বায়ু দূষণে বছরে ক্ষতি ২০ হাজার কোটি টাকা

বায়ু দূষণে বছরে ক্ষতি ২০ হাজার কোটি টাকা

অপরিকল্পিত ও দ্রুত নগরায়নের ফলে দেশের বিশেষ করে শহরাঞ্চলের মানুষ মারাত্মক বায়ু ও পানি দূষণের শিকার হচ্ছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র বায়ুদূষণের কারণেই প্রতি বছর বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) এক শতাংশের সমান ক্ষতি হচ্ছে। সম্প্রতি বিশ্ব ব্যাংকের এক গবেষণায় দেশের দূষণ পরিস্থিতির এই চিত্র উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী দেশের জিডিপি বর্তমানে ২০ দশমিক ৮৮ ট্রিলিয়ন ডলার। এই হিসাবে শুধুমাত্র বায়ুদূষণে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার সমান।

গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে গবেষণার প্রাথমিক কিছু ফলাফল উপস্থাপন করা হয়। আগামী বছরের শুরুতে বিশ্বব্যাংক গবেষণার বিস্তারিত ফল প্রকাশ করবে।

“বাংলাদেশ কান্ট্রি এনভায়রনমেন্ট এনালিসিস ২০১৭”  শিরোনামে পরিচালিত এই গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে বসবাসকারী লোকজন শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে যে বাতাস নিচ্ছে তা অত্যন্ত দূষিত। বিভিন্ন উৎস থেকে সিসা, আর্সেনিক, ক্যাডমিয়ামের মত ভারি ধাতু, সালফার ডাই অক্সাইড গ্যাস ও বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক মিশে বাতাসকে দূষিত করছে। দূষিত বাতাস মানুষের ফুসফুসে গিয়ে নানা ধরনের জটিলতা তৈরি করছে।

গবেষণায় আরও দেখা যায়, বছরের বেশ কয়েক মাস ঢাকা নগরী ও এর পার্শ্ববর্তী গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের বাতাস অত্যন্ত দূষিত থাকে। ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে দূষণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়।  

দেশে বায়ুদূষণের সবচেয়ে বড় উৎস হিসেবে ইট ভাটাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যেসব ক্ষুদ্র কণা (মাইক্রো পলুটেন্ট) বাতাসে মিশে একে দূষিত করে তার ৩৮ শতাংশই আসে ইট ভাটার চিমনি থেকে। অন্যদিকে মোটর যান ১৯ শতাংশ, রাস্তার ধুলা ১৮ শতাংশ, মাটির কণা নয় শতাংশ ও ধাতু গলানোয় সাত শতাংশ মাইক্রো পলুটেন্ট বাতাসে মিশছে।

বায়ু দূষণে নিয়ে আরেকটি মাথাব্যথার কারণ সীসা। ঢাকা ও এর আশপাশের ৫৯টি এলাকায় বসবাসকারী প্রায় ছয় লাখ মানুষ সীসা দূষণের ঝুঁকিতে রয়েছেন। গবেষণায় সীসা দূষণের উৎস হিসেবে ব্যাটারি রিসাইক্লিং করা হয়ে এমন ২০টি এলাকা, সীসা গলানো হয় এমন ২৩টি এলাকা, চারটি মাল্টিপল ইন্ডাস্ট্রি বিভিন্ন শিল্প কারখানাকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

সীসা দূষণের মারাত্মক স্নায়বিক রোগের কারণ। বিশেষ করে শিশুরা এতে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। ঢাকার কিছু শিল্প এলাকায় মানুষের প্রতি ডেসিলিটার রক্তে ১৪-১৫ মাইক্রোগ্রাম সীসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। রিপোর্টে আরও দেখা যাচ্ছে, এক টন কাপড় উৎপাদনে ওয়াশিং, ডাইং ও ফিনিশিং কারখানাগুলো থেকে ২০০টন দূষিত পানি ছাড়া হয়। ঢাকার আশপাশে এরকম ৭১৯টি কারখানা চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব কারখানার দূষিত পানি নদীতে মিশে স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ এ ধরনের দূষণের প্রধান ভুক্তভোগী।

এছাড়াও অতিবৃষ্টিতে ঢাকায় জলাবদ্ধতার কারণ ও করণীয় নিয়েও গবেষণায় আলোকপাত করা হয়েছে। জলাবদ্ধতার জন্য মূলত বিভিন্ন জলাধার ও খাল বিল ভরাট হয়ে যাওয়াকে দায়ী করা হয়েছে। এ থেকে উত্তরণে নগর পরিকল্পনায় জলাধারের উন্নয়ন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে সুপারিশ করা হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

'Why should an innocent person be punished?' says Jahangir on Hamid's arrival

The home adviser says Hamid will face legal consequences only if an investigation finds him guilty

1h ago