বিব্রতকর ব্যাটিং, বিশাল হার

শ্রীলঙ্কার কাছে বিব্রতকর হার বাংলাদেশের। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

স্কোর কার্ড দেখে মনে হতে পারে উইকেটে বুঝি ছিল কোন জুজু। তবে বাংলাদেশে ব্যাটিং দেখলে সে ভ্রান্তি থাকার কথা নয়। একের পর এক উইকেট বিলিয়ে দেওয়ার মিছিলে মাত্র ৮২ রানে গুটিয়ে শ্রীলঙ্কার কাছে উড়ে গেছে  মাশরাফি মর্তুজার দল। দিবারাত্রির খেলা শেষ হয়ে গেছে দিনের আলোতেই। 

বৃহস্পতিবার মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে গল্পটা কেবল বাংলাদেশের ব্যাটিং বিপর্যয়ের। ফাইনালে উঠতে এই ম্যাচে জেতা দরকার ছিল লঙ্কানদের। বোনাস পয়েন্টসহ বাংলাদেশকে ১০ উইকেটে গুঁড়িয়ে ফাইনালে উঠেছে শ্রীলঙ্কা। দুদলের প্রথম দেখায় ১৬৩ রানে জিতেছিল বাংলাদেশ। ফাইনালের আগে বিশাল জয়ে জবাব দিয়ে রাখল শ্রীলঙ্কাও।

ত্রিদেশীয় সিরিজের সব ম্যাচেই বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের ভরসার নাম ছিলেন তামিম ইকবাল আর সাকিব আল হাসান। বড় জুটিতে প্রতি ম্যাচেই তারাই তৈরি করে দিয়েছিলেন ম্যাচের সুর। এদিন তারা দুজনেই ব্যর্থ। হাল ধরতে পারেননি আর কেউ। হয়েছে অবিশ্বাস্য রকমের বাজে শটের প্রতিযোগিতা।

৮২ রানে গুটিয়ে যাওয়ার ইনিংসে বাংলাদেশ খেলতে পেরেছে ২৪ ওভার। বাংলাদেশের বোলারদের পিটিয়ে শ্রীলঙ্কার দুই ওপেনার সেই রান তুলে ফেলেন মাত্র  ১১.৫ ওভারেই। দুদলের ইনিংস মিলিয়েও তাই খেলা হয়েছে মোটে  ৩৫.৫ ওভার। দারুণ ফিল্ডিংয়ে অবদান রাখা গুনাথিলেকা অপরাজিত ছিলেন ৪০ রানে, থারাঙ্গা ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছে ৩৪ রানে। 

ঘরের মাঠে চার বছর আগে একশ রানের নিচে অলআউট হয়েছিল বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে সেদিনের পিচও ছিল পেস বান্ধব। বদলে যাওয়া বাংলাদেশ ব্যাটিং স্বর্গে উইকেট বিলিয়ে অবিশ্বাস্যভাবে গুটিয়ে গেছে ৮২ রানে। আগের তিন ম্যাচে দাপটের সঙ্গে জেতার পর হঠাৎ এমন দশা বেশ অবাক করারই মতো। নিজেদের ইতিহাসে একশো রানের নিচে গুটিয়ে যাওয়ার এটি ১৬তম ঘটনা, অষ্ঠম সর্বনিম্ন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেই ২০০২ সালে কলম্বোতে একবার ৭৬ রানে অল আউট হয়েছিল, লঙ্কানদের বিপক্ষে তিন অঙ্কের নিচে থামার ঘটনা এই নিয়ে দ্বিতীয়বার।

পতনের শুরুটা এনামুল হক বিজয়কে দিয়ে। তিন বছর পর দলে ফিরে কিছু একটা করে দেখানোর সুযোগ ছিল তার। প্রথম তিন ম্যাচের মতো এদিনও হেলায় হারিয়েছেন সে সুযোগ। তৃতীয় ওভারেই কোন রান না করেই ফিরে যান তিনি। সুরাঙ্গা লাকমালের অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল জায়গায় দাঁড়িয়ে টেনে আনেন স্টাম্পে।

আগের তিন ম্যাচেই দ্বিতীয় উইকেটে বড় জুটি পেয়েছিল বাংলাদেশ। এবার আর জুটিটা জমল না। দুই চারে চনমনে শুরু পাওয়া সাকিব শিকার হন রান আউটের।  পয়েন্টে পুশ করে এক রান নিতে গিয়েছিলেন তামিম। ওখানে দানুশকা গুনাথিলেকা ছিলেন ক্ষিপ্র। তার সরাসরি থ্রো থামিয়ে দেয় সাকিবের ইনিংস। ম্যাচের মোমেন্টামের হাত বদলও বোধহয় ওখানেই। তেতে উঠা শ্রীলঙ্কা পরে বোলিং-ফিল্ডিংয়ে পেয়েছে আরও ঝাঁজ।

টানা তিন ফিফটি পেয়ে ছন্দে থাকা তামিমও পারেননি। পয়েন্টে দাঁড়ানো সেই গুনাথিলেকা লাকমালের বলে শূন্যে লাফিয়ে নেন তার ক্যাচ। ১৬ রানে তিন উইকেট খুইয়ে বিপর্যয়ে পড়া দলকে টানার ভার পড়েছিল মুশফিকুর রহিম আর মাহমুদউল্লাহর কাঁধে। মুশফিক কিছুটা দৃঢ়তা হাল ছেড়ে দেন মাহমুদউল্লাহ। লাকমালের বাউন্সারে ছক্কা পেটাতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন ফাইন লেগে। বাজে শটে ফিরেছেন সাব্বির রহমানও। মুশফিকের সঙ্গে তার ২৩ রানের জুটিতে জেগেছিল আশা। থিসিরা পেরেরার বলে কি বুঝে যে চালিয়েছেন তিনিই ভালো বুঝবেন। পার করতে পারেনি মিড অনের ফিল্ডারকেও।

৫৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে দলের করুণ দশায় নেমেছিলেন তিন বছর পর ফেরা আবুল হাসান। তাকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানিয়েছেন থিসিরা। খানিক পর একপ্রান্তে লড়তে থাকা মুশফিককে উপড়ে ফেলেন চামারা।

লেগ স্টাম্পের অনেক বাইরে দিয়ে যাওয়া বলে চালাতে গিয়ে নাসির হোসেন ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে। এদের যে কেউ দেখাতে পারতেন আরেকটু নিবেদন, এগিয়ে নিতে পারতেন দলের রান। বাজে শটে ফিরে নিজেদের অ্যাপ্রোচ প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন তারা। ৮০ রানে ৮ উইকেট হারানোর পর এদিন আর টেল এন্ডার থেকেও  আসেনি প্রতিরোধ। আর ২ রান যোগ করেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ।

মামুলি টার্গেট দিনের আলো ফুরানোর আগেই তুলে ফেলতে কোন সমস্যাই হয়নি শ্রীলঙ্কার। ম্যাচ শেষ হয়েছে এক ইনিংসেরও অনেক কম সময়ে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদশ: ৮২/ ১০ (২৪)  (তামিম ৫, এনামুল ০, সাকিব ৮, মুশফিক ২৬, মাহমুদউল্লাহ ৭, সাব্বির ১০, নাসির ৩, মাশরাফি ১, রুবেল ০, মোস্তাফিজ ১ ; লাকমাল ৩/২১, চামিরা ২/৬, পেরেরা ২/২৭, সান্দাকান ২/২৪)

শ্রীলঙ্কা:   ৮৩/০ (১১.৫ ) (গুনাথিলেকা ৪০*, থারাঙ্গা ৩৪*,  ; মাশরাফি ০/১৫,  হাসান ০/২৫, নাসির /০১৯, মোস্তাফিজ ০/১৪, সাকিব ০/১০ )

ফল: শ্রীলঙ্কা ১০ উইকেটে জয়ী। 

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: সুরাঙ্গা লাকমাল। 

Comments

The Daily Star  | English
Banks deposit growth in 2024

Depositors leave troubled banks for stronger rivals

Depositors, in times of financial uncertainty, usually move their money away from troubled banks to institutions with stronger balance sheets. That is exactly what unfolded in 2024, when 11 banks collectively lost Tk 23,700 crore in deposits.

12h ago