সিকান্দার রাজার তাণ্ডবে সিলেটকে উড়িয়ে দিল চিটাগাং

ব্যাট হাতে ঝড় তুলে কাজটা সেরে রেখেছিলেন সিকান্দার রাজা। চিটাগাং ভাইকিংস পেয়েছিল এবারের আসরের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। শিশিরে ভেজা বলে বাকিটা সামলেছেন বোলাররা।
দ্বিতীয় জয় পেয়েছে ভাইকিংস। ছবি: প্রবীর দাস

ব্যাট হাতে ঝড় তুলে কাজটা সেরে রেখেছিলেন সিকান্দার রাজা। চিটাগাং ভাইকিংস পেয়েছিল এবারের আসরের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। শিশিরে ভেজা বলে বাকিটা সামলেছেন বোলাররা। ২১১ রানের পিছু ছুটে তাল মেলাতে পারেনি সিলেট সিক্সার্স। থেমেছে ১৭১ রানে।

শুক্রবার চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিলেট সিক্সার্সকে ৪০  রানে হারিয়ে দ্বিতীয় জয় পেয়েছে চিটাগাং ভাইকিংস। প্রথম তিন ম্যাচ জেতার পর পাঁচ নম্বর ম্যাচ হারল নাসিরের দল।  

বিশাল রান তাড়ায় উড়ন্ত শুরু পেয়েছিল সিলেটও। দুই ওপেনার প্রথম চার ওভারেই নিয়ে ফেলেছিলেন ৪৩ রান। পঞ্চম ওভারে প্রথম বলে প্রথম আঘাত হানেন সানজামুল ইসলাম। লঙ্কান দানুশকা গুনাথিলেকা বাঁহাতি স্পিনার সানজামুলকে উড়াত গিয়ে ধরা পড়েন লং অনে। তবে টিকে ছিলেন আদ্রে ফ্লেচার। ছন্দে থাকা এই ক্যারিবিয়ান শুরু থেকেই ছিলেন আগ্রাসী।  ৩৩ বলে তিন ছক্কা আর সাত চারে করে ফেলেন ফিফটি।

রাতের শিশিরের কারণে বল গ্রিপ করতে সমস্যা হচ্ছিল স্পিনারদের। এসবের মধ্যেই দারুণ বল করেছেন সানজামুল। চার ওভার বল করে মাত্র ২৩ রান দিয়ে আউট করেছেন দানুশকাকে। রানরেটকে চেপে ধরে বাড়িয়েছেন সিক্সার্সের চাপ। ওই চাপেই পরে কাটা পড়েছেন ফ্লেচার। তেতে থাকা ফ্লেচার থেমেছেন ৭১ রান করে। তাসকিনের বলে টাইমিংয়ে গড়বড় করায় বল উঠে যায় আকাশে।   ব্যাটিং হিরো সিকান্দার কাভার থেকে অনেকখানি পেছনে দৌঁড়ে নিয়েছেন দারুণ এক ক্যাচ। ৪৬ বলের ইনিংসে ফ্লেচার মেরেছেন ৮ চার ও চার ছক্কা। রান বাড়ানোর তাড়ায় আউট হয়েছেন তিনে নামা বাবর আজমও। ফন সিলের বলে ঘুরিয়ে ৪১ রান করে ক্যাচ দিয়েছেন বাউন্ডারি লাইনে।

জিততে সিলেটের তখন দরকার ৩২ বলে ৮৪। অনেকটাই অসম্ভবের কাছাকাছি। এমন সময় সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিও হয়ে ফিরে যান সাব্বির রহমানও। ব্যাটিং অর্ডারের অদল বদল করেও লাভ হয়নি। টিম ব্রেসনান ও আবুল হাসান টেকেননি বেশিক্ষণ। প্রায় পাঁচ ওভার আগেই স্বাগতিকদের দিকে হেলে পড়া ম্যাচে ছিলো না কোন উত্তাপ। নিচের দিকে নেমে ৮ রান করে আউট হয়েছেন অধিনায়ক নাসিরও । পরের নিরুত্তাপ ওভারগুলো পার করেছেন নুরুল হাসান ও কামরুল ইসলাম। সাতে নামা সোহান শেষ বলে আউট হয়েছেন ১৬ বলে ২৮ রান করে।  

টস হেরে ব্যাট করতে নামা চিটগাং ভাইকিংসের শুরুতে এবারও ঝড় বইয়ে দেন লুক রঙ্কি। মাঝের উইকেট পতনের পর এবার আর তারা পথ হারায়নি।  পাঁচে ব্যাট করতে নামা জিম্বাবুয়াইন সিকান্দার রাজা ধরেছেন হাল, চালিয়েছেন তাণ্ডব। দুইশর উপর স্ট্রাইক  রেট রেখে আউট হয়েছেন সেঞ্চুরির কাছে গিয়ে। ঝড়ো ব্যাটিং এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকান ফন সিলের ব্যাট থেকেও। তিন বিদেশির রান উৎসবের দিন ভাইকিং গড়েছে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রানের সংগ্রহ।

ওপেনিংয়ে এক প্রান্তে চার-ছয় পিটাচ্ছিলেন রঙ্কি। অন্যপ্রান্তে নড়বড়ে সৌম্য এদিনও করেছেন হতাশ। নাসির হোসেনের বলে কাট করতে গিয়েছিলেন ভাইকিংসের আইকন প্লেয়ার। বল এক বাউন্সে গেল কিপারের কাছে। কি বুঝে যেন  ক্রিজ থেকে বের হয়ে গেলেন সৌম্য। স্টাম্পিং করতে কোন সমস্যাই হয়নি নুরুল হাসানের। আগের ম্যাচে ৬২ রান করা এনামুল হক বিজয় এদিনও নেমেছিলেন ওয়ানডাউনে। তবে এবার ব্যাটে বলে হয়নি। টিম ব্রেসনানের অনেক শর্ট বলেও বাউন্ডারির বাইরে পাঠাতে পারেননি। তার সজোরে হাঁকানো শট গেছে স্কয়ার লেগ ফিল্ডারের হাতে।

৪০ রানে তাইজুলের বলে লুক রঙ্কির ক্যাচ ছেড়ে দিয়েছিলেন নাসির। এতে খুব বেশিক্ষণ আক্ষেপ করতে হয়নি তাকে। আর এক রান যোগ করেই আবুল হাসানের বলে ফের ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। তাতে অবশ্য ম্যাচে ফেরা হয়নি সিলেটের। বরং তখনই  শুরু ফন সিল-সিকান্দার রাজার ঝড়। ওভারপ্রতি ১০ করে রান নিয়ে ৭৩ রানের জুটি গড়েন এই দুজন। কামরুল ইসলাম রাব্বির বলে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় ফন সিলের ২৬ বলে ৪০ রানের ইনিংস। ফন সিল থামলেও উড়ছিলেন রাজা।  ৩০ বলে তুলে নেন ফিফটি। পরে চালিয়েছেন তাণ্ডব। তার দাপটে খাবি খেয়েছেন সিক্সার্স বোলাররা। বাউন্ডারি মেরেছেন নয়টি, গুণে গুণে মেরেছেন ছয়টি ছক্কা। তারমধ্যে একটি গেল পশ্চিম গ্যালারি পেরিয়ে একদম মাঠের  বাইরে। এ পর্যন্ত টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বড় ছক্কা পেরিয়েছে ১১৩ মিটার। শেষ ওভারে গিয়ে থেমেছে সিকান্দার রাজার ৪৫ বলে ৯৫ রানের ইনিংস। সবচেয়ে বড় ছক্কার পর এ পর্যন্ত টুর্নামেন্টে ব্যক্তিগত সবচেয়ে বড় ইনিংসটিও তার।

ভাইকিংসদের রান উৎসবে সিক্সার্সদের বোলিংও হয়েছে সাদামাটা। একাদশে লিয়াম প্লাঙ্কেটের বদলে অচেনা পাকিস্তানি পেসার গোলাম মোদাসসরকে নিয়ে নেমেছিল তারা। তাকে দিয়ে মাত্র ২ ওভার বল করাতে পেরেছেন নাসির। ওই দুই ওভার থেকেই এই বাঁহাতি পেসার দেন ৩১ রান। বেদম মার খেয়েছেন নাসির, রাব্বি , রাজুরাও। বাজে বোলিংয়ের মাশুল পরে দিতে হয়েছে বিশাল হারে।



সংক্ষিপ্ত স্কোর:

চিটাগাং ভাইকিংস:২১১/৫ (রঙ্কি ৪১, সৌম্য ১, বিজয় ৩, ফন সিল ৪০,  সিকান্দার রাজা ৯৫, জাদরান ১৯*, রিস ৪*; গোলাম ০/৩১, নাসির ১/৩৪, তাইজুল ০/৩০, ব্রেসনান ১/৩৮, রাজু ১/৪২, কামরুল ২/৩৫)

সিলেট সিক্সার্স:১৭১/৮ (দানুশকা ১০, ফ্লেচার ৭১, বাবর ৪১, সাব্বির ৩, ব্রেসনান ২, রাজু ০,   নুরুল,   কামরুল  ; সানজামুল ১/২৩,  সিকান্দার ০/১৩, শুভাশিস ০/৩০,  তাসকিন ২/৩১, রিস ০/২২, তানভির ০/২০, সৌম্য ২/১৭, ফন সিল ২/১৪ )

টস: সিলেট সিক্সার্স।

ফল: চিটাগাং ভাইকিংস ৪০  রানে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: সিকান্দার রাজা। 

Comments