বিতর্কে ক্লিওপেট্রার রূপ-সৌন্দর্য

বিতর্ক উঠেছে মিশরীয় সম্রাজ্ঞী ক্লিওপেট্রার রূপ-সৌন্দর্য নিয়ে। কেননা, এই রমণীর ভুবন-ভোলানো সৌন্দর্যের যে বর্ণনা পাওয়া যায় তা সবই এসেছে পুরুষদের হাত দিয়ে। নারীদের চোখে ক্লিওপেট্রার রূপ কেমন অথবা ক্লিওপেট্রা নিজেকে কতটা সুন্দর ভাবতেন বা আদৌ তিনি নিজের সৌন্দর্যের ব্যাপারে সচেতন ছিলেন কী না এসব এখন বিতর্কের বিষয়।
cleopatra
প্রাচীন শিল্পীর চোখে মিশরীয় সম্রাজ্ঞী ক্লিওপেট্রা

বিতর্ক উঠেছে মিশরীয় সম্রাজ্ঞী ক্লিওপেট্রার রূপ-সৌন্দর্য নিয়ে। কেননা, এই রমণীর ভুবন-ভোলানো সৌন্দর্যের যে বর্ণনা পাওয়া যায় তা সবই এসেছে পুরুষদের হাত দিয়ে। নারীদের চোখে ক্লিওপেট্রার রূপ কেমন অথবা ক্লিওপেট্রা নিজেকে কতটা সুন্দর ভাবতেন বা আদৌ তিনি নিজের সৌন্দর্যের ব্যাপারে সচেতন ছিলেন কী না এসব এখন বিতর্কের বিষয়।

ক্লিওপেট্রার রূপ-সৌন্দর্য নিয়ে হালের বিতর্কটি উঠেছে এলিজাবেথ টেলর অভিনীত ‘ক্লিওপেট্রা’ ছবিটির রিমেকের খবরকে কেন্দ্র করে। ‘ব্লেড রানার ২০৪৯’-এর পরিচালক ডেনিস ভিলেনুভ ‘ক্লিওপেট্রা’-কে নিয়ে নতুন করে ভাবছেন। এমন প্রকল্পে অনেকদিন থেকেই যুক্ত রয়েছেন হলিউডের শীর্ষ অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। ‘দ্য লাস্ট ক্যাসল’-খ্যাত চিত্রনাট্যকার ডেভিড স্কারপা তৈরি করেছেন নতুন ‘ক্লিওপেট্রা’-র গল্প।

তাই প্রশ্ন উঠেছে কেমন ক্লিওপেট্রাকে উপস্থাপন করা হবে ২১ শতকের রূপালি পর্দায়? আসলেই দেখতে কেমন ছিলেন প্রাচীন মিশরের বহুল-চর্চিত এই সম্রাজ্ঞী? ৭০ মতান্তরে ৬৯ খ্রিষ্টপূর্বে জন্ম নেওয়া এই মিশরীয় রানিকে নিয়ে যুগে যুগে সৃষ্টি হয়েছে কত না কল্প-কথা। তাঁর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছিলেন বিখ্যাত রোমান বীর জুলিয়াস সিজার ও মার্ক অ্যান্তোনি; বিমোহিত হয়েছিলেন ফরাসি দার্শনিক প্যাসকাল। উইলিয়াম শেক্সপিয়ার এই নারীকে এনেছিলেন তাঁর নাটকে। সবশেষে, হলিউড তাঁকে দিয়েছে অমরত্বের নতুন স্বাদ।

মাত্র ৪০ বছর বয়সে মারা যাওয়া ক্লিওপেট্রাকে নিয়ে গবেষণা গ্রন্থ বের করেছেন ম্যাঞ্চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের মিশরবিদ্যা বিষয়ের শিক্ষিকা জয়েস টিলডেসলি। তিনি তাঁর ‘ক্লিওপেট্রা: দ্য লাস্ট কুইন অব ইজিপ্ট’ বইয়ে এই রানির রূপ-সৌন্দর্য দেখতে চেয়েছেন একজন নারীর চোখ দিয়ে। এছাড়াও, হাজার বছর আগের রোমানদের সৌন্দর্য-ভাবনা ও আজকের দুনিয়ার সৌন্দর্যের ধারণার মধ্যে ফারাক অনেক।

যেসব মুদ্রা বা আবক্ষ-মূর্তির মাধ্যমে ক্লিওপেট্রাকে প্রাচীনকাল থেকে মানুষ দেখে আসছেন সেখানে দেখা যায় এই নারীর রয়েছে লম্বা নাক ও থুতনি। কিন্তু, সেগুলোই বা কতটা বাস্তবসম্মত? কেননা, ভাড়া করা শিল্পীদের দক্ষতার ওপরে নির্ভর করে প্রাচীন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী একজন রানির প্রকৃত রূপ নির্ধারণ করা কতোটুকু যুক্তিসম্মত হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সেই গবেষক।

তিনি বলেন, “লোকজনের মনে হতে পারে, ক্লিওপেট্রার ছবি দিয়ে যে মুদ্রাগুলো তৈরি করা হয়েছে তা তাঁর জীবন-ঘনিষ্ঠ। কিন্তু, আপনি যদি সেগুলো দেখেন তাহলে বুঝতে পারবেন তিনি আসলে তেমন সুন্দর ছিলেন না। মুদ্রাগুলোতে দেখা যায়, ক্লিওপেট্রার লম্বা নাক ও থুতনি।”

Cleopatra coin
প্রাচীন মুদ্রায় ক্লিওপেট্রার ছবি।

রোমান রাষ্ট্রনায়ক দিও ক্যাসিয়াস লিখেছিলেন, “সে সময়ে ক্লিওপেট্রার ছিলো অবাক করার মতো রূপ। তাঁর যৌবনকালের রূপ ছিলো আরো মোহনীয়।” গ্রিক জীবনীলেখক প্লুটার্কের ভাষায়, “সেই নারী তাঁর রূপ নিয়ে বেশ গর্বিত ও অহংকারী ছিলেন।”

ইতিহাসবিদরা সবসময়ই ক্লিওপেট্রার গায়ের রঙ কতোটা কালো ছিলো বা তাঁর নাক কতোটা লম্বা ছিলো অথবা তাঁর সৌন্দর্যের বিভিন্ন দিক নিয়ে সবসময়ই বিতর্কে লিপ্ত ছিলেন। তবে টিলডেসলির মন্তব্য, “আমরা যদি প্রকৃত ক্লিওপেট্রাকে জানতে চাই তাহলে তাঁর সম্পর্কে এতোদিন যা জেনে এসেছি তা ভুলে যেতে হবে। বাছবিচারহীনভাবে আবার নতুন করে শুরু করতে হবে ক্লিওপেট্রা-চর্চা।”

এই লেখিকার মতে, এতোদিন ক্লিওপেট্রাকে একজন আবেদনময়ী নারী হিসেবেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। “আমি মনে করি, আমরা যেন তাঁকে সেইসব গল্প-কথার মতো করেই দেখতে চাই। কিন্তু, তা ঠিক নয়।”

সেই শিক্ষিকার গবেষণা কর্মে ক্লিওপেট্রাকে দেখা যায় একজন “কূটবুদ্ধি-সম্পন্ন নারী” হিসেবে। কেননা, এই মিশরীয় সম্রাজ্ঞী তাঁর বাবা দ্বাদশ টলেমির মৃত্যুর পর প্রায় ২০ বছর মিশর দখলের হাত থেকে শক্তিশালী রোমান সাম্রাজ্যকে ঠেকিয়ে রেখেছিলেন। এমনকি, তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দেশটির অর্থনীতিকেও মজবুত রেখেছিলেন। কিন্তু, সেসব কথা ভুলে সবাই যেন ডুবে রয়েছেন সেই রানির রূপ-সৌন্দর্যে।

টিলডেসলির কথার সূত্র ধরে ঔপন্যাসিক রাধিকা সানঘানির মন্তব্য, হলিউডে এখন নারীর সৌন্দর্যের যে ধারণা রয়েছে সেই হিসেবে ক্লিওপেট্রার প্রকৃত রূপ এই সমাজের মানুষের কাছে কতটা আবেদন সৃষ্টি করতে পারবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

Comments

The Daily Star  | English
Gazipur factory fire September 2024

Column by Mahfuz Anam: Business community's voice needed in the interim government

It is necessary for keeping the wheels of growth running and attracting foreign investment in the new Bangladesh.

7h ago