদের প্রায় সবারই উপস্থিতি ছিল ১০ নভেম্বর (শুক্রবার) কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে।

নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে এদিন সন্ধ্যায় প্রায় ২৫ হাজার দর্শকের উপস্থিতিতে প্রদীপ জ্বালিয়ে ২৩তম আন্তর্জাতিক আয়োজনের উদ্বোধন করেন সুপার স্টার অমিতাভ বচ্চন। এরপর একে একে শাহরুখ খান, কমল হাসান, কাজল, মহেশ ভাট সবাই উৎসবের সলতেতে আলো জ্বালেন।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের আরো উপস্থিত ছিলেন উৎসব কমিটির প্রধান রঞ্জিত মল্লিক, গৌতম ঘোষ, মাধবী মুখোপাধ্যায়, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, মাইকেল উইন্টারকম, ইন্দ্রানী হালদার, পাওলি দাম, মিমি চক্রবর্তী প্রমুখ তারকা-মহাতারকা। 

বাংলারে ঐতিহ্য-সংস্কৃতির ধারক হিসাবে অনুষ্ঠানের শুরুতে লোকসঙ্গীত, বাংলার নৃত্য ও যন্ত্রসঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। পুরো অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন তুই অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় ও যীশু সেনগুপ্ত।

অনুষ্ঠানের তারকাদের উত্তরীয় পরিয়ে এবং উপহার দিয়ে স্বাগত জানানোর পর শুরু হয় উৎসবের মুল আনুষ্ঠানিকতার।

উদ্বোধনী ভাষণে অমিতাভ বচ্চন ভারতীয় চলচ্চিত্রের গানের প্রসঙ্গে দীর্ঘ বক্তব্য রাখেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান দিয়ে শুরু করেন তিনি। বলেন, ভারতীয় চলচ্চিত্রের গানে বরাবরই সম্প্রীতির সুর উচ্চারিত হয়। উদাহরণ দিয়ে বিগ বি বলেন, ভারতীয় গানে নানা ধর্মের মানুষ একসঙ্গে কাজ করেছেন। একটি গানের পেছনে রয়েছে অনেক ধর্মের মানুষের ঐকান্তিক প্রয়াস। যেমন, ‘লাগন’ ছবির ‘রাধা ক্যায়সে না জ্বলে’- এই গানটি লিখেছিলেন জাভেদ আখতার, গেয়েছেন উদিত নারায়ণ এবং আশা ভোঁশলে। আবার ‘হাম দোনো’ ছবির ‘আল্লাহ তেরে নাম... ঈশ্বর তেরে নাম’- গানটি লিখেছিলেন সাহির লুধিয়ায়ানভি, সুর দিয়েছিলেন জয়দেব এবং গেয়েছিলেন লতা মঙ্গেশকর। যুগে যুগেই ভারতীয় গানে এইরকম সম্প্রীতিরই ঐকান্তিক প্রয়াস স্পষ্ট হয়েছে।

শাহরুখ খান বলেন, চলচ্চিত্র শুধু আনন্দ দেয় না বরং এই মাধ্যম পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা, পরিমিতিবোধ, সামাজিক শিক্ষা, সচেতনতা তৈরি ছাড়াও বিশ্বে কিংবা দেশে চলমান নানা ঘটনার প্রতিফলন ঘটায়।

কলকাতার আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব তাঁর ‘ভালোবাসা উৎসব’ বলেও জানান শাহরুখ খান। এদিন বাংলাতে বক্তব্য রাখেন তিনি। বলেন, আগামী বছর আমি লিখিত বক্তব্য নয় পুরাদস্তুর বাংলায় বলবো আর অবশ্যই ধূতি-পাঞ্জাবি পরে আসবো।

কাজল বললেন, আমি গর্বিত কলকাতায় এই ভালবাসার উৎসবে আসতে পেরে। কলকাতাকে ভারতের সৃষ্টি ও কৃষ্টির প্রাণকেন্দ্র বলেও দাবি করেন অভিনেত্রী কাজল।

পরিচালক মহেশ ভাট উৎসবের ভূয়সী প্রশংসা করেও কিছুটা আক্ষেপ করেন ভারতীয় সেন্সরবোর্ড নিয়ে। তিনি বলেন, ভারতীয় সেন্সর বোর্ড কিছু কিছু বিষয় বাধ্য করছে। স্বাধীন ভাবে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।

দক্ষিণী অভিনেতা কমল হাসান বলেন, এটা আসলেই প্রেমের অনুষ্ঠান। কলকাতা প্রিয় শহরগুলোর মধ্যে একটা। ভালবাসি বাংলা ভাষাকেও। আর বর্ষীয়ান অভিনেত্রী সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় বলেন, বারো মাসের তেরো পার্বণ নয়, আরো একটি পার্বণ যুক্ত হয়েছে।

অনুষ্ঠানের সভাপতির ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি রসিকতা করে বলেন, শুধু রাজনৈতিক কাজ করলেই হবে না। ঝাণ্ডা নিয়ে ঘুরলে মাথা গরম হয়। তাই ঝাণ্ডা ফেলে এই ধরণের উৎসব করে মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে।

তাঁর মতে, ভারতের এই ধরণের চলচ্চিত্র উৎসব আর দ্বিতীয়টি নেই। কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের আগামী আয়োজনে আগত অতিথিদের ধূতি-পাঞ্জাবি উপহার দেওয়া হবে এবং তারা প্রত্যেকেই তা পরিধান করেই মঞ্চে আসবেন বলেও মমতার অনুরোধ।

২৩তম এই আয়োজনের উদ্বোধনী ছবি দেখানো হয় ইরানের পরিচালক মোস্তাফা তাঘিজাদের ‘ইয়েলো’। স্থানীয় ছয়জন তরুণ বিজ্ঞানীর দেশত্যাগের কাহিনী নিয়ে নির্মিত এই চলচ্চিত্র সবাইকে মুগ্ধ করবে বলে আশা করছেন আয়োজকরা।

উৎসবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন পরিচালক আবু সাঈদ।  ‘এক কবির মৃত্যু’ উৎসবের একমাত্র বাংলাদেশি চলচ্চিত্র নির্বাচিত হয়েছে।

এছাড়া ৫৩ দেশের মোট ১৪৩টি চলচ্চিত্র এই উৎসবে জায়গা পেয়েছে এবার। এর মধ্যে ভারতে নয় এমন ছবির সংখ্যা ৯৩টি। এবারের উৎসবের ‘ফোকাস কান্ট্রি’ ব্রিটেন।

বরাবরের মতোই কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে এবার ৬৭টি স্বল্প দৈর্ঘ্যরে ছবি এবং ৫১টি তথ্যচিত্র প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কলকাতার নন্দন প্রেক্ষাগৃহ ছাড়াও উৎসবের নির্বাচিত চলচ্চিত্রগুলো দেখা যাবে কলকাতা ও শহরতলীর ১২ টি সিনেমা হলে।

Comments

The Daily Star  | English

‘Polls delay risks return of autocracy’

Says Khandaker Mosharraf after meeting with Yunus; reiterates demand for election by Dec

1h ago