আরিফুল ঝড়ে রোমাঞ্চকর ম্যাচ জিতল খুলনা

সব সমীকরণ পালটে দেওয়ার পণ নিয়েই যেন নেমেছিলেন আরিফুল হক। ১৮ ও ১৯তম ওভার থেকে আরিফুল ঝড়ে খুলনা নিয়ে নেয় ২৬ রান। ম্যাচের রঙ যায় বদলে
Ariful Haque
খুলনাকে জিতিয়ে ছুটছেন আরিফুল। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

১২৮ রানে ৮ উইকেট হারানোর পর মনে হচ্ছিল হারতেই যাচ্ছে খুলনা। তবে সব সমীকরণ পালটে দেওয়ার পণ নিয়েই যেন নেমেছিলেন আরিফুল হক। ১৮ ও ১৯তম ওভার থেকে আরিফুল ঝড়ে খুলনা নিয়ে নেয় ২৬ রান। ম্যাচের রঙ যায় বদলে।  শেষ ওভার থেকে দরকার ৯ রান।  স্মিথের করা প্রথম দুই বল থেকেই ছক্কা-চার মেরে খেলে শেষ করে দেন আরিফুল। হারতে বসা ম্যাচ খুলনা জিতে যায় ২ উইকেটে।  

ব্যাট হাতে কাজটা সেরে রেখেছিলেন ডোয়াইন স্মিথ, মুশফিকুর রহিমরা। রাজশাহীর বোলাররাও চেপে ধরে খেলায় দাপট দেখিয়েছিলেন। ১৬৭ রান তাড়ায় টাইটান্সদের পক্ষে কেবল মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে দেখা গিয়েছিল তাগদ। জেতার একদম কিনারে চলে গিয়েছিল রাজশাহী। শঙ্কায় পড়া দলকে উদ্ধার করে সবাইকে ছাপিয়ে আরিফুলই বনে যান আসল নায়ক।

খুলনাকে অবিশ্বাস্য ম্যাচ জিতিয়ে এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান অপরাজিত থাকেন ১৯ বলে ৪৩ রান করে। চারটি চার ও দুই ছক্কা মেরেছেন তিনি।

Ariful Haque
আরিফুলের ম্যাচ জেতানো শট । ছবি: ফিরোজ আহমেদ
মঙ্গলবার মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এই জয়ে টেবিলের তিন নম্বরে উঠে গেল খুলনা। সাত ম্যাচ চার হার নিয়ে কেবল চিটাগাং ভাইকিংসের উপরে আছে রাজশাহী।

মিরপুরে স্লো-লো পিচে ১৬৭ রান বেশ বড়সড়ো টার্গেটই। ওই রান তাড়ায় শুরুটা ভালো হয়নি খুলনার। মোহাম্মদ সামির তৃতীয় বলটাই স্টাম্পে টেনে নিয়ে এসে ফেরেন চাডউইক ওয়ালটন। সামির পরের ওভারে ওয়ানডাউনে নামা সিকুগে প্রসন্ন উদ্ভট শট খেলে হয়েছেন এলবিডব্লিও।

১৩ রানে দুই উইকেট হারানো দলকে দিশা দিয়েছে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর ব্যাট। স্ট্রাইক নিয়ে সামাল দিয়েছেন পরিস্থিতি, খেলেছেন চোখ জুড়ানো শট। ওপেন করতে নেমেও স্ট্রাইক পাচ্ছিলেন না রাইলি রুশো। তবে দুজনের জুটি এগুচ্ছিল ভালোই। ৩০ বলে জুটিতে আসে ৫০ রান, যারমধ্যে মাহমুদউল্লাহ একারই ৩৬। তাদের ৬৭ রানের জুটি ভেঙ্গেছে রুশোর আউটে। মিরাজকে ইনসাইড আউট শটে চার মারার পরের বলেই একই শটে সীমানার বাইরে পাঠান। কিন্তু ওই বল হওয়ার সময় মাঠের সাউন্ড সিষ্টেম বাজতে থাকায় আম্পায়ার বল ডেড দিয়ে দেন। এতে অসন্তোষ জানিয়েছিলেন প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান। পরের বলে হতাশা থেকেই একই শটের পুনরাবৃত্তি করতে গিয়ে ক্যাচ দেন মিড অফে। এক উইকেট ডেকে নিয়ে এসেছে আরেক উইকেট। যুব এশিয়া কাপ খেলে আসা  আফিফ হোসেন আউট হন ৫ রান করে।

কার্লোস ব্র্যাথওয়েটকে নিয়ে জয়ের দিকে যাচ্ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। ৩৭ বলে তুলে নিয়েছিলেন আসরের প্রথম  ফিফটি। তাকে দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেন হোসেন আলি। বেরিয়ে যেতে থাকা ম্যাচ তখন আবার মুঠোয় জমায় রাজশাহী। ছন্দে না থাকায় নাজমুল হোসেন শান্ত নিচের দিকে নেমেও রান পাচ্ছেন না। এবারও মাত্র ৪ রান করে স্মিথের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি।

তবু ম্যাচ জিততে শেষ পাঁচ ওভারে ওভারপ্রতি প্রায় ১০ রান করে নেওয়ার সমীকরণে চলে এসেছিল খুলনা। টাইটান্সদের আশা হয়ে ক্রিজে ছিলেন কার্লোস ব্রাথওয়েট। ১৬তম ওভারে ব্র্যাথওয়েটকে বোল্ড করে দিয়ে আশার বেলুন ফুটো করেন দেন জেমস ফ্রাঙ্কলিন।

শেষ তিন ওভারে দরকার ৩৬ রান। হাতে আছে মাত্র দুই উইকেট। স্বীকৃত ব্যাটসম্যান বলতে আরিফুল একাই। খুলনার আশা আবার ফিরিয়ে আনেন তিনিই। ৮ উইকেট পড়ার পরও চার-ছয় পিটিয়ে জমিয়ে তুলেন খেলা। শেষ দুই ওভারে দরকার দাঁড়ায় ১৮ রানের। আরিফুল ওই সমীকরণ মিলিয়েছেন দারুণভাবে।

Khulna Titans
হিরো আরিফুলকে ঘিরে খুলনার উল্লাস, ছবি: ফিরোজ আহমেদ
এর আগে টস হেরে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়া রাজশাহী কিংসকে উদ্ধার করেন ডোয়াইন স্মিথ ও মুশফিকুর রহিম। এই দুজনের ফিফটিতে লড়ার মতো পূঁজি পায় কিংসরা।

চোট সমস্যায় আগের ম্যাচে মাত্র তিন বিদেশি নিয়ে খেলেছিল রাজশাহী কিংস। দলের সঙ্গে এই ম্যাচে যোগ দিয়েছেন ডোয়াইন স্মিথ। মুমিনুলের সঙ্গে ওপেনিং সঙ্গী তিনিই। নতুন সঙ্গী পেয়ে ছন্দে থাকা মুমিনুল এদিন খেই হারালেন। জুনায়েদ খানের বলে খোঁচা মেরে স্লিপে দেন সহজ ক্যাচ। ওয়ানডাউনেও নতুন মুখ রাজশাহী। প্রায় অচেনা  ইংলিশ ড্যানিয়েল ডারমুন্ড বিপিএলের ডেব্যুতে পেয়েছেন ডাক। জুনায়েদ খানের মুখোমুখি দ্বিতীয় বল টেনে নিয়ে এসেছেন স্টাম্পে।

আগের দুই ম্যাচে মাত করা জাকির হাসানও এদিন ফিরলেন কোন রান না করেই। আবু জায়েদ রাহির বল মিড উইকেটে তুলে দিয়েছিলেন বাঁহাতি জাকির। শ্রীলঙ্কান সিকুগে প্রসন্ন উলটো দিকে লাফিয়ে নেন চোখ ধাঁধানো ক্যাচ।

২১ রানে তিন উইকেট হারানো কিংসরা পথ হারায়নি স্মিথের জন্য। সিপিএলে দুই সেঞ্চুরি করে আসা ক্যারিবিয়ান ডানহাতি নেমেই তুলেছেন ঝড়। পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে এলোমেলো করে দেন টাইটান্স বোলিং। মাত্র ২৯ বলে ছক্কা মেরে পৌঁছান ফিফটিতে। তার সঙ্গে জোট বেধে রাজশাহীকে টানার দায়িত্ব নেন মুশফিকুর রহিম। দুজনের ৭৬ রানের জুটি থামে স্মিথের বিদায়ে। আফিফের বল ডিম মিড উইকেট দিয়ে উড়াতে দিয়ে স্মিথ ধরা পড়েন বাউন্ডারি লাইনে। ততক্ষণে অবশ্য ৭ চার আর চারখানা ছক্কায় ৩৬ বলে ৬২ রানের ইনিংসে  রাজশাহীকে বড় সংগ্রহের ভিত পাইয়ে দিয়ে যান। ওদিকে সঙ্গী হারিয়ে থামেননি মুশফিক। এবারের আসরে অবশেষে পেয়েছেন প্রথম ফিফটি। পঞ্চাশে পৌঁছুতে ৩০ বলে মেরেছেন তিনটি করে চার-ছয়। ইনিংস অবশ্য বেশি লম্বা হয়নি, আর মাত্র ৫ রান যোগ করে রাহির বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন রাজশাহীর আইকন।

অধিনায়ক ড্যারেন সামি ঝড় তুলতে পারেননি। ৩ রান করে জুনায়েদ খানের বলে ক্যাচ দেন, রান পাননি মিরাজও। শেষ দিকে এসেও বেশ মাপা বোলিং করেছেন শুরুতে উইকেট পাওয়া জুনায়েদ। মোহাম্মদ সামিকে বোল্ড করে তুলেছেন চার নম্বর উইকেট। তার করা শেষ ওভার থেকে সব মিলিয়ে চার রান নিতে পারে রাজশাহী। ম্যাচ শেষে ওই ওভার নিয়েও আফসোসে পুড়তে পারে কিংসরা। 

জেমস ফ্রাঙ্কলিন একপ্রান্ত আগলে রেখে করেছেন ২৭ বলে ২৯। তার পুরো ইনিংসে কোন বাউন্ডারি নেই, মেরেছেন কেবল একটাই ছয়।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

রাজশাহী কিংস:১৬৬/৮ (মুমিনুল ৫, স্মিথ ৬২, ডরমুন্ড ০, জাকির ০, মুশফিক ৫৫, ফ্রাঙ্কলিন ২৯, স্যামি ৩ , মিরাজ ৩, সামি ৩, নাঈম জুনিয়র,     রাহি ২/২৯, জুনায়েদ ৪/২৭, ব্র্যাথওয়েট ১/৩৩, আফিফ ১/২৩)

খুলনা টাইটান্স: ১৬৮/৮ (ওয়ালটন ৪, রুশো ২০  , প্রসন্ন ৬, মাহমুদউল্লাহ ৫৭, আফিফ ৫, ব্র্যাথওয়েট ১২, শান্ত ৪, আরিফুল ৪৩*, শফিউল ৫,  জুনায়েদ ১*   ;    সামি  ৩/২৯,  হোসেন আলি ১/৩৮ , ফ্রাঙ্কলিন ২/৩০, মিরাজ, স্মিথ ১/২৬)

টস: খুলনা টাইটান্স

ফল:খুলনা টাইটান্স ২ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: আরিফুল হক। 

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

5h ago