পোলার্ড-জহুরুলের ব্যাটে ঢাকার রোমাঞ্চকর জয়

শেষ দুই ওভারে দরকার ছিল ১৯ রান। ১৩ রান নিলে ম্যাচ তখন অনেকটাই ঢাকার দিকে। শেষ ওভারে দরকার ছিল ৬ রান। প্রথম চার বল থেকে এল মাত্র ২ রান। পঞ্চম বলটি রিভার্স সুইপ করে বল বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে দেন অমি। ঢাকা ডায়নামাইটস জিতে যায় ৪ উইকেটে। ৩৯ বলে ৪৫ রান করে অপরাজিত থাকেন অমি।
ঢাকা ডায়নামাইটস
৪৫ রানের ইনিংস খেলার পথে অমি। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

দুই বলে দরকার চার রান। আগের চার বলের মতো কার্লোস ব্রথওয়েটের বলটা ইয়র্কার লেন্থেরই ছিলো। জহুরুল ইসলাম অমি রিভার্স স্কুপ খেলে দিলেন। বল চলে গেল বাউন্ডারিতে। উল্লাসে মাতল ঢাকা। বার কয়েক রঙ পালটানো ম্যাচে ৪ উইকেটে খুলনা টাইটান্সকে হারালো বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। 

১৫৭ রানের টার্গেটে নেমে শুরুতে ব্যাটিং বিপর্যয়। সেখান থেকে কাইরন পোলার্ডের তান্ডব। তার আউটের  পর ফের খেলায় ফিরে খুলনা। জহুরুল ইসলাম অমি খুলনার দিকে হেলে পড়া ম্যাচ আবার টেনে আনেন ঢাকার দিকে। শেষ দুই ওভারে দরকার ছিল ১৯ রান। ১৩ রান নিলে ম্যাচ তখন অনেকটাই ঢাকার দিকে। শেষ ওভারে দরকার ছিল ৬ রান। প্রথম চার বল থেকে এল মাত্র ২ রান। তবে এরপরের বলেই সাকিবদের সকল চিন্তা দূর করেছেন ডাহহাতি জহুরুল। 

১৫৭ রান মিরপুরের স্লো পিচে চ্যালেঞ্জিং স্কোরই। সেটা আরও পাহাড়সময় হয়ে গেল দ্রুত উইকেট পতনে। আইপিএলে নিয়মিত ওপেনিং করা সুনিল নারিন উঠলেনে এভিন লুইসের সঙ্গে। প্রথম ওভারে এক চার মেরেই লুইস কুপোকাত। আবু জায়েদ রাহির বলে ক্যাচ দিয়েছেন মিড অফে। আগের ম্যাচের তান্ডব থেকেই কিনা আফ্রিদিকে নামানো হয়েছিল ওয়ানডাউনে। এবার ব্যর্থ তিনি। দুই বলে ১ রান করে আউট হয়েছেন শফিউলের বলে। সিলেটে ব্যাটিং সামর্থ দেখিয়েছিলেন ক্যামেরন ডেলপোর্ট। ঢাকার মাঠে ব্যাটিং পেয়ে করেছেন ২ রান। আর্চারের বলে স্টাম্প উড়ে যায় তার। আরেক প্রান্তে উইকেট পড়া দেখে ভড়কে গিয়েছিলেন সুনিল নারিন। ৭ রান করতে লেগে যায় তার ১৫ বল। ১৬তম বলে আকিলা ধনঞ্জয়াকে মারতে গিয়েছিলেন। টাইমিংয়ে গোলমাল হওয়া বল উঠে আকাশে। মিড অন থেকে পেছনে অনেকখানি দৌড়ে বাউন্ডারি লাইনের কাছে চোখ জুড়ানো ক্যাচ নেন মাহমুদউল্লাহ। ২৪ রানে ৪ উইকেট খুইয়ে তখন রীতিমতো কাঁপছে ঢাকা।

ঢাকার চাকা টেনে নেওয়ার ভার তখন অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের উপর। তিনি টানতে পারলেন না বেশিক্ষণ। অধিনায়ককে ছেঁটেছেন আরেক অধিনায়ক। ৩ চারে ১৫ বলে ২০ রান করে মিড উইকেটে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। ৪১ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলা ঢাকার পক্ষে বাজি ধরা লোকের যখন অভাব তখনই শুরু পোলার্ড তান্ডব। মাত্র ১৯ বলে ছয় ছক্কায় ফিফটিতে পৌঁছান ক্যারিবিয়ান দানব। পোলার্ডের তান্ডব থামিয়েছেন শফিউল। ২৪ বলে ৫৫ রান করে থামেন তিনি। ততক্ষণে অবশ্য জয়ের অনেক কাছে চলে গেছে সাকিবের দল। পোলার্ড ঝড়ের বেশিরভাগটাই গেছে মাহমুদউল্লাহর উপর দিয়ে। তার দ্বিতীয় ওভারে চার ছক্কা মেরে বসেন পোলার্ড।  

অথচ ম্যাচের শুর ইঙ্গিত দিচ্ছিল আরেকটি ম্যাড়ম্যাড়ে ম্যাচের। টস হেরে ব্যাটিং পাওয়া খুলনা টাইটান্স প্রথম ১০ ওভারে ৫০ রানও করতে পারেন। উলটো খুইয়েছে তিন উইকেট। তবে কার্লোস ব্র্যাথওয়েট ছিলেন বলে রক্ষা। তার ২৮ বলে ৬৪ রানের তাণ্ডবে ২০ ওভারের শেষে ঠিকই দেড়শ ছাড়িয়ে যায় দলের সংগ্রহ।

ওপেন করতে নামা  কিলিঞ্জার শুরু করেছিলেন শ্লথ গতিতে। দুই চার মেরে জড়তা কাটানোর পরই ক্যাচ তুলে দেন সাকিব আল হাসানের বলে। ওয়ানডাউনে নামা ধীমান ঘোষ ৯ বল নষ্ট করে ২ রান করে ক্যাচ দিয়েছেন আবু হায়দার রনিকে। নাজমুল হোসেন শান্ত থিতু হয়েছিলেন। তবে আগাতে পারেননি। রান বাড়ানোর চাপে কাটা পড়েছেন। নারিনকে এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে হয়েছেন স্টাম্পিং। টপ অর্ডারে তিন ব্যাটসম্যানের মন্থর ব্যাটিংয়ে বাড়ানো চাপ সরাতে ক্রিজে এসেই সচল ছিলেন  মাহমুদউল্লাহ। শহিদ আফ্রিদিকে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন উইকেটের পেছনে। এরপরে টাইটান্স ইনিংসে অক্সিজেনের যোগান দেন কার্লোস ব্র্যাথওয়েট ও রাইলি  রুশো। তাদের ৩২ বলে ৫০ রানের জুটিতে জেগে উঠে ঝিমিয়ে পড়া গ্যালারিও। ৩০ বলে ৩৪ রান করে রুশো ফিরে গেলেও দলকে লড়াইয়ের পূঁজি পাইয়ে দেন ব্র্যাথওয়েট।

৪ ম্যাচে তিন জয় নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের এক নম্বরে উঠে গেল ঢাকা। সমান ম্যাচে দুই জয় পেয়ে চারে থাকছে মাহমুদউল্লাহর দল। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

খুলনা টাইটান্স:১৫৬/৫ (কিলিঞ্জার ১০, শান্ত ২৪,ধীমান ২, রুশো ৩৪,  মাহমুদউল্লাহ ১৪,ব্রাথওয়েট ৬৪*, আরিফুল ৪* ;  রনি ২/৩৯, নারিন ১/২২)

ঢাকা ডায়নামাইটস: (লুইস ৪,নারিন ৭, আফ্রিদি ১, ডেলপোর্ট ২, সাকিব ২০, জহুরুল ৪৫*, পোলার্ড ৫৫,মোসাদ্দেক ১৪* ;শফিউল ২/২৪, রাহি ১/২৪)  

টস:  ঢাকা ডায়নামাইটস

ফল: ঢাকা ডায়নামাইটস ৪ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: জহুরুল ইসলাম অমি। 

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

5h ago