​‘মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য নিয়েই ১৯৭১ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হয়েছিল’

কলকাতায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান
লেফটেনেন্ট জেনারেল অভয় কৃষ্ণ
ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান লেফটেনেন্ট জেনারেল অভয় কৃষ্ণ। ছবি: স্টার

ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান লেফটেনেন্ট জেনারেল অভয় কৃষ্ণ বলেছেন, ১৯৭১ সালে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ হয়েছিল ঠিকই কিন্তু সেটা মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতায়। মুক্তিযোদ্ধারাও এই যুদ্ধের অংশীদার এবং সেই কারণে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে।

বাংলাদেশে বিজয় দিবস উদযাপনের ধারাবাহিক অনুষ্ঠানের অংশ হিসাবে শুক্রবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন প্রাক্তন কর্মকর্তা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বলে মন্তব্য করেছিলেন। ওই কর্মকর্তার লেখা ‘১২ দিনের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ’ শীর্ষক একটি বইয়েরও মোড়ক উন্মোচন হয় সেদিন সকালে। ভারতীয় প্রাক্তন সেনা কর্মকর্তার এই বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়।

শনিবার কলকাতায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চল শাখার বিজয় দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা এই বিতর্কের বিষয়ে দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় সেনা সদর দফতরের প্রধান লেফটেনেন্ট জেনারেল অভয় কৃষ্ণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তখন তিনি বলেন, “অবশ্যই ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা ছিল। তারাও এর অংশীদার ছিলেন। আর সেই কারণেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। যেহেতু পূর্ব পাকিস্তান ওই সময় পাকিস্তানের অংশ ছিল তাই স্বাভাবিকভাবেই ভারতীয় সেনাবাহিনীর পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করেছিল বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য।”

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ত্রিশ লাখ শহীদের পাশাপাশি ভারতীয় সেনাবাহিনীর বহু সদস্য প্রাণ দিয়েছিলেন। সেই সব শহিদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ভারতের সেনাবাহিনীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই কমান্ড প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর ‘বিজয় দিবস’ পালন করে।

victory day kolkata
কলকাতায় বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে আগত অতিথিবৃন্দ। ছবি: স্টার

এবারের বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, জাতীয় সংসদের প্রাক্তন চিফ হুইপ আব্দুস শহীদ, অধ্যাপক ডাক্তার প্রাণ গোপাল দত্ত ছাড়াও সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তা, তাদের পরিবার, মুক্তিযোদ্ধাসহ ৭২ জনের প্রতিনিধি দল অংশ নিয়েছেন।

শনিবার কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামের শহীদ সৌধে প্রধান অতিথি গৃহায়ণমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানানো হয়। তিনি ছাড়াও সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল অভয় কৃষ্ণ শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান এবং ভিজিটর বই-তে স্বাক্ষর করেন।

বাংলাদেশের তিন বাহিনীর পক্ষ থেকে মেজর জেনারেল এসএম শামীমউজ্জান, ক্যাপ্টেন মোহম্মদ আব্দুল মুকিদ খান এবং এয়ার কমান্ডার চৌধুরী মহিদুল হোসেনও শহীদ বেদিতে মাল্যদান করেন।

শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের পর আকাশ থেকে ভারতীয় বিমান বাহিনীর দুটি হেলিকপ্টার থেকে পুস্প বৃষ্টি করা হয়। এরপর আগত বাংলাদেশি প্রতিনিধি দলের সদস্যবৃন্দ গ্রুপ ফটোসেশনে অংশ নেন। অংশ নেন চা-চক্র এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায়ও।

সাংবাকিদের সাথে আলোচনায় প্রতিনিধি দলের প্রধান ও বিজয় উৎসবের প্রধান অতিথি বাংলাদেশের গৃহায়ণমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন বলেন, গেরিলা ট্রেনিংসহ কিভাবে একটি প্রশিক্ষিত বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করা যায় সেই যুদ্ধ কৌশল ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছ থেকে আমরা মুক্তিযোদ্ধারা পেয়েছিলাম। মুক্তিযোদ্ধারা ভেতরে থেকে, ভারতীয় সেনাবাহিনীকে পথ প্রদর্শন করে যৌথভাবে যুদ্ধ করে মাত্র ১৩ দিনের মধ্যে আমাদের দেশকে স্বাধীন করতে পেরেছিলাম।

তিনি এসময় বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, কুটনীতি ছাড়াও তার দফতর নিয়েও বেশ কিছু প্রশ্নের জাবাব দেন। তিনি জানান, আগামী পাঁচ বছরে ২৫ হাজার ফ্ল্যাটবাড়ি তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে তার সরকার। এর ফলে মাত্র ছয় হাজার টাকা মাসিক ভাড়ায় শুধুমাত্র বস্তির মানুষদের থাকার সুযোগ সৃষ্টি হবে।

প্রথম পর্যায়ে সাড়ে পাঁচশো ফ্ল্যাট দিয়ে খুব শিগগিরই এই কমসূচি বাস্তবায়ন শুরু হবে। পরে ধাপে ধাপে আগামী পাঁচ বছরে ১৫ হাজার ফ্ল্যাট তৈরি করে গরিবদের মধ্যে ভাড়া দেওয়া হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Yunus promises election on time

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus yesterday reaffirmed his commitment to holding the 13th national election in the first half of February next year.

7h ago