টানটান উত্তেজনার পর ৩ রানে জিতল রংপুর

শেষ ওভারের হিরো পেরেরাকে ঘিরে রংপুরের উল্লাস। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

শক্তির বিচারে দুই দলই টুর্নামেন্টের সেরা। ম্যাচটাও হলো সেরা। লো-স্কোরিং ম্যাচে শেষ বল পর্যন্ত টানটান উত্তাপ ছড়িয়ে মাশরাফির রংপুর রাইডার্স জিতল ৩ রানে। বিপিএলের আরও গোটা তিনেক ম্যাচেও ছিলো উত্তেজনা, রোমাঞ্চ। বাদ বাকি বেশিরভাগ ম্যাচই ম্যাড়ম্যাড়ে, একপেশে। তবে এই ম্যাচ ছাপিয়ে গেল বাকি সব কিছুকে। নেতিয়ে পড়া বিপিএলকে করল চাঙা। 

শেষ দুই ওভারে জেতার জন্য ১৩ রান দরকার ছিল ঢাকার। হিসেব খুব সহজ। তবে হাতে উইকেট ছিল মাত্র তিনটি। রংপুরের বোলাররাও ছিলেন তেতে। উত্তেজনা বলতে এটুকুই। তা দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেন লাসিথ মালিঙ্গা।  ১৯তম ওভারে মাত্র তিন রান দিয়ে উপড়ে ফেলেন নাদিফ চৌধুকে। শেষ ওভারে দরকার ১০। হাতে আছে দুই উইকেট। সবচেয়ে বড় কথা ক্রিজে আছেন কাইরন পোলার্ড। এ আর এমন কি? বল করতে এলেন থিসিরা পেরেরা। প্রথম দুই  বলই ইয়র্কার লেন্থের। কোনমতে ঠেকালেন। এক রানে নেওয়ার সুযোগ ছিলো। তবু নিলেন না পোলার্ড। তিন নম্বর বল ইয়র্কার করতে গিয়ে ফুলটস। সোজা গ্যালারিতে পাঠালেন। তিন বলে দরকার চার। পরেরটি লো ফুলটস। এবার টাইমিং হলো না, তবে নিতে পারতেন সিঙ্গেল। পোলার্ড আবার স্ট্রাইক ধরে রাখায় ডট বল। দুই বলে চাই এক বাউন্ডারি, পেরেরা এবার ঠিকঠাক ইয়র্কার মারলেন। স্টাম্প উপড়ে গেল পোলার্ডের। শেষ বলে দরকার চার রান। আবু হায়দার রনিরও গেল স্টাম্প। উল্লাসে মাতল রাইডার্স স্কোয়াড, জয় তিন রানের। বেচারা মোহাম্মদ আমির। কোন বল খেলার সুযোগ পাননি। নন স্ট্রাইকিং প্রান্তে দাঁড়িয়ে সহ্য করেছেন বিপর্যয়। 

মঙ্গলবার মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে রংপুরের করা মাত্র ১৪২ রানের জবাবে শেষ বলে ঢাকা গুটিয়ে যায় ১৩৯ রানে। 

বোর্ডে মাত্র ১৪২। ওই রান নিয়ে জিততে হলে রংপুরের  করতে হতো বাড়তি কিছু। শুরুটা দারুণ করলেন মাশরাফি। দ্বিতীয় বলেই সুনিল নারিনকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানান। পরের ওভারেই তাল হারান রংপুর অধিনায়ক। সচরাচর মাশরাফিকে নো বল করতে দেখা যায় না। কিন্তু এক ওভারেই দুবার পা অনেকখানি বেরিয়ে যায় তার। এভিন লুইস মাঝব্যাটের টাইমিং বল পাঠান গ্যালারিতে, কাট করে চার মেরে দেন সাকিব। ওই ওভারেই আসে ১৮ রান।

পরের ওভারেই অবশ্য সাকিবকে বোল্ড করে দিয়ে ব্রেক থ্রো এনে দিয়েছিলেন সোহাগ গাজী। কিন্তু ওদিকে লুইস ছিলেন তেতে, মারছিলেন বড় ছক্কা। তাকেও থামিয়েছেন দারুণ বোলিং করা গাজী। এই অফ স্পিনারের বলে শুরুতেই ভুগছেন লুইস। কিন্তু জায়গা পেলেই মেরেছেন বড় শট। নিজের শেষ ওভারে ২৮ রান করা লুইসকে এলবিডব্লিও করে আবার ব্রেক থ্রো এনে দেন তিনিই।

পরের স্পেলে ফিরে তাল পেয়েছেন মাশরাফিও। মাথা খাটিয়ে খেলতে থাকা জহুরুল ইসলাম অমিকে বোল্ড করে নেন চতুর্থ উইকেট। খানিক পর  উইকেট যায় আরেকটি। এবার বেসামাল দৌঁড়ে রান আউট হয়ে ফেরেন মোসাদ্দেক হোসেন। ৭৫ রানে পাঁচ উইকেট নেই। রংপুরের তখন ম্যাচে ফিরে আসার আভাস। সাতে নামা শহিদ আফ্রিদি দ্রুত রান তুলে সমীকরণ সহজ করে দিতেই আবার ম্যাচ চলে যায় ঢাকার দিকে। আফ্রিদি অবশ্য বেশিক্ষণ টেকেননি। ১৪ বলে ২১ রান করে তার স্টাম্প উড়ে গেছে রুবেলের বলে। তখন ঢাকার জিততে দরকার ৩৩ বলে ৩২ রান। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যা ডালভাত ব্যাপার। উইকেট পতনের স্রোত দেখে অবশ্য বেশ রয়েসয়ে খেলতে থাকে ঢাকা। তা করতে গিয়েই বুঝি তালগোল পাকালো। 

ধীরে ধীরে জয়ের কাছে গিয়ে আউট হন মেহেদী মারুফ। গেল আসরে নজর কাড়া এই ব্যাটসম্যান এবারে ফ্লপ। ২৪ বল খেলে ১৫ রান করে রুবেলের বলে হয়েছেন এলবিডব্লিও। পরে নেমে পারেননি নাদিফ চৌধুরীও। অল্প রান ডিপেন্ড করতে গিয়ে অতিরিক্ত থেকেই রংপুর দিয়েছে ১৯ রান। যার ১২টিই ওয়াইড। ম্যাচ হারলে যা বড় আক্ষেপের কারণ হতে পারত।অতিরিক্ত রান নেওয়ার ক্ষতি ডেথ ওভারে দারুণ ভাবে পুষিয়ে দেন দুই লঙ্কান মালিঙ্গা ও পেরেরা। 

Mashrafee
ছবি: ফিরোজ আহমেদ
প্রথমে ব্যাটিং পেয়ে গেইল ঝড়ে প্রথম ৭ ওভারেই ৭০ পেরিয়ে গিয়েছিল রংপুর। পরে কিনা সেই তারাই করতে পারল না দেড়শ রানও। ঝড় তুলে গেইল ফিরেছেন বাজে বলে। মিডল অর্ডার হাসেনি। ব্যাটিং অর্ডারে অদল বদল কাজে লাগেনি। শেষ দিক ঝড় তোলার বদলে চুপসে গেছেন ব্যাটসম্যানরা। এরমাঝে ১৬ রানে পাঁচ উইকেট তুলে নিয়েছেন সাকিব আল হাসান।

আবু হায়দার রনির প্রথম ওভার থেকে মাত্র তিন রান দিয়ে শুরু। দ্বিতীয় ওভারে রান বাড়াতে নারিনের বলে আকাশে তুলে দিয়েছিলেন ক্রিস গেইল।  মহামূল্যবান ক্যাচ ফেলে দেন রনি। ওই ওভার থেকে আসে ৪ রান। প্রথম দুই ওভারে কেবল সাত রান। তৃতীয় ওভারে মোহাম্মদ আমিরকে পেয়ে হাত খুলেন  গেইল। চার-ছয়ে আসে ১৩ রান। নারিনের পরের ওভার থেকে তাল ফিরে পাওয়া গেইল তুলেন আরও ১৬ রান। বিনোদনের খোরাক পেয়ে ততক্ষণে জেগে উঠেছে গ্যালারীও।

৪ ওভারে বোর্ডে জমা ৩৬। গেইল ঝড় তুললেও ওদিকে নিষ্প্রভ ছিলেন ম্যাককালাম। পঞ্চম ওভারের প্রথম বলে শহিদ আফ্রিদিকে পেটাতে গিয়ে লাইন মিস করেন কিউই ব্যাটসম্যান। ৮ রান করেই বোল্ড। তাতে দমে যাননি গেইল। আফ্রিদিকে লং অন দিয়ে উড়িয়ে ২৬ বলে তুলে নেন ফিফটি। মার খাচ্ছিলেন আমির, আফ্রিদি। কাউকে দিয়েই গেইলকে থামানো যাচ্ছিল না । সাকিব নিজে না এসে বল তুলে দেন মোসাদ্দেক হোসেনের হাতে। এই গ্যাম্বলিংটাই কাজে লেগে যায়। তার প্রথম বলটি ছিল অনেক শর্ট অব লেন্থের। এমন বল পেলে দশবারের ৯ বারই হয়ত আনায়াসে মাঠের বাইরে উড়াবেন গেইল। সেই বলেই কিনা তুলে দিলেন সহজ ক্যাচ। মিড উইকেটে ক্যাচটি নিয়েছেন সেই রনি। ৭ রানে রনির হাতেই জীবন পাওয়া গেইল ফিরেছেন ৫১ রান করে।

বিপিএলে এবার ছন্দ খুঁজে পাচ্ছেন না শাহরিয়ার নাফীস। এবারও ফিরেছেন দুই অঙ্কের আগে। চারে নেমে সাকিবের বলে সুইপ করতে গিয়ে ফাইন লেগে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন। রান বাড়াতে পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে নেমেছিলেন মাশরাফি। ১৫ রান করেছেন ৯ বলে। ১০  নম্বর বলে আফ্রিদিকে উড়াতে গিয়ে দিয়েছেন ক্যাচ। হাবভাব জানিয়েছে, অলআউট আক্রমণে যাওয়ার টার্গেট ছিল রংপুরের। ওটাই হয়ে যায় হীতে বিপরিত। বেদম পেটাতে গিয়ে পড়ে যায় একের পর এক উইকেট।  কিছুটা মন্থর ব্যাট করছিলেন মোহাম্মদ মিঠুন। সেই চাপ থেকেই রান বাড়াতে গিয়ে সাকিবের বলে ক্যাচ তুলে ফেরেন তিনি।  

থিসিরা পেরেরার ঝড় তুলবেন বলে আশায় ছিল রাইডার্স ক্যাম্প। ১টি করে চার –ছয়ে ১৫ রান করে আউট হয়ে যান তিনিও। শেষ ওভারে দরকার ছিল ঝড়ো ফিনিশিং। জিয়াউর রহমান নেমে মেটাতে পারেননি চাহিদা। ১৬ থেকে ২০। শেষ চার ওভারে রংপুর নিতে পেরেছে মাত্র ১৬ রান। উইকেট পড়েছে ৫টি। বোপারার ব্যাটের দিকে তবু তাকিয়েছিল রংপুর। শেষ ওভারে রান আউট হয়েছেন তিনি। অবশ্য বোপারার রান আউটে বড় দায় জিয়ারই। পরের বলে তিনিও ক্যাচ দিয়েছেন। ৪ রানের ইনিংসে বল নষ্ট করেছেন ৯টি। শেষ দুই উইকেট সাকিব নিয়েছেন টানা দুই বলে। পরের ম্যাচের প্রথম বলে তাই হ্যাটট্রিকের সামনে থাকছেন তিনি।



ম্যাচ শেষে অবশ্য সাকিবের এই হাসি থাকেনি। শেষ পাঁচ ওভারের ব্যাটিং বিপর্যয়ও মনে থাকবে না রংপুরের। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর 

রংপুর রাইডার্স :১৪২ (ম্যাককালাম ৮, গেইল ৫১, মিঠুন, শাহরিয়ার ৯, মাশরাফি ১৫,বোপারা ১২,পেরেরা ১৫,জিয়া ৪, মালিঙ্গা ১*, গাজী ০, রুবেল ০ ;   সাকিব ৫/১৬, আফ্রিদি ২/৩৯, আমির ১/৩৪, মোসাদ্দেক ১/৪)

ঢাকা ডায়নামাইটস: ১৩৯ (লুইস ২৮, নারিন ০, সাকিব ১১, জহুরুল, মোসাদ্দেক ২, মারুফ, আফ্রিদি ২১, পোলার্ড ১২, নাদিফ ২, আমির, রনি ০)   ; মাশরাফি ২/৩০, গাজী ২/১৮, রুবেল ২/২৯, মালিঙ্গা ১/২০, পেরেরা ২/৩৭)

টস: ঢাকা ডায়নামাইটস।

ফল: রংপুর রাইডার্স ৩ রানে জয়ী।



ম্যান অব দ্য ম্যাচ: ক্রিস গেইল  

Comments

The Daily Star  | English
BNP demands national election by December 2025

2014, 2018, 2024 polls: BNP to sue former ECs, officials today

BNP is set to file a case against officials involved in the last three national elections with Sher-e-Bangla Nagar police today. The party will also lodge a formal complaint with the Election Commission in this regard, BNP leaders said yesterday.  

4h ago