রসগোল্লার অধিকার পেলো পশ্চিমবঙ্গ
![](https://bangla.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/feature/images/rasgulla.jpg?itok=jyi-c1C8×tamp=1510645855)
রসগোল্লার মালিক কে? পশ্চিমবঙ্গ না উড়িষ্যা। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের শেষে এই প্রশ্নের উত্তর এলো মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) সকালে। ভারত সরকারের যে সংস্থা রাজ্যগুলোর নিজস্ব সম্পদের স্বীকৃতি দেয় সেই জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন অব ইন্ডিয়া সংক্ষেপে জিআই লিখিত সনদ দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে উড়িষ্যা নয়, পশ্চিমবঙ্গই রসগোল্লার প্রকৃত মালিক।
রসগোল্লার অধিকার পাওয়ায় খুশি সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, নবনীতা দেবসেন, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, অভিনেতা বিশ্বনাথ বসু থেকে মিষ্টি বিশেষজ্ঞ হরিপদ ভৌমিকের মত ব্যক্তিবর্গ।
দুধ থেকে ছানা কেটে সেই ছানার গোল্লা তৈরি করে রসে ডুবিয়ে রাখার পর যে সুস্বাদু রসগোল্লা তৈরি হয় সেটিকে উড়িষ্যার মানুষ এতদিন নিজেদের আবিষ্কার বলে দাবি করতেন। রাজ্যটির সরকার উল্টো রথের দিনটিকে ‘রসগোল্লা ডে’ হিসেবে পালন করত।
পুরির জগন্নাথ দেবের মন্দিরে আদিকাল থেকে এই রসগোল্লারই ভোগ দেওয়া হয়। তাই উড়িষ্যার মানুষ মনে করেন রসগোল্লার অধিকার শুধু তাদেরই রয়েছে। এমন ধারণা থেকে বছর দুয়ের আগে তারাই প্রথম ভারতের রেজিস্ট্রেশন সংস্থার দ্বারস্থ হয়ে রাজ্যের অধিকার হিসেবে রসগোল্লাকে পেটেন্ট দেওয়ার দাবি জানান।
এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই নড়েচড়ে বসে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। উড়িষ্যার ওই আবেদনের তীব্র আপত্তি জানিয়ে তারাও নিজেদেরকে রসগোল্লার অবিষ্কারক বলে দাবি করে। দাবি পাকাপোক্ত করতে রসগোল্লার ইতিহাস বের করার জন্য কমিটিও গড়া হয়। সেই কমিটির দেওয়া বিস্তারিত ইতিহাস নিয়ে লড়াইয়ের নামে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
রসগোল্লার মালিকানা নির্ধারণ করতে ময়দানে নামে জিআই কর্তৃপক্ষও। কমিটি গঠন করে প্রতিনিধি দল পাঠানো হয় দুই রাজ্যে। প্রায় ছয় মাস ধরে দুই রাজ্যের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে, রাজ্য সরকারের কাছ থেকে তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করে এরপরই তারা চূড়ান্তভাবে রসগোল্লার মালিকানা নিশ্চিত করে।
উড়িষ্যায় যে রসগোল্লা পাওয়া যায় সেটি লালচে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের রসগোল্লা সাদা রঙের। দুধ থেকে তৈরি হওয়া ছানা দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মিষ্টি প্রস্তুতকারীরাই প্রথম রসগোল্লার আবিষ্কার করেন। শেষমেশ এই যুক্তিতেই সিলমোহর পড়ে।
রাজ্য সরকার জিআইয়ের কাছে তথ্য-প্রমাণ দিয়ে দাবি জানিয়েছিলো যে, রসগোল্লা আবিষ্কার করেন উত্তর কলকাতার বাগবাজারের নবীন চন্দ্র দাস। ১৮৬৪ সালে তিনি সেখানে তার বাড়িতে মিষ্টির দোকান খোলেন। এর দুই বছর পর ১৮৬৮ সালে প্রথম গরুর দুধ থেকে ছানা কেটে সেই ছানা রসে ডুবিয়ে রসগোল্লা তৈরি করেন। এরপর থেকেই আস্তে আস্তে অবিভক্ত ভারতে ছড়িয়ে পড়ে রসগোল্লা মিষ্টি।
এই বিষয়ে নবীন চন্দ্র দাস পরিবারের সদস্য ধীমান দাস বলেন, রসগোল্লার আবিষ্কারক নবীন চন্দ্র দাস হলে এই রাজ্যের বাসিন্দা হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য এর পেটেন্ট পাওয়ার অধিকার রাখে।
আর নবীন চন্দ্র দাস রসগোল্লার আবিষ্কার হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়াতেই খুশি আমরা- ধীমান দাস এই কথাও যুক্ত করেন।
অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বলেন, মিষ্টি নিয়ে লড়াই করলে মিষ্টি আর মিষ্টি থাকে না। তেতো হয়ে যায়। রসিকতা করে তিনি বলেন, রসগোল্লা বাঙালির আবিষ্কার এটা গর্বের বিষয়, এখন উড়িষ্যার মানুষ বেশি বেশি রসগোল্লা খাবেন এটিই আমার অনুরোধ।
সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, ভালো লাগছে। রসগোল্লা নিয়ে লড়াই ব্যাপারটি ভাবতেই মজা পাচ্ছি। যাই হোক, বাংলার হাতে অধিকার এলো। ভালো লাগলো।
সংগীতশিল্পী অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় মনে করেন, বাগবাজারের রসগোল্লার গানটির লাইনে লাইনে রসগোল্লার ইতিহাস রয়েছে।
বিশ্বনাথ বসুর ভাষায়, বাংলার ঐতিহ্য রসগোল্লা। আগে জামাইয়ের মুখ রসগোল্লার মতো চাইতেন মেয়ের বাবা-মায়েরা। এখনও জামাইয়ের হাতে মোবাইল থাকলেও একসময় জামাইদের হাতে রসগোল্লার হাড়ি ছিল। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয় বাংলাদেশের মানুষের কাছেও রসগোল্লাই প্রিয়।
মিষ্টি বিশেষজ্ঞ হরিপদ ভৌমিক মনে করেন, এই রায় বাংলার পক্ষেই যাবে সেটি আমরা সবাই জানতাম। কেউ যদি বলে কলকাতা শহরটি আমাদের রাজ্যে তাই বলে কলকাতা কি উড়িষ্যার হয়ে যাবে নাকি? রসগোল্লার বাংলা, বাংলার রসগোল্লা!
রসগোল্লার মালিক হয়ে তাই বিখ্যাত সেই, “আমি কলকাতার রসগোল্লা...”, না হয়ে এখন গাইতেই পারেন “আমি পশ্চিমবঙ্গের রসগোল্লা...।”
Comments