বাংলাদেশের সামনে এবারও পেরে উঠল না জিম্বাবুয়ে

সাকিব আল হাসান আর তামিম ইকবালের দুই অর্ধশতক পরে বোলিং ইউনিটের একসঙ্গে তেতে উঠায় কুলিয়ে উঠতে পারেনি গ্রায়েম ক্রেমারের দল।
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

অল্প রান করেও পা হড়কায়নি বাংলাদেশ। ত্রিদেশীয় সিরিজে উড়তে থাকা মাশরাফির দলের কাছে এবারও পাত্তা পায়নি জিম্বাবুয়ে। সাকিব আল হাসান আর তামিম ইকবালের দুই অর্ধশতক পরে বোলিং ইউনিটের একসঙ্গে তেতে উঠায় কুলিয়ে উঠতে পারেনি গ্রায়েম ক্রেমারের দল।

বাংলাদেশের ২১৬ রানের জবাবে জিম্বাবুয়ে গুটিয়ে গেছে ১২৫ রানে।  মঙ্গলবার মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়েকে ৯১  রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। আবারও ব্যাটে-বলে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন সাকিব। ব্যাট হাতে ৫১ রান করার পর ৩৪ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন তিনি। এই হারে ফাইনালে উঠার পথ বেশ কঠিন হয়ে গেছে জিম্বাবুয়ের।

কিছুটা স্যাঁতস্যাঁতে উইকেট, ছিল অসমান বাউন্সও। তবু টস জিতে ব্যাটিং নিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি মর্তুজা। উদ্বোধনী জুটি না জমলেও ছন্দে ছিলেন সাকিব-তামিম। টানা তিন ম্যাচে অর্ধশতকের উপর জুটিটা এবার নিয়ে গিয়েছিলেন শতরান পেরিয়ে। তবে এই দুজনের পর আর টিকতে পারেননি কেউ। ফলে ২১৬ রান করতে পেরেছিল বাংলাদেশ।

পূঁজিটা খুব বেশি না। জিততে হলে শুরু থেকেই দরকার আক্রমণ। বোলিংয়ের জন্যে মিরপুরের মশলাধার পিচের ভাষা পড়ে জিম্বাবুয়েরও নড়বড়ে অবস্থা। তাতে শুরু থেকেই পেয়ে বসল বাংলাদেশ। শুরুটা করলেন অধিনায়ক মাশরাফিই। অল্প গতিতেও বল উঠালেন দারুণভাবে, সঙ্গে আউটস্যুয়িং, ইনস্যুয়িং মিলিয়ে দারুণ এক প্যাকেজ। তার এমন ঝাঁজ সামলাতে পারেননি হ্যামিল্টন মাসাকাদজা। ১৪ রানে তাকে স্লিপে সাব্বিরের ক্যাচ বানিয়ে উইকেট উপড়ানো শুরু।

ছয় রান পর এতে যোগ দেন সাকিব। পর পর দুই বলে তিনি আউট করে দেন সুলেমান মিরে আর ব্র্যান্ডন টেইলরকে। টানা দুই ম্যাচে হ্যাট্রিকের সম্ভবনা জাগিয়েছিলেন। হ্যাটট্রিক না পেলেও ছোবল থামেনি।  

ছবি: ফিরোজ আহমেদ
খানিক পর মাশরাফির বল আরভিনের ব্যাটে ছোবল দিয়ে যায় স্লিপে। ৩৪ রানেই চার উইকেট খুইয়ে  বসে ক্রেমারের দল। ২১৭ রানের লক্ষ্য ততক্ষণে পাহাড়সম। তখন বল করতেই আসেননি মোস্তাফিজুর রহমান।

এই পিচে মোস্তাফিজ কতটা উপযোগী বুঝিয়েছেন বল করতে এসে। প্রথম তিন ওভারের সবগুলাই মেডেন। চতুর্থ ওভারের শেষ বলে দেন প্রথম রান।

ধুঁকতে থামা জিম্বাবুয়ের প্রতিরোধে ছিলেন সিকান্দার রাজা। পিটার মুরকে নিয়ে শুরু করেন প্রথম চেষ্টা। মুরের বিদায়ে ভাঙে তাদের ৩৪ রানের জুটি। বাঁহাতি স্পিনার সানজামুল ইসলামেও জাগিয়েছিলেন হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা। মুরকে আউট করার পরের বলেই তুলে নেন ওলারকে। সিকান্দারের সঙ্গে ক্রেমারের জুটিটা জমতে দেননি রুবেল। জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক ২৩ রান করে ফেরেন এলবিডব্লিও হয়ে।

জিম্বাবুয়ের শেষ সেনপতি হয়ে লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছিলেন সিকান্দার। পরের স্পেলে ফেরা মোস্তাফিজকে এবার আর সামলাতে পারেননি। তার কাটার কীভাবে খেলবেন থতথম হয়ে টেনে আনেন স্টাম্পে। শেষ উইকেটটিও নিয়ে জিম্বাবুয়ের ইনিংস শেষ করে দেন মোস্তাফিজ।

তবে বিকালে বেশ অস্বস্তিতেই পড়েছিল বাংলাদেশ। ১৪৭ রানে তৃতীয় উইকেট পড়ার পর ১৭০ পর্যন্ত যেতেই ৮ উইকেট হারিয়ে বিব্রত তখন টাইগার স্কোয়াড। শেষ দুই উইকেট নিয়ে আরও ৪৬ রান এসেছে টেল এন্ডারদের দৃঢ়তায়। এই সিরিজের আগে টেল এন্ডারদের ব্যাটিং নিয়ে কাজ করেছিলেন খালেদ মাহমুদ। তার কিছুটা ফল মিলেছে বিরূপ পরিস্থিতিতে। সানজামুল ১৯, মোস্তাফিজ ১৮ আর রুবেলের অপরাজিত ৮। এই তিনজনের ব্যাট থেকে ৪৫ রান না এলে আরও করুণ অবস্থা হতো দলের।

বাংলাদেশে ইনিংসের গল্পটা অবশ্য দুইভাগে ভাগ করা যায়। সাকিব-তামিমের জুটি আর বাকি সবার ব্যাটিং। ২১৬ রানের মধ্যে তামিমের ৭৬, সাকিবের ৫১ রানের পর তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সানজামুলের ১৯। মুশফিক করেছেন ১৮, মোস্তাফিজও তাই। বাকি কেউই যেতে পারেননি দুই অঙ্কে।

তৃতীয় ওভারে উইকেট পতন দিয়ে শুরু। আগের দুই ম্যাচেও বড় রান পাননি এনামুল হক বিজয়। কিন্তু দলের চাহিদা মেটাতে পেয়েছিলেন দ্রুত শুরু এনে। এদিন হলো না কিছুই। ৭ বলে ১ রান করে কাইল জার্ভিসের বলে এলবডব্লিও হয়ে যান তিনি।

তবে দ্বিতীয় উইকেটে সাকিব-তামিমের ১০৬ রানের জুটির সময় মনে হচ্ছিল দলের স্কোর আনায়াসে পেরিয়ে যাবে ২৭০-২৮০। কিন্তু এ দুজনের এনে দেওয়া ভীত মিডল অর্ডারে ধরে রাখতে পারেননি মুশফিক, মাহমুদউল্লাহরা।

তবে ওই রানই পরে জিম্বাবুয়ের জন্যে যথেষ্টেরও বেশি হয়ে যায় বাংলাদেশের দারুণ বোলিংয়ে

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ:  ২১৬/৯ (৫০)  (তামিম ৭৬, বিজয় ১, সাকিব ৫১, মুশফিক ১৮, মাহমুদউল্লাহ ২, সাব্বির ৬,   নাসির ২,  মাশরাফি ০, সানজামুল ১৯, মোস্তাফিজ ১৮*, রুবেল ৮*  ; জার্ভিস ৩/৪২, চাতারা ১/৩৩, মুজারব্বানি ০/৩৬, সিকান্দার ১/৩৯, ক্রেমার ৪/৩২, ওলার ০/৩২ )

জিম্বাবুয়ে: ১২৫ (৩৬.৩)   (মাসাকাদজা ৫, মিরে ৭, আরভিন ১১, টেইলর ০, সিকান্দার ৩৯, মুর ১৪, ওলার ০, ক্রেমার ২৩, চাতারা ৮, জার্ভিস ১০ , মুজারব্বানি ০* ; সাকিব ৩/৩৪, মাশরাফি ২/২৯, সানজামুল ২/২৮, মোস্তাফিজ ২/১৬, রুবেল ১/১৮)

ফল: বাংলাদেশ ৯১ রানে জয়ী।  

Comments

The Daily Star  | English

Nothing wrong if people think new political party needed: Tarique

Only free, fair polls can ensure direct partnership between people and state, says BNP acting chairman

53m ago