যে পাঁচ ঘটনায় বছরজুড়ে আলোচনায় ছিল দেশের ক্রিকেট
'বিদায়' বলতে হয়েছিল মাশরাফিকে
দেশের ক্রিকেটে বছরের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে মাশরাফির আকস্মিক অবসর। শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজের আগের দিনও টের পাওয়া যায়নি কি হতে যাচ্ছে। ৪ এপ্রিল একদম ম্যাচের ঘন্টাখানেক আগে নিজের ফেসবুক পাতায় অবসরের ঘোষণা দেন মাশরাফি। পরে টসের সময়ও বলেন অবসরের কথা। তবে তার আকস্মিক অবসরে শুরু হয় বিতর্ক। গুঞ্জন উঠে তাকে আসলে অবসর নিতে বাধ্য করেছে টিম ম্যানেজম্যান্ট। মাশরাফি অবশ্য নিজের ইচ্ছায় টি-টোয়েন্টি ছাড়ার কথা জানান। ২০০৬ সালে দেশের প্রথম টি-টোয়েন্টি থেকে খেলা মাশরাফি অধিনায়ক হিসেবেই খেলেন নিজের শেষ ম্যাচ। ওই ম্যাচে তাকে জয় দিয়ে বিদায় দিতে পেরেছিল বাংলাদেশ।
র্যাঙ্কিংয়ের সেরা আটে থেকে বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলা নিয়েও অনেকে ভুরু কুঁচকেছিলেন। খেলা যখন আবার ইংল্যান্ডে , চ্যাম্পিয়নদের আসরে টাইগাররা আর কতদূর যেতে পারে, প্রশ্ন ছিল তা নিয়েও। তবে গোটা বিশ্বের চোখ কপালে তোলে কঠিন গ্রুপ থেকে বাংলাদেশই উঠে যায় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে। ইংল্যান্ডের সঙ্গে হার দিয়ে শুরু, বৃষ্টিতে ভেসে যায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ। শেষ ম্যাচ সাকিব আল হাসান আর মাহমুদউল্লাহর অসাধারণ ব্যাটিংয়ে হারিয়ে দেয় নিউজিল্যান্ডকে। অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডকে টপকে বাংলাদেশই উঠে যায় সেরা চারে। সেমিতে অবশ্য ভারতের বিপক্ষে কুলিয়ে উঠতে পারেনি মাশরাফির দল।
নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বারবার তারিখ করেও বাংলাদেশে আসছিল না অস্ট্রেলিয়া। অবশেষে সকল শঙ্কা দূর হয় এই বছরেই। দুই টেস্ট খেলতে বাংলাদেশে আসে স্টিভেন স্মিথের দল। আগের বছর ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডকে হারানোর রেসিপি তৈরিই ছিল। স্পিনের জন্য ফের মশলাধার পিচ বানিয়ে অসিদের নাচিয়ে ছাড়েন সাকিব আল হাসান। তার ঘূর্ণির জবাব ছিল না স্মিথ, ওয়ার্নারদের। সঙ্গে পেয়েছিলেন তাইজুল, মিরাজকে। আগস্ট মাসে তারা মিলে মিরপুর টেস্টে কুলিন অস্ট্রেলিয়াকে ধসিয়ে দেন। ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে ২০ রানের জয় পাইয়ে দেন সাকিব আল হাসান। প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়াকে টেস্টে হারিয়ে দেয় লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
পরিসংখ্যানে সবচেয়ে সফল হলেও কোচ চণ্ডিকা হাথুরুসিংহকে নিয়ে ডানা মেলছিল নানা বিতর্ক। গুঞ্জন আছে, সিনিয়র ক্রিকেটারদের একে একে সরিয়ে ফেলে তরুণদের নিয়ে নাকি আগাতে চেয়েছিলেন তিনি। দল নির্বাচনে সরাসরি তার ক্ষমতা থাকায় সে গুজঞ্জ আরও জ্বালানি পায়। দক্ষিণ আফ্রিকায় কঠিন সফরে টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে তার মনোমালিন্য প্রকাশ্য হয়ে উঠলে অস্বস্তিতে পড়ে টিম ম্যানেজমেন্ট। ওই সফরের মধ্যেই বিসিবির কাছে পদত্যাগ পত্র জমা দেন কোচ। তবে তার পদত্যাগের খবর বেশ কিছুদিন গোপন করে রাখে বিসিবি। শেষ পর্যন্ত তাকে ফেরানোর চেষ্টায় ব্যর্থ হন বোর্ড কর্তারা। নিজ দেশ শ্রীলঙ্কার দায়িত্ব নিয়ে নতুন বছরের শুরুতেই বাংলাদেশে আসবেন তিনি।
দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেই অনেকটা আঁচ করা যাচ্ছিল মুশফিকুর রহিমের ভাগ্য। সংবাদ সম্মেলনে টিম ম্যানেজমেন্ট ও দলের বোলারদের নিয়ে বেফাঁস কথা বলে সিরিজ চলাকালীনই সমালোচিত হন অধিনায়ক। তার অধিনায়কত্ব নিয়ে আগের সব সমালোচনার যোগফলে ধারণা করা যাচ্ছিল পরের সিরিজেই সম্ভবত শেষ হচ্ছে মুশফিকের অধ্যায়। তবে ঘোষণাটা আসে বছরের শেষ দিকে। বিপিএলের কোয়ালিফায়ার রাউন্ড চলার সময় বিদায়ী কোচ হাথুরুসিংহে আনুষ্ঠানিকতা সারতে আসেন বাংলাদেশে। এর একদিন পরই বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন জানিয়ে দেন, মুশফিকুর রহিমের বদলে ফের সাকিব আল হাসানই নতুন টেস্ট অধিনায়ক।
Comments