কুমিল্লাকে গুড়িয়ে টানা দ্বিতীয় ফাইনালে ঢাকা
টুর্নামেন্টে আগের দুই দেখাতেই ঢাকা ডায়নামাইটসকে হারিয়েছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। অথচ জিততে পারল না আসল সময়ে। ফাইনালে উঠার ম্যাচে সাকিবদের কাছে পাত্তাই পায়নি তামিমরা। ব্যাটসম্যানরা ঢাকাকে পাইয়ে দিয়েছিলেন বিশাল সংগ্রহ। ওই পূঁজি নিয়ে বোলাররা তেতে উঠে গুড়িয়ে দিয়েছেন কুমিল্লার ইনিংস।
শুক্রবার মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে প্রথম কোয়ালিফায়ার ম্যাচে ঢাকার করা ১৯১ রানের লক্ষ্যে নেমে কুমিল্লার ইনিংস থেমেছে ৯৬ রানে। টানা দ্বিতীয় ফাইনালে যেতে বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের জয় ৯৫ রানের। হেরে গেলেও অবশ্য এখনি বাদ পড়েনি কুমিল্লা। ফাইনালে উঠার লড়াইয়ে ১০ তারিখ রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে লড়বে তারা।
পঞ্চম ওভারে মোসাদ্দেকের বলেই ঘুরিয়ে মিড উইকেট লোপ্পা ক্যাচ দিয়েছিলেন ইমরুল। ওখানে দাঁড়ানো সাদ্দাম জমাতে পারেননি হাতে। তবে তার দ্বিতীয় জীবনের আয়ু মাত্র এক বল। এক বল পরই কাট করতে গিয়ে ভেঙ্গেছে তার স্টাম্প। পাওয়ার প্লের মধ্যে ২৯ রানে তিন উইকেট হারিয়ে তখন ধুঁকছে ভিক্টোরিয়ান্স ইনিংস।
বিপর্যস্থ দলকে উদ্ধার করতে পারেননি অভিজ্ঞ স্যামুয়েলস আর তামিম। আবু হায়দার রনির বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ছয় রান করা স্যামুয়েলস। দলের তখন রান ৫৫, ওই রানেই কাটা পড়েন নিভু নিভু আশা হয়ে জ্বলতে থাকা তামিম ইকবালও। আফ্রিদির বলে বেরিয়ে এসে স্টাম্পিং হয়েছেন কুমিল্লা অধিনায়ক, পরের বলেই আউট ডোয়াইন ব্রাভো। যদিও এলবিডব্লিও সিদ্ধান্তে মাঠেই অষন্তোষ জানিয়ে গজরাতে গজরাতে বেরিয়ে যেতে দেখা গেছে ব্রাভোকে। ৫ রান পর রান আউট হয়ে ফেরেন সাইফুদ্দিন। সবার ব্যর্থতার দিনে শোয়েব মালিক পারেননি আলাদা হতে। ৭ রান করে ক্যাচ দিয়েছেন সাকিবের বলে। তামিমের ৩১ রান ছাড়া কুমিল্লার বাকি ব্যাটসম্যানদের ইনিংস যেন টেলিফোন ডিজিট। ৭১ রানেই নেই ৮ উইকেট।
একশো রানের মধ্যেই গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কার মধ্যে নেমে টেল এন্ডাররা খেলা লম্বা করেছেন। তবু তিন অঙ্কে যেতে পারেনি কুমিল্লা। গুটিয়ে গেছে ৯৬ রানে। ব্যাট হাতে ঝড়ো ৩০ রানের পর বোলিংয়ে ১৬ রানে তিন উইকেট নিয়ে ঢাকার নায়ক শহিদ আফ্রিদি।
প্রথম ম্যাচের সময় মনে হয়েছিল হুট করেই যেন ভাল গেছে মিরপুরের উইকেট। রংপুর অধিনায়ক মাশরাফিও ম্যাচ শেষে বললেন এটা আগের চেয়ে ভালো উইকেট। আচমকা বাউন্সগুলো প্রথম ম্যাচে খুব একটা দেখা যায়নি। ভালো উইকেটে বড় স্কোর গড়ে নির্ভার থাকতে চেয়েছিলেন সাকিব। টস জিতে তাই ব্যাটিং। তবে দ্বিতীয় ম্যাচের দুই ইনিংসেই দেখা গেছে আচমকা বাউন্স। তবে শিশিরে ভেজা বল পেটাতে অসুবিধা হয়নি ঢাকা ডায়নামাইটসের।
ওপেনিংয়ে প্রমোশন পাওয়া মেহেদী মারুদের জন্য শুরুটা অবশ্য ভাল হয়নি। মাত্র ৬ রান করে হাসান আলির বলে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। তবে পরের তিন ব্যাটসম্যানই তুলতে পেরেছেন ঝড়। তাই বিপদ বাড়েনি ঢাকার। এভিন লুইস দিচ্ছিলেন বিস্ফোরক কিছুরই ইঙ্গিত। তাকে থামিয়েছেন শোয়েব মালিক। তার আগে অবশ্য ৩২ বলে তিন ছক্কা আর ছয় চারে ৪৭ রান করে ফেলেছেন তিনি। তিনে নামা ডেনলির সঙ্গে ঝড় তুলতে চারে পাঠানো হয় পোলার্ডকে। প্রত্যাশা পূরণের পথেই ছিলেন ক্যারিবিয়ান ডানহাতি। ১৮ বলে ৩১ করা পোলার্ডকে আর বিপদজনক হতে দেননি ব্রাভো।
আরেক ক্যারিবিয়ান মারলন স্যামুয়েলসের মুন্সিয়ানায় কুমিল্লায় খানিকক্ষণ পরই পায় আরেক সাফল্য। দায়িত্ব নিয়ে খেলতে থাকা জো ডেনলিকে ক্ষীপ্র থ্রোতে রান আউট করে ছেঁটে ফেলেন স্যামুয়েলস। ব্রাভো পরের ওভারেই আউট করে দেন সাকিবকেও।
দ্রুত তিন উইকেট হারিয়ে ছন্দপতন হওয়া ঢাকার ইনিংসে শেষদিকে স্বস্তির ঝড় তুলেন শহিদ আফ্রিদি। তার চার ছক্কা ১৯ বলে ৩০ রানের ইনিংসে ঢাকা পেয়ে যায় ১৯১ রানের বিশাল পূঁজি। ওই স্কোরকে যথেষ্টেরও বেশি বানিয়ে ছেড়েছেন তাদের বোলাররা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ঢাকা ডায়নামাইটস:১৯১/৭ (মারুফ ৬, লুইস ৪৭, ডেনলি ৩২,পোলার্ড ৩১, সাকিব ৯, আফ্রিদি ৩০,মোসাদ্দেক ৩, নারিন ৯, জহুরুল ৩ ; মেহেদী ০/৩৮ , আলি ৩/১৬, সাইফুদ্দিন ০/৩০,মালিক ১/২৮, ব্রাভো ২/৪৫, আল –আমিন ০/২২)
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ৯৬/১০ (তামিম ৩১, লিটন ০, বাটলার ৫, ইমরুল ৯,স্যামুয়েলস ৬, মালিক ৭,ব্রাভো ০,সাইফুদ্দিন ০, আলি ১৮, মেহেদী ১৫*, আল-আমিন ০ ; মোসাদ্দেক ২/২৪ , সাকিব ২/১৯, নারিন ১/৯, আফ্রিদি ৩/১৬, আবু হায়দার ১/১৪, সাদ্দাম ০/১০)
টস: ঢাকা ডায়নামাইটস
ফল: ঢাকা ডায়নামাইটস ৯৫ রানে জয়ী।
Comments