এনামুলকে ছাপিয়ে নায়ক লুইস
এনামুল হক বিজয়, লুক রঙ্কিদের দাপটে ১৮৮ রানের বড় লক্ষ্য দিয়েছিল চিটাগাং ভাইকিংস। চার-ছক্কার তাণ্ডবে ওই রানকেই মামুলি বানিয়ে ছেড়েছেন এভিন লুইস, জো ডেনলি, ক্যামেরন ডেলপর্টরা। ৭ বল হাতে রেখে ৭ উইকেটে জিতে গেছে ঢাকা ডায়নামাইটস। পেয়ে গেছে এই আসরের সবচেয়ে বড় রান তাড়ায় জয়।
সোমবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টানা দুই ম্যাচ হারের পর জয়ে ফিরল সাকিবের দল। নয় খেলার পাঁচটি জিতে ফের টেবিলের এক নম্বরেও উঠে তারা। ওদিকে সমান ম্যাচে ছয়টাই হেরে খাদের কিনারে চিটাগাং ভাইকিংস।
বিশাল রান তাড়ায় এভিন লুইসের সঙ্গে নেমেছিলেন শহিদ আফ্রিদি। বোলিংয়ে বেদম মার খাওয়া আফ্রিদি ব্যাট হাতেও পোষাতে পারেননি। কোন রান না করেই তাসকিনের বলে লফটেড ড্রাইভ তুলে দেন মিড অনে। ভাইকিংস অধিনায়ক রঙ্কি বাঁদিকে লাফিয়ে জমান চোখ জুড়ানো ক্যাচ।
তড়িঘড়ি প্রথম উইকেট হারালেও পথ হারায়নি ঢাকা। দ্বিতীয় উইকেটে মাত্র ৬৫ বলে ১১৮ রানের জুটি গড়েন এভিন লুইস ও জো ডেনলি। ক্যারিবিয়ান লুইসই ছিলেন বেশি আগ্রাসী। স্বভাব সুলভ ক্ষ্যাপাটে ব্যাটিংয়ে টালমাটাল করেছেন ভাইকিংস বোলিং। মাত্র ৩১ বলে ৭৫ করে আউট হন তিনি। চারের চেয়ে ছক্কা মেরেছেন তিনগুন। তিন চারের সঙ্গে বল গ্যালারিতে উড়িয়েছেন নয়বার।
লুইসকে হারিয়ে বেশিদূর এগুতে পারেননি জো ডেনলিও। ৩৮ বলে ফিফটির ছয় রান আগে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ দেন তিনি। সাকিবের সঙ্গে মিলে ক্যামেরন ডেলপোর্ট শেষ করেছেন বাকিটা। উইকেটে যে ছিল প্রচুর রান। তাই দেখিয়েছেন তারা। দলকে জিতিয়ে ৪৩ রানে অপরাজিত ছিলেন ডেলপোর্ট, ২২ রান করে হাসিমুখ মাঠ ছেড়েছেন অধিনায়ক সাকিব। চতুর্থ উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৬৭ রানের জুটিতেই কাজ সারা। বোলিংয়ে খারাপ দিন গেলেও ব্যাট হাতে স্বস্তিতে ছিলেন সাকিব। তবে জুটিতে আগ্রাসী ডেলপোর্টই। ৪৩ রানের ইনিংসে মেরেছেন তিন ছক্কা আর দুই চার।
এর আগে লুক রঙ্কি আর এনামুল হক বিজয়ের ঝড়ো দুই ফিফটির পর সিকান্দার রাজার ফিনিশিংয়ে সাকিবদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয় চিটাগাং ভাইকিংস।
টস জিতে ব্যাটিং নিয়ে প্রথম ওভার থেকেই চেনা ছন্দে ছিলেন লুক রঙ্কি। তবে অন্যদিকে সঙ্গী সৌম্য সরকার এদিনও নড়বড়ে। সুনিল নারিনের করা তিন নম্বর ওভারে ১ রান করেই বোল্ড হয়েছেন। ওটা কোন বিপদের কারণ হয়নি রঙ্কির সঙ্গে বিজয়ের জম্পেশ জুটিতে। ওভারপ্রতি ১০ রান করে নিয়ে ১০৭ রানের জটি গড়েন তারা। তাল মিলিয়ে পিটিয়েছেন দুজনেই।
২৭ বলে ফিফটিতে পৌঁছান রঙ্কি। আফ্রিদিকে লং অন দিয়ে উড়িয়ে ফিফটিতে পৌঁছান বিজয়। হাবভাবে শুরু থেকেই ছিলেন ইতিবাচক দুই চার, চার ছক্কায় ৩১ বলে টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় ফিফটি তুলে নেওয়ার পর তার উদযাপনেও ছিল ভিন্নতা। সেই লং অন দিয়ে সাকিবকে উড়াতে গিয়ে রঙ্কি আউট হন ৫৯ রানে। ওদিকে বিজয় তখনো তেতে, থামেননি সহসা। খেলেছেন বড় বড় শট। বল লাগাতে পারছিলেন মাঝব্যাটে। ফিফটির পর মেরেছেন আরও দুই ছক্কা ও এক চার। ৪৭ বলে আউট হয়েছেন ৭৩ রান করে।
তবে তার আগেই খানিকটা মন্থর হয়ে যায় ভাইকিংসের রানের গতি। বিজয়ের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে ফেরেন আগের ম্যাচে রান পাওয়া স্টিয়েন ফন সিল। প্রথম ১০ ওভার থেকে ৯৩ রান নিয়েছিল ভাইকিংস। হাতে উইকেট রেখে শেষ দশ ওভারে তবু ছুঁতে পারেনি ২০০ রান।
শেষ তিন ওভারে অবশ্য বেশ খানিকটা পুষিয়ে নিতে পেরেছেন সিকান্দার রাজা। তার ১১ বলে ২৬ রানের ইনিংসে ১৮৭ পর্যন্ত পৌঁছায় ভাইকিংসের সংগ্রহ। পিচে ছিল প্রচুর রান। অন্তত ১০/১৫ রানের ঘাটতি যে ছিল ঢাকার ব্যাটিংয়ের সময় টের পাওয়া গেছে তা।
ঢাকার বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে খরুচে ছিলেন অধিনায়ক সাকিব। তার ৪ ওভার থেকে ৫১ রান তুলে নেয় ভাইকিংস। ঠিক উলটো চিত্র সুনিল নারিনের বেলায়। এই অফ স্পিনারের চার ওভারে রীতিমতো হাঁসফাঁস করেছে ভাইকিংস ব্যাটসম্যানরা। মাত্র ১১ রান দিয়ে এক উইকেট পান তিনি। ভাল করতে পারেননি অন্যরাও। বেদম মার খেয়েছেন শহিদ আফ্রিদি, আবু হায়দার রনিরা। ম্যাচ জেতায় পরে অবশ্য বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের খচখচানির কারণ হয়নি তা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
চিটাগাং ভাইকিংস:১৮৭/৫ (রঙ্কি ৫৯ , সৌম্য ১, বিজয় ৭৩, ফন সিল ২, জাদরান ১৬, সিকান্দার ২৬*, এমরিট ১* ; মোসাদ্দেক ০/৯, সাকিব ১/৫১, নারিন ০/১১, আফ্রিদি ০/২৯, রনি ১/৩৫, সাদ্দাম ০/২২, শহীদ ১/২৮)
ঢাকা ডায়নামাইটস:১৯১/৩ (লুইস ৭৫, আফ্রিদি ০, ডেনলি ৪৪, সাকিব ২২*, ডেলপোর্ট ৪৩* ; তাসকিন ১/৩৫, সিকান্দার ০/৩৭, আল-আমিন ০/১৯, এমরিট ১/২৪, সৌম্য ০/৩০, সানজামুল ০/২৬, তানবীর ১/২৮)
টস: চিটাগাং ভাইকিংস।
ফল: ঢাকা ডায়নামাইটস ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্যা ম্যাচ: এভিন লুইস
Comments