স্যামির তাণ্ডবে জিতল রাজশাহী

টস জিতে ব্যাট করতে নামা রাজশাহীকে অক্সিজেন জুগিয়েছেন অধিনায়ক স্যামি। মাঝারি সংগ্রহের দিকে এগুতে থাকা দলকে এক ওভারের তাণ্ডবে তিনি নিয়ে গেছেন চূড়ায়। বলতে গেলে ওই এক ওভারই গড়ে দিয়েছে দুদলের ব্যবধান
ছবি: প্রবীর দাস

ড্যারেন স্যামির তাণ্ডবে পাওয়া বড়সড়ো সংগ্রহটা আনায়াসে সামলেছে রাজশাহী কিংসের বোলাররা। এক ওভারে তিন উইকেটসহ চার উইকেট নিতে তাতে অগ্রনী মোহাম্মদ সামি। স্যামি আর সামির নৈপুণ্যে  ১৮৬ রান বোর্ডে নিয়ে কুমিল্লাকে কিংসরা থামিয়ে রেখেছে ১৫৫ রানে। দুই হারের পর পেয়েছে জয়ের দেখা।

শনিবার চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে হারের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে রাজশাহী পেয়েছে দ্বিতীয় জয়। তলানী থেকে উঠে এসেছে এক ধাপ। ওদিকে টানা  পাঁচ ম্যাচ জেতার পর হারল তামিমের কুমিল্লা। এর আগে প্রথম দেখায় ৯ উইকেটে জিতেছিল কুমিল্লা। এবার রাজশাহী জিতল ৩০ রানে।  

টস জিতে ব্যাট করতে নামা রাজশাহীকে অক্সিজেন জুগিয়েছেন অধিনায়ক স্যামি। মাঝারি সংগ্রহের দিকে এগুতে থাকা দলকে এক ওভারের তাণ্ডবে তিনি নিয়ে গেছেন চূড়ায়। বলতে গেলে ওই এক ওভারই গড়ে দিয়েছে দুদলের ব্যবধান। রান তাড়া করতে গিয়ে সেই চূড়া পেরুনোর তাগদ দেখাতে পারেনি কুমিল্লা। ১৫৫ রান করে ৫ বল আগে  গুটিয়ে গেছে তাদের ইনিংস।  



১৮৬ রান তাড়ায় কুমিল্লার শুরুটাই হয় বাজেভাবে।  ওপেনিংয়ে তামিমের নতুন সঙ্গী পাকিস্তানি ফখর জামান নেমেই ব্যর্থ। মাত্র ২ রান করে স্বদেশী মোহাম্মদ সামির বলে স্টাম্প উড়ে যায় তার। রানের মধ্যে থাকা ইমরুল কায়েস এদিন ফিরলেন খালি হাতে। মেহেদী হাসান মিরাজকে সুইপ করতে গিয়েছিলেন। লাইন মিস করে হয়েছেন এলবিডব্লিও।

বিশাল রানে পিছু ছুটতে  দরকার ছিল ঝড়ো শুরু। তাও পায়নি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। তবে এবারের আসরে এই প্রথম রানে ফেরা তামিম থিতু হতে সময় নিয়েছেন। পরে খেলেছেন হাত খুলে। আগের ম্যচে দলকে জেতানো শোয়েব মালিক ছিলেন সঙ্গে। মালিকই ছিলেন বেশি আগ্রাসী। আউটও হয়েছেন আগে। তার ২৬ বলে ৪৫ রানের ইনিংস থেমেছে ডোয়াইম স্মিথের বলে। তবু জস বাটলারকে নিয়ে কুমিল্লাকে পথেই রেখেছিলেন তামিম। পেয়ে যান টুর্নামেন্টের প্রথম ফিফটি। ওদিকে চড়া হতে থাকা হিসাব সামলাতে প্রতি ওভারেই দরকার ছিল বড় শট। সে চাহিদা মেটাতে গিয়ে কাটা পড়েন তিনি। মোহাম্মদ সামির বলে আউট হওয়ার সময় তামিমের নামের পাশে লেখা ৪৫ বলে ৬৩। লিটন দাসের ব্যর্থতায় তিন ম্যাচ পর ফের সুযোগ পেয়েছিলেন অলক কাপালী।  হেলায় হারিয়েছেন তা। প্রথম বলেই বোল্ড হয়ে দলকে ফেলে দেন আরও বিপদে।

বোলিংয়ে মার খেয়ে ‘ভিলেন’ হওয়া সাইফুদ্দিন ব্যাট হাতেও হয়েছেন ব্যর্থ। কোন রান না করে সামির ওই ওভারেই ক্যাচ দিয়েছেন তিনিও। বাটলার ক্রিজে ছিলেন বলে যাও বা উত্তাপ ছিল, পরের ওভারে জেমস ফ্রাঙ্কলিন তাকে এলবিডব্লিও করে দিলে তাও মিলিয়ে যায়।

তিনি আউট হওয়াতে তাও শেষ। প্রায় পাঁচ ওভার আগেই ফলাফল অনেকটাই হয়ে যায় অনুমিত। টেল এন্ডাররা এলোপাথাড়ি শটে কিছু রান বের করেছেন, তবে তা কেবলই পরাজয়ের ব্যবধান কমিয়েছে।



আগে ব্যাট করে ১৯ ওভারে রাজশাহীর স্কোর ছিল ৭ উইকেটে ১৫৩। ২০ ওভার শেষে সেটা দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ১৮৫! মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ড্যারেন স্যামির হাতে বেদম মার খেয়ে এক ওভারেই দিয়েছেন ৩২ রান। শেষ ওভারের আগে ড্যারেন স্যামির রান ছিল ৮ বলে ১৭। ওই এক ওভারে ঝড় তুলে ইনিংস শেষ করেছেন ১৪ বলে ৪৭ রান করে। মাঝারি স্কোর গড়ার পথে থাকা রাজশাহী অধিনায়ক স্যামির তাণ্ডবে পেয়ে যায় বিশাল সংগ্রহ।

স্যামি ঝড়ের আগে কিংসদের পুরো ইনিংসই মাঝারি মানের, রান এগিয়েছে গড়পড়তা গতিতে। ওপেন করতে নেমে কিছুটা মন্থর খেলছিলেন ডোয়াইন স্মিথ। থিতু হয়েই ফিরেছেন মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের বলে হয়েছেন বোল্ড। স্মিথের তুলনায় মুমিনুল ছিলেন বেশ আগ্রাসী, খেলছিলেন ছন্দে। লুক রাইটের সঙ্গে বোঝাপড়ার অভাবে ২৩ রান করে রানআউট হয়েছেন তিনি।

চারে নেমে আবারও চনমনে শুরু পেয়েছিলেন জাকির হাসান। স্ট্রাইক রোটেটের পাশাপাশি মেরেছেন চার-ছয়। টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। আল-আমিনের শর্ট বল পেটাতে গিয়ে টাইমিংয়ে গোলমাল করে ক্যাচ তুলে দেন সোজা আল-আমিনকেই। আগের ম্যাচে রান পাওয়া মুশফিকেও আউট হয়েছেন টাইমিং করতে না পারায়। সাইফুদ্দিনের ফলটস বলটা গ্যালারিতে পাঠানোর মতই ছিল। মুশফিকের হিট গেছে ইমরুলের হাতে। প্রথম দুই ওভারে মাত্র ৬ রান দিয়ে সাইফুদ্দিনের পকেটে তখন ২ উইকেট।

মিডল অর্ডারদের ব্যর্থতার দিনে রাজশাহীর ভরসা হয়ে ক্রিজে ছিলেন লুক রাইট। তিনি আউট হয়েছেন একদম ১৮তম ওভারে। তাকেও ফিরিয়েছেন মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। প্রথম তিন ওভারে দারুণ বল করেছিলেন তিনি, মাত্র ১৮ রান দিয়ে পেয়েছিলেন ৩ উইকেট। অথচ সেই সাইফুদ্দিনের বোলিং ফিগার একেবারে উলটপালট করে দেন স্যামি। স্যামি ঝড়ে বেসামাল সাইফুদ্দিন এক ওভারেই দিয়েছেন ৩২ রান। বিপিএলের ইতিহাসে এক ওভারে সবচেয়ে বেশি রান দেওয়ার লজ্জার রেকর্ডটিও হয়ে গেল তার।

কুমিল্লা ম্যাচ হেরেছে ৩০ রান। ব্যবধান গড়ে দিয়েছে সাইফুদ্দিনের ওই ওভারটিই। দিনশেষে তার খচখচানিই বেশি হওয়ার কথা।  



সংক্ষিপ্ত স্কোর :

রাজশাহী কিংস: ১৮৫/৭ (স্মিথ ১৯, মুমিনুল ২৩, রাইট ৪২, জাকির ২০,মুশফিক ৮, ফ্র্যাঙ্কলিন ১৪, স্যামি ৪৭ , মিরাজ ০, সামি ৫* ;আল-আমিন ০/৩২, মেহেদী ০/১৮, হাসান আলি ২/৩৮, সাইফুদ্দিন ৩/৫০,   রশিদ ০/২৬, অলক ০/১৩, মালিক ০/৪)

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: (তামিম, ফখর ২, ইমরুল ০, মালিক ৪৫, বাটলার ১৫, অলক ০, সাইফুদ্দিন ০, হাসান ১৬,  রশিদ ৬, মেহেদী ৫,  আল-আমিন ১*  ; সামি ৪/৯ , মিরাজ ১/২৬, হোসেন ০/৩৯, মোস্তাফিজ ২/৩২, ফ্র্যাঙ্কলিন ১/৩১, স্মিথ /২৭)

টস: রাজশাহী কিংস।

ফল: রাজশাহী কিংস ৩০ রানে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: ড্যারেন স্যামি। 

Comments

The Daily Star  | English

Country must be back in business without delay

Amid worker unrest and insecurity in the industrial sector, entrepreneurs and bankers have urged the new administration to focus on rebuilding confidence in the economy.

1h ago