‘পদ্মাবত’ নাম নিয়ে পদ্মাবতী বিতর্কের অবসান হবে!
বছরের শেষ দিনও বিতর্ক পিছু ছাড়ল না সঞ্জয় লীলা বানসালির ‘পদ্মাবতী’ ছবি নিয়ে। ভারতীয় সেন্সরবোর্ড এই ছবির নাম পাল্টে ‘পদ্মাবত’ রাখার শর্তে ছবিটি প্রদর্শনে ছাড়পত্র দেওয়ার কথা জানিয়েছে।
শুধু নাম নয়। টিম পদ্মাবতীকে ছবি থেকে কেটে বাদ দিতে হবে সেন্সের বোর্ডের চিহ্নিত করে দেওয়া পাঁচটি দৃশ্যও।
আর এই শর্তগুলো মেনে নিলেই ২০১৮ সালে ‘পদ্মাবত’ নাম নিয়ে মুক্তি পেতে পারে ২০১৭ সালের বহুল চর্চিত ঐতিহাসিক পটভূমিতে নির্মিত ১৫০ কোটি রুপি বাজেটের ছবিটি।
ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরাখবর থেকে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে পরিচালক সঞ্জয় লীলা বানসালি সেন্সর বোর্ডের এমন শর্ত মেনে নিতে পারেন। তবে এখনও তিনি মুখ খোলেননি।
বছরের শেষ দিন অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর ভারতীয় গণমাধ্যমে পদ্মবতী ছবির ‘সর্তসাপেক্ষে মুক্তি’; এই জাতীয় খবর গুরুত্ব পেয়েছে। টেলিভিশন চ্যানেল থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুক-টুইটারে ফিরছে পদ্মাবতী বিতর্ক।
সেন্সর বোর্ড কোন শর্তগুলো দিয়েছে- এর খোঁজ নিতে গিয়ে জানা যাচ্ছে ইতিহাসবিদদের নিয়ে গড়া এই বিতর্ক বিষয়ক একটি প্যানেলের চূড়ান্ত বৈঠক বসে গত ২৮ ডিসেম্বর দুপুরে। ওই বৈঠকের আয়োজক ছিল ভারতীয় সেন্সর বোর্ড। প্রায় তিন ঘণ্টা জুড়ে ইতিহাসবিদ এবং সেন্সরবোর্ডের কর্মকর্তারা বৈঠকে চূড়ান্ত করেন ‘পদ্মাবত’ নাম নিয়ে ছবিটি আসতে হবে। বেশ কিছু দৃশ্যকে চিহ্নিত করে সেগুলো ছবিতে আগে-পিছে করে দিতে হবে। সতী চরিত্রকে আরও কম গুরুত্ব দিয়ে দেখাতে হবে। ‘ঘুমর’ গানের দৃশ্যের অধিকাংশ কেটে বাদ দিতে হবে।
পরিচালকের চিন্তাভাবনা এবং সমাজ ব্যবস্থার ভারসাম্য বজায় রাখতে এই সিদ্ধান্ত বলেও বৈঠকে বলা হয়। এই সিদ্ধান্তগুলো আজ ৩১ ডিসেম্বর চিঠির মাধ্যমে সরকারিভাবে পরিচালক সঞ্জয় লীলা বানসালিকে জানানো হবে।
১ ডিসেম্বর ভারতজুড়ে পদ্মাবতী মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এরই মধ্যে বিতর্ক শুরু হয়। ছবির একটি নাচের দৃশ্য নিয়ে প্রথমে আপত্তি উঠে। বলা হয়, ওই নাচে আলাউদ্দিন খিলজির রানীর কোমর দেখানো হয়েছে। দেখানো হয়েছে আলাউদ্দিন খিলজির সঙ্গে বেশ কিছু ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত, যা ইতিহাসে নেই।
এমন অভিযোগগুলো মূলত মারাঠি করণী সেনাদের তরফ থেকে জোরালো হয়। এরপর তারা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। এমন কি রাণী চরিত্রের অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোনের মাথা কেটে নেওয়ার ফতোয়াও জারি করা হয়। এরই মধ্যে পদ্মাবতী ছবির বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী এক ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মৃতদেহের পকেটে পাওয়া যায় চিরকুট। সেখানে ‘পদ্মাবতী’ নিয়ে মৃত ব্যক্তি তার ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন।
পরিস্থিতি জটিল হতে দেখে পরিচালক সঞ্জয় লীলা বাসনসলিকে সংসদীয় প্যানেলে ডেকে পাঠানো হয়। সেখানে পরিচালক জানিয়েছিলেন, সিনেমার গল্প তৈরি করা হয়েছে ষোড়শ শতকের মালিক মোহম্মদ জয়সীর লেখা ‘পদ্মাবত’ কবিতা থেকে। এখানে ইতিহাস বিকৃত করার কোনও সুযোগ নেই।
সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে ইতিহাসবিদদের নিয়ে একটি প্যানেল গড়ে তাদের রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে সেন্সর বোর্ডকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশ দেয় সংসদীয় দল। ওই নির্দেশের প্রেক্ষিতে ২৮ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয় হয়।
বলা হয়, ‘পদ্মাবত’ কবিতার নামেই হোক পদ্মাবতীর সংশোধিত নাম। বিতর্কের অবসান হোক।
Comments