খেলা

হাসান আলির তোপের পর কুমিল্লার রোমাঞ্চকর জয়

শেষ ওভারে গিয়ে ৪ উইকেটে জিতেছে তামিমের দল। বোলিংয়ের মতো ব্যাট হাতেও কুমিল্লার নায়ক আরেক পাকিস্তানি। টানটান উত্তেজনায় দলকে উদ্ধার করে মাঠ ছেড়েছেন শোয়েব মালিক।
Shoaib Malik
৫৪ রান করে অপরাজিত ছিলেন মালিক। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

হাসান আলির তোপে ১২৮ রানের গুড়িয়ে গিয়েছিল ঢাকা। কুমিল্লা পেয়েছিল হেসেখেলে জেতার টার্গেট। ঢাকার বোলারদের কামড়ে ওই রানেই ছড়িয়েছে উত্তেজনা। শেষ ওভারে গিয়ে ৪ উইকেটে জিতেছে তামিমের দল। বোলিংয়ের মতো ব্যাট হাতেও কুমিল্লার নায়ক আরেক পাকিস্তানি। টানটান উত্তেজনায় দলকে উদ্ধার করে মাঠ ছেড়েছেন শোয়েব মালিক। 

সোমবার মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে ঢাকা ডায়নামাইটসকে হারিয়ে টেবিলের এক নম্বরে উঠে গেছে তৃতীয় আসরের চ্যাম্পিয়নরা। 

মাথার সামনে মাত্র ১২৯ রানের টার্গেট। নির্ভারে হয়েই তাই নেমেছিলেন তামিম ইকবাল-লিটন দাস। প্রথম ওভারেই আমিরকে পেটাতে শুরু করেন তামিম । এলো ১৫ রান। পরের ওভারে আবু হায়দার রনির স্টাম্পের বল কোথায় যে মারতে গেলেন লিটন, তিনিই জানেন। আগের ম্যাচের মতো একই কায়দায় বোল্ড। কোন রানই করতে পারেননি এবার।  আমিরের মতো নারিনকেও পেটানোর মতি ছিল তামিমের। প্রথম বলে ছক্কা হাঁকানোর পরই বেরিয়ে এসে তেড়েফুঁড়ে মারতে গেলেন। লাইন মিস করায় স্টাম্পিং। ২৩ রানে পড়ল ২ উইকেট। 

প্রাথমিক বিপর্যয় সামলাতে গিয়ে ইমরুল কায়েস ও শোয়েব মালিক যেন নিজেদের পুরোটাই গুটিয়ে ফেলেছিলেন। মন্থর ব্যাটিং করে বাড়াচ্ছিলেন চাপ। বল নষ্ট করে পরে তা পোষাতেও পারেননি ইমরুল। ২৪ বলে ২০ রান করে সাদ্দামের বলে লং অফে দিয়েছেন সহজ ক্যাচ। তবে এক রান আগেই আউট হতে পারতেন তিনি। সাকিবের বলে তার পরিষ্কার এলবিডব্লিও আবেদনে সাড়া দেননি লঙ্কান আম্পায়ার রেনমোর মার্টিনেজ। তাতে ক্ষ্যাপে গিয়ে চেঁচিয়েছেন সাকিব। ওদিকে শেষ পর্যন্ত টিকে ছিলেন মালিক, স্ট্রাইক রোটেট করতে হিমশিম খেয়েছেন। খুব একটা বড় শটও খেলতে পারছিলেন না শুরুতে। পরে তা পুষিয়ে গেছে দল জেতায়।  

মালিকের মন্থর ব্যাটিংয়ের পরও ম্যাচ হেলে ছিল কুমিল্লার দিকে। শেষ স্পেলে ফিরে পেসের ঝাঁজ দেখিয়ে জমিয়ে তুলেন মোহাম্মদ আমির। জস বাটলার ও মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনকে কুপোকাত করে ম্যাচের রাশ নিয়ে আসেন ঢাকার দিকে, ফিরে আসেন উত্তেজনা। সে উত্তেজনা প্রশমন করেছেন মালিকই। মন্থর ব্যাটের দেনা পুষিয়েছেন দারুণ ফিনিশিংয়ে। ৫৩ বলে ৫৪ রান করে অপরাজিত ছিলেন এই অলরাউন্ডার। 

এর আগে হাসান আলির জোড়া আঘাত দিয়ে শুরু, মাঝে সুনিল নারিনের ঝড় শেষ আবার হাসান আলির জোড়া আঘাত। ঢাকা ডায়নামাইটসের ইনিংসের মোটামুটি ছবি এটুকুই। ১২৮ রানের মধ্যে ৭৬ রানই নারিনের। বিশ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ঢাকাকে রীতিমতো গুড়িয়ে দেন হাসান আলি। পাঁচটাই বোল্ড। সবগুলোই ইনস্যুয়িং ইয়র্কারে। 

বিপিএলে প্রথম খেলায় নেমে বিবর্ণ ছিলেন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাজিমাত করা পাকিস্তানি পেসার। দ্বিতীয় ম্যাচে নেমে পেলেন তাল। টস জিতে ব্যাট করতে নামা ঢাকার দুই উইকেট তুলে নেন এক ওভারেই। দুটিই ফুললেন্থের ইয়র্কার বল, হালকা স্যুয়িং করে ভেতরে ঢুকে দুটিই ভেঙেছে স্টাম্প।  বাঁহাতি লুইসের গেছে লেগ স্টাম্প। ওয়ানডাউনে নামা ডানহাতি মেহেদী মারুফের উড়ে যায় অফ স্টাম্প। 

বারবার বদলানো ওপেনিং জুটিতে এদিন আবার নেমেছিলেন সুনিল নারিন। তেতে থাকা হাসান আলিকেই পিটিয়ে শুরু করেন তিনি। পরে খেলেছেন বুদ্ধিদীপ্ত দারুণ সব শট। ঝড়ো ফিফটি তুলে নিয়ে ঢাকার ইনিংসের অক্সিজেন জোগান দেন তিনিই। সঙ্গী সাঙ্গাকারা ছিলেন অনেকটাই মন্থর। তৃতীয় উইকেটে এই দুজনের জুটিতে উঠে ৯১ রান, যার মাত্র ২৮ এসেছে সাঙ্গাকারার ব্যাট থেকে। থিতু হয়ে বড় শট খালির দাবি তীব্র হতেই রানআউটে কাটা পড়েন তিনি। ওদিকে সেঞ্চুরির দিকেই এগুচ্ছিলেন নারিন। ৭ চারের সঙ্গে ৫ ছক্কায় গ্যালারি মাতিয়ে রাখা ক্যারিবিয়ান বাঁহাতি আউট হয়েছেন তামিমের দারুণ লো ক্যাচে। সাইফুদ্দিনের ফুলটস বল ঠিকমত টাইমিং করতে পারেননি নারিন। এক্সট্রা কাভারে লাফিয়ে তা হাতে জমান কুমিল্লার অধিনায়ক। 

নারিনের আউটের পরই ঢাকার ইনিংস যেন তাসের ঘর। তিন উইকেটে ১১৪ থেকে ১২৮ রানেই অলআউট সাকিবরা। 

আগের ম্যাচে ঝড় তোলা কাইরন পোলার্ড এদিন ফিরেছেন ১ রান করে। রশিদ খানের লেগ স্পিনে ভুগতে থাকা পোলার্ড রান নেওয়ার জন্য এলোপাথাড়ি দৌঁড় দিয়ে হয়েছেন রানআউট। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরেই মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে আরেকটি ফুললেন্থ ইয়র্কারে বোল্ড করে দেন হাসান আলি। 

রশিদ খানের পরের ওভারে খাবি খেতে খেতে এলবিডব্লিও হয়েছেন জহুরুল ইসলাম। সাইফুদ্দিনের ইয়র্কার সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন সাকিব। নিজের শেষ ওভার করতে এসে আরও ভয়ংকর হাসান আলি। সাদ্দাম ও রনিকে আরও দুই ফুললেন্থ ইয়র্কার দিয়ে স্টাম্প উপড়ে করেছেন উল্লাস। পাঁচখানা উইকেট নিয়ে কুমিল্লার উৎসবের মধ্যমনি তখন তিনি। ম্যাচ শেষে থেকেছে তার হাসি। সেরা পুরষ্কারে তার কোন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না।  

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ঢাকা ডায়নামাইটস:১২৮/১০ (নারিন ৭৬, লুইস ৭, মারুফ ০, সাঙ্গাকারা ২৮, পোলার্ড ১, সাকিব   , মোসাদ্দেক ১, জহুরুল ২,   সাদ্দাম ১, আমির,  রনি ০ ; মেহেদী ০/৩৩  , হাসান আলি ৫/২০  , রশিদ ১/১৭, সাইফুদ্দিন ২/২৯, আল-আমিন ০/১২, মালিক ০/১৬) 

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ১২৯/৬  (তামিম ১৮, লিটন ০, ইমরুল ২০, মালিক ৫৪* , ব্রাভো ১২, বাটলার ১১, সাইফুদ্দিন ৪, মেহেদী ৩*,  ; নারিন ২/১৭, আমির ২/২৮) 

টস: ঢাকা ডায়নামাইটস

ফল: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ৪ উইকেটে জয়ী। 

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: হাসান আলি। 

 

Comments

The Daily Star  | English

Cyber Security Agency exists only in name

In December 2018, when the Digital Security Agency was formed under the Digital Security Act, it was hoped that the cybersecurity of important government sites with critical citizen data such as the Election Commission’s national identity database and the Office of the Registrar of Birth and Death  would be robust.

8h ago