ঢাকাকে হারিয়ে শেষ চার নিশ্চিত করল কুমিল্লা

পোলার্ডদের ভুগিয়ে নায়ক এবার আরেক ক্যারিবিয়ান । দারুণ বল করে কুমিল্লাকে জিতিয়েছেন ডোয়াইন ব্রাভো।
ছবিঃ প্রবীর দাস

এবারও হিরো হতে পারতেন কাইরন পোলার্ড। শেষটায় পারলেন না আবারও। মেলাতে পারেননি শেষ পাঁচ ওভারে ৬০ রানের সমীকরণ। পোলার্ডদের ভুগিয়ে নায়ক এবার আরেক ক্যারিবিয়ান । দারুণ  বল করে কুমিল্লাকে জিতিয়েছেন ডোয়াইন ব্রাভো।

ব্যাট হাতে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় চ্যালেঞ্জিং স্কোর পেয়েছিল কুমিল্লা। ঢাকার শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপকে ভুগিয়ে ওই চ্যালেঞ্জে জিতেছেন তাদের বোলাররা। তাতে অগ্রনী ব্রাভো। চার ওভার বল করে  ৩১ রান দিয়ে নিয়েছেন ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়া তিন উইকেট। শেষ ওভারে দরকার ছিল ২১ রান। ঢাকা নিতে পেরেছে ৮ রান।

বুধবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে  কুমিল্লার দেওয়া ১৬৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করে ঢাকা থেমেছে ১৫৫ রানে। প্রথম দেখায় ঢাকাকে ৪ উইকেটে হারিয়েছিল কুমিল্লা। এবার  হারালো ১২ রানে। এই জয়ে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থাকার পাশাপাশি শেষ চার নিশ্চিত করেছে তামিম ইকবালরা। ওদিকে ১১ পয়েন্ট নিয়ে তিনে থাকা ঢাকা এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি পরের রাউন্ড।

রান তাড়ায় ঢাকার শুরুটা ভালো হয়নি। দ্বিতীয় ওভারেই ফিরে যান এভিন লুইস। শোয়েব মালিকের বলে তাকে দারুণ বুদ্ধিদীপ্ত স্টাম্পিং করেছেন লিটন দাস। আরেক ওপেনার জো ডেনলি সচল রাখেন রানের চাকা, খেলেছেন বড় বড় শট। প্রথমবার সুযোগ পেয়ে ওয়ানডাউনে নেমেছিলেন সাদমান ইসলাম। জড়তা কাটাতে পারেননি, তার আগেই ফিরেছেন রান আউট হয়ে।

বল হাতে আগের দিনের হিরো শোয়েব মালিক এদিনও দেখিয়েছেন মুন্সিয়ানা। আঁটসাঁটও বোলিং করে চেপে রেখেছেন ঢাকার চাকা। চার ওভার বল করে মাত্র ২৬ রান দিয়ে পকেটে পুরেছেন এভিন লুইসের দামি উইকেট।

সাকিবের বলে আউট হয়েছিলেন তামিম। ডোয়াইন ব্রাভোর বলে সাকিবের ক্যাচ আবার নেন তামিম। হয়ে যায় শোধবোধ। বল হাতে ভাল দিন কাটানোর ব্যাট হাতে ৭ রান করেই ফিরতে হলো তাকে। দলের জিততে তখনো ১০০ রানের বেশি দরকার। ওই ওভারেই সুনিল নারিনকেও ফিরিয়ে দেন ব্রাভো। ক্রিজে এসে সোজা ড্রাইভে চার মেরে শুরু করেছিলেন নারিন। শেষ বলটায় আবার খেলতে গিয়ছিলেন একই শট। এবার নিজের বলে ক্যাচ নিয়ে উল্লাস করেছেন ব্রাভো।

এই ব্রাভোই মোমেন্টাম এনে দেন কুমিল্লার দিকে। পরের ওভারে মাত্র চার রান দিয়ে বাড়ান ঢাকার চাপ। সে চাপ থেকে বেরুতে বাড়তি কিছু করার দরকার হয় ডায়নামাইটস ব্যাটসম্যানদের। ওপেনিংয়ে ফিফটির কাছেই ছিলেন ডেনলি। সাইফুদ্দিনের ইয়র্কার থার্ড ম্যান গলিয়ে পাঠাতে গিয়ে স্টাম্প ভেঙ্গে যায় তার। আউট হয়ে যান ফিফটির এক রান আগেই।

শেষ পাঁচ ওভারে জেতার জন্য ঢাকার দরকার ৬০ রান। হাতে পাঁচ উইকেটে। কুমিল্লার দিকে হেলে পড়া ম্যাচে ঢাকার পক্ষে একমাত্র বাজি কাইরন পোলার্ড। এই ক্যারিবিয়ান ক্রিজে এসে থিতু হতে সময় নিয়েছিলেন, অস্থির না হয়ে বাজে বল আনায়াসে পাঠান সীমানার বাইরে। তার ব্যাটিং অ্যাপ্রোচেই আস্থা খুঁজছিলেন সাকিবরা। সঙ্গী মোসাদ্দেক হোসেনও ছিলেন চনমনে। ১৭তম ওভারে পোলার্ডের ভুলে রান আউটে কাটা পড়েন তিনি। ভুলটা পরে  শোধরাতে পারেননি পোলার্ড।  ১৮তম ওভারে বল করতে এসে কাজের কাজটা করে ফেলেন ব্রাভো। মাথা খাটিয়ে দারুণ বল করতে থাকা এই ক্যারিবিয়ান স্বদেশী পোলার্ডকে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ বানিয়ে দেন ক্ষ্যাপাটে দৌঁড়। তখনই ম্যাচ জেতার উল্লাস ভিক্টোরিয়ান্সদের। শেষে এসে জহুরুল ইসলাম তাগদ দেখিয়েছিলেন। তাতে খানিকক্ষণ উত্তেজনা বেড়েছে। শেষ ওভারে জহুরুলের স্টাম্প উড়িয়ে উচ্ছ্বাস করেছেন সাইফুদ্দিন।

কুমিল্লার কেউই বড় রান পাননি। ত্রিশের উপর রান করেছেন তিনজন। বিশের উপর একজন। মাঝারি এসব ইনিংসে ভর করে মোটামুটি চ্যালেঞ্জিং স্কোরই পায় তামিমের দল।

টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ভালো শুরু পেয়েছিলেন তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। তামিমই ছিলেন বেশি আগ্রাসী। চোখ জুড়ানো সব শটে এগুচ্ছিলেন  টানা তিন নম্বর ফিফটির দিকে। তরতরিয়ে রান বাড়াতে থাকা তামিম আউট হয়েছেন বাজে শটে। বল হাতে নিয়ে দ্বিতীয় বলেই তামিমের উইকেট পান সাকিব। সাকিবের বলটা লেগ স্টাম্প বরাবর অনেক শর্ট হয়েছিল। তামিম অনায়াসে পাঠাতে পারতেন সীমানার বাইরে। কিন্তু  টাইমিংয়ে গড়বড় হলে তা যায়  ডিপ স্কয়ার লেগে দাঁড়ানো মোসাদ্দেকের হাতে। ৬০ রানে প্রথম উইকেট হারায় কুমিল্লা।

লিটন এদিন খেলছিলেন রয়েসয়ে। সুযোগ পেলে বের করেছেন বাউন্ডারি। কিন্তু এবারও ইনিংস বড় করতে পারেননি। ৩৪ রান করে সাকিবের বলে বেরিয়ে আসতে গিয়ে হয়েছেন স্টাম্পিং।  দ্রুত রান তুলার চাপে ২৬ রান করে আউট হন ইমরুল কায়েস। কুপারের স্লোয়ার বাউন্সার ঠিকমতো লাগাতে পারেননি ব্যাটে। স্যামুয়েলসের ২৭ বলে ৩৯ রানের ইনিংসও থামিয়েছেন কুপার।  তার ফুললেন্থের বল উড়ানোর চেষ্টায় লংঅফে ক্যাচ দেন তিনি, পরের বলে জস বাটলারও একই পথ ধরেন, তিনি ক্যাচ দিয়েছেন লংঅনে।

দারুণ বোলিং করেছেন ঢাকার দুই স্পিনার সাকিব আল হাসান ও সুনিল নারিন। বরাবরের মতই কিপটে নারিন চার ওভার বল করে মাত্র ১৫ রান দিয়েছেন। দলকে ব্রেক থ্রু পাইয়ে দেওয়া অধিনায়ক সাকিবের চার ওভার থেকে কুমিল্লা নিতে পেরেছে ২৩ রান, পড়েছে ২ উইকেট।

শেষ ওভার থেকে ১২ রান নিলে ১৭০ এর কাছে যেতে পারে কুমিল্লা। সেই রানই পর্যাপ্ত বানিয়ে ছেড়েছেন তাদের বোলাররা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স:১৬৭/৬ (তামিম ৩৭, লিটন ৩৪ , ইমরুল ২৮, স্যামুয়েলস ৩৯, বাটলার ৪,   মালিক ৯* , ব্রাভো ৬ , আলি  ৮*  ;  আবু হায়দার ০/৩৫ , কোপার ৩/৪২ , নারিন ০/১৫, শহীদ ০/২৬ , মোসাদ্দেক ০/২৪, সাকিব ২/২৩)

ঢাকা ডায়নামাইটস: ১৫৫/৮   (লুইস ৬, ডেনলি ৪৯,  সাদমান ৯, সাকিব ৭,  নারিন ৫, পোলার্ড ২৭, মোসাদ্দেক ১৭, জহুরুল ১৭, কোপার ৯*, আবু হায়দার ৫ * ; মেহেদী ০/১৬,  শোয়েব ১/২৬,  আলি ০/৩৮, আল-আমিন  ,  সাইফুদ্দিন , ব্রাভো  ৩/৩১)

টস: ঢাকা ডায়নামাইটস।   

ফল: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ১২ রানে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: ডোয়াইন ব্রাভো

Comments