এবার শেষ বলে ছক্কা মেরে হিরো থিসারা

ঢাকা ডায়নামাইটসকে হারানোর ম্যাচে বল হাতে নায়ক ছিলেন, এবার চিটাগাং ভাইকিংসকে হারাতে ব্যাট হাতে শেষ ওভারের নায়ক বনলেন তিনি।
আবারও শেষ ওভারের হিরো থিসারা। ছবিঃ প্রবীর দাস

১৭৭ রান তাড়ায় ওয়ানডাউনে নেমে ঝড় তুলেছিলেন মাশরাফি, মিডল অর্ডারে হাল ধরে দলকে পথে রেখেছিলেন মোহাম্মদ মিঠুন। শেষটা করলেন থিসারা পেরেরা। ঢাকা ডায়নামাইটসকে হারানোর ম্যাচে বল হাতে নায়ক ছিলেন, এবার চিটাগাং ভাইকিংসকে হারাতে ব্যাট হাতে শেষ ওভারের নায়ক বনলেন তিনি।

শেষ দুই ওভারে দরকার ছিল ১৯ রান। হাতে ছয় উইকেট। ক্রিজে ছিলেন ছন্দে থাকা  মিঠুন ও থিসিরা। লুইস রিসের করা ওই ওভার থেকে এল ৫ রান। আউট হয়ে গেলেন মিঠুন। রংপুরের হাতের মুঠোয় থাকা ম্যাচে তখন উত্তাপ। শেষ ওভারে দরকার ১৪ রান। প্রথম দুই বলে এক ছক্কায় ৮ রান নিয়ে নেন থিসারা। তার পরের দুই বলে দুই উইকেট। তিন নম্বর বলে উইকেট কিপারের হাতে রেখে সিঙ্গেল নিতে গিয়ে রান আউট নাহিদুল। শাহরিয়ার নাফীস এসেই আকাশে তুলে দিয়ে লং অনে হয়েছেন ক্যাচ। পরের বলে স্ট্রাইক পেয়ে দুই রান নেন থিসারা। পরের বলটি ওয়াইড হয় তাসকিনের। শেষ বলে লাগত ৩ রান। মিড উইকেট দিয়ে উড়িয়েই দৌঁড় লঙ্কান বাঁহাতির। রংপুর জিতল ৩ উইকেটে। আবারও রোমাঞ্চকর ম্যাচ জেতায় উল্লাসের মাত্রা হলো দ্বিগুণ।

শনিবার চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে চিটগাং ভাইকিংসকে হারিয়ে আট ম্যাচে চার জয় পেল রংপুর। উঠে গেল টেবিলের চার নম্বরে। সমান ম্যাচে পাঁচ হার নিয়ে টেবিলের তলানিতেই পড়ে থাকল স্বাগতিকরা।  

রান তাড়ায় প্রথম দুই ওভারে একটি করে ছক্কা মেরে শুরু করেছিলেন গেইল-ম্যাককালাম দুজনেই। কিন্তু তাদের চেপে ধরার কাজটাও দারুণভাবে করে যাচ্ছিলেন ভাইকিংস বোলাররা। প্রথম ৪ ওভার থেকে তাই এই দুজন নিতে পারলেন মাত্র ১৮ রান। বিপিএলে প্রথমবার খেলতে এসে কোন তালই পাচ্ছেন না ম্যাককালাম। এবারও রান পাননি। আউট হয়েছেন ২০ বল খেলে, করেছেন মাত্র ১৫ রান।

ম্যাককালামের আউটের পর  অবাক করে দিয়ে ওয়ানডাউনে নামেন মাশরাফি মর্তুজা। স্পিনের বিপক্ষে নড়বড়ে গেইল, মাশরাফির আবার স্পিনে বড় শট খেলার সুনাম আছে। স্পিনারদের আক্রমণ থেকে সরানোর পরিকল্পনা থেকেই হয়ত আগে নেমে থাকবেন মাশরাফি। চিন্তা যাইহোক। এই ‘গ্যাম্বলিং’ দারুণ কাজে লেগে যায় রংপুরের। গেইলকে একপাশে রেখে চার-ছয়ে গ্যালারি মাতিয়ে রাখলেন তিনিই। তিন ছক্কা আর চারটি চার মেরেছেন রংপুরের অধিনায়ক। গেইলের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে ৬০ রানের জুটি, যার অধিকাংশই এল মাশরাফির ব্যাট থেকে। তিন ছক্কার দুটি মেরেছেন লং অফ দিয়ে। আল-আমিন জুনিয়রের বলে মিড উইকেট মারা ছক্কাটি তো গিয়ে পড়ল গ্যালারির দোতালায়। আক্রমণে আসা সানজামুলকে শুরুতেই লং অফ দিয়ে উড়িয়েছিলেন। পরে মিড উইকেট দিয়ে আরেকটি উড়াতে গিয়ে লাইন মিস করে হয়েছেন বোল্ড। আউট হয়ে ফেরার সময় তার নামের পাশে ঝলমল করছিল ১৭ বলে ৪২।  

চড়া হতে থাকা আস্কিং রানরেট মাশরাফির ঝড়ে চলে আসে নাগালের মধ্যে। তার আউটের পরও তাই ম্যাচে শক্ত লাগাম রংপুরের, উইকেটে যে তখনো আছেন  ক্রিস গেইল। ছক্কা দিয়ে শুরুর পর যদিও তার হাবভাবে ছিল অস্বস্তি। বড় শট পেয়েছেন, কিন্তু ডট বলও খেলেছেন অনেকগুলো। ঠিকঠাক টাইমিং পাচ্ছিলেন না। আউটও হলেন দ্বিধাগ্রস্থ থেকে। লেগ স্পিনার তানবীর হায়দারের বলটা অনেক শর্ট ছিল। অনায়াসে গ্যালারিতে পাঠাতে পারতেন গেইল। কিন্তু তা গেল বাউন্ডারি লাইনে লুক রঙ্কির হাতে। ফিল্ডারের পা লাইন ছুঁয়েছে কিনা তার অপেক্ষা চলল বেশ কিছুক্ষণ, গেইল অবশ্য অপেক্ষা না করেই বেরিয়ে গিয়েছিলেন।

গেইল ফেরার পর দলের হাল ধরেন  মিঠুন। তাকে সঙ্গ দিতে পারেননি রানে থাকা রবি বোপারা। সৌম্য সরকারের বলে উড়াতে গিয়ে মিড উইকেটে দিয়েছেন ক্যাচ।

শেষ তিন ওভারে রংপুরের চাই ২৬। ছয় উইকেট হাতে থাকায় তখনই সমীকরণ সহজ। সেই সমীকরণ কঠিন হয়েছে দ্রুত উইকেট পতনে। একদম শেষ বলে গিয়ে ফয়সালা হয়েছে ম্যাচের।

টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা  ভালো হয়নি চিটাগাং ভাইকিংসের। শুরুর ঝড় তোলার জন্য যিনি বরাদ্দ ছিলেন এতদিন, সেই লুক রঙ্কি ফিরেছেন ১১ রান করেই। তার আউটের দায় অবশ্য সৌম্য সরকারের। মালিঙ্গার দ্বিতীয় ওভারে এক রানকে দুই রান বানাতে গিয়ে কল দিয়ে আবার নাকচ করে দেন। স্ট্রাইকিং এন্ডে ফেরার সময় মেলেনি রঙ্কির। আগের ম্যাচের মতো এদিনও নিস্তেজ এনামুল হক বিজয়ের ব্যাট। মাশরাফির বলে ফ্লিক করতে গিয়েছিলেন। বলের পেস না বুঝে ব্যাট চালিয়েছিলেন দ্রুত। আউটসাইড এজ হয়ে শর্ট থার্ড ম্যানে উঠে সহজ ক্যাচ। অধিনায়ককে আউট করে ভুল শোধরানোর সুযোগ ছিলো সৌম্যের। দলের চাহিদা মেটাতে পারেননি তিনি। টুর্নামেন্টে আরও একবার আউট হয়েছেন ত্রিশের ঘরে। ঠিক ৩০ রান করে নাহিদুলকে কাট করতে গিয়ে খুইয়েছেন লেগ স্টাম্প।

আগের দিনের হিরো সিকান্দার রাজাকে নিয়ে চতুর্থ উইকেট জুটিতে দাপট দেখান স্টিয়েন ফন সিল। ওভারপ্রতি প্রায় ১০ রান করে নিয়ে এই দুজন গড়েন ৭৬ রানের জুটি। বেশি আগ্রাসী ছিলেন ফন সিল। খেলেছেন বড় শট, চালু রেখেছেন রানের চাকা। ওদিকে ২২ রান করে সিকান্দার আউট হলেও অবিচল ছিলেন এই প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান। ৩০ বলে ফিফটি তুলে নেওয়ার পরও এগুচ্ছিলেন ভাইকিংসের ভরসা হয়ে। ৬৮ রান করার পর তাকে ফেরান পেরারা। শেষ দিকে নাজিবুল্লাহ জাদরান ১৬ বলে ২৫ রান করলে ১৭৬ রানে গিয়ে থামে ভাইকিংস।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

চিটাগাং ভাইকিংস:১৭৬/৭ (রঙ্কি ১১, সৌম্য ৩০, বিজয় ৭, ফন সিল ৬৮, সিকান্দার ২২, জাদরান ২৫ , রিস ১, তানভির , আল-আমিন  ১   ; গাজী ০/৩৫, মালিঙ্গা, মাশরাফি ১/২৪, নাহিদুল ১/৪, রুবেল ১/৩৯, পেরেরা ১/৩৫)

রংপুর রাইডার্স:১৮০/৭ (ম্যাককালাম ১৫, গেইল ৩৩, মাশরাফি ৪২, মিঠুন ৪৪, বোপারা ১১, পেরেরা ২৮*, নাহিদুল ০, শাহরিয়ার ০, মালিঙ্গা ০*  ;সিকান্দার ০/৭,আল-আমিন ১/২৯, তাসকিন ১/৩৮, সৌম্য ১/২৪, ফন সিল ০/৩০, সানজামুল ১/২৩)

টস: রংপুর রাইডার্স।

ফল: রংপুর রাইডার্স ৩ উইকেটে জয়ী। 

Comments

The Daily Star  | English
BNP office in Nayapaltan

Column by Mahfuz Anam: Has BNP served its supporters well?

The BNP failed to reap anything effective from the huge public support that it was able to garner late last year.

10h ago