কলকাতা বইমেলায় ‘বাংলাদেশ দিবস’ মঞ্চে তিস্তা চুক্তির দাবি
কলকাতা আন্তর্জাতিক বই মেলায় বাংলাদেশ দিবসের মঞ্চে বাংলাদেশের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং সাংসদরা ফের তিস্তার চুক্তির দাবিতে সরব হলেন। তাঁরা বললেন, গঙ্গা চুক্তি, সীমান্ত চুক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি সম্পাদন হয়েছে। এবার বাকি তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর চুক্তি সম্পাদন। তিস্তা চুক্তির জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির ইতিবাচক ভূমিকা রাখবেন বলেও তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
শনিবার ছিল কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় ‘বাংলাদেশ দিবস’। এদিন সন্ধ্যায় ‘বাংলাদেশের সাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক সেমিনারের আগে প্রধান অতিথি সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, বিশেষ অতিথি নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, সাংসদ পঙ্কজ দেবনাথ অনুষ্ঠান মঞ্চে উপস্থিত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিস্তা চুক্তি সম্পাদনের তার মুখ্যমন্ত্রীকে ইতিবাচক ভূমিকা নেওয়ার অনুরোধ জানান। যদিও মঞ্চে তিস্তা চুক্তি নিয়ে একটি কথাও বলেননি সুব্রত মুখোপাধ্যায়।
তবে পরে মঞ্চ থেকে নামার সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, তিস্তা বা আন্তর্জাতিক কোনও বিষয় নিয়ে তিনি কিছু বলার অধিকারী নন।
শনিবার সন্ধ্যায় সল্টলেক সেন্ট্রাল পার্কের মেলা প্রাঙ্গণে এস.বি.আই.অডিটোরিয়ামে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে প্রধান অতিথি বাংলাদেশের সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর তার বক্তব্যে বলেন, ‘ছিটমহল সমস্যা মিটেছে, গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তিও হয়েছে তাহলে তিস্তাসহ অন্য বকেয়া সমস্যাগুলিও আলোচনার মাধ্যমে মিটে যাবে’।
সংস্কৃতিমন্ত্রী আরও বলেন বইমেলা দুই দেশের মানুষকে কাছে এনেছে। তবে আক্ষেপও ছিল তার কণ্ঠে। বলেন, বাংলাদেশে কলকাতা লেখকদের বই পাওয়া গেলেও বাংলাদেশের লেখকদের বই পাওয়া যায় না। এই ব্যাপারে ভারসাম্য রক্ষা করা উচিত বলেও তার মত। একইভাবে বই মেলার বাংলাদেশের প্যাভিলিয়নের আয়তন বাড়ানোর অনুরোধ করেছেন মেলা কর্তৃপক্ষের কাছে।
‘সম্মানিত’ অতিথির ভাষণে পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘বাংলাদেশ আয়তনে ভারতের থেকে ছোট হলেও আমাদের কাছে বড় আদরের। বাংলাদেশের জন্যই বাংলা ভাষা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। এই বইমেলা দুই বাংলাকে মিলিয়েছে’।
বাংলাদেশের নারী ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, তিস্তা চুক্তি হওয়ার মধ্যে দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও নিবিড় হবে। তবে ভারত-বাংলাদেশের সঙ্গে বর্তমানেও মধুর সম্পর্ক বিদ্যমান বলে দাবি প্রতিমন্ত্রীর।
কলকাতা বুক সেলার্স অ্যান্ড গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণ জয়ন্তীর বছরকে শ্রদ্ধা জানাতে ২০২০ সালে কলকাতা বই মেলায় বাংলাদেশকে ফোকাস দেশ হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার আগ্রহের কথা জানান। তিনি বলেন, এর আগে ১৯৯৭, ২০১৩ সালে দুইবার বাংলাদেশকে ফোকাস দেশের মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। আমরা ২০২০ সালে বাংলাদেশকে আবার ফোকাস দেশ হিসাবে আনতে চাইছি।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহদ্দম ইব্রাহিম হোসেন খান, কলকাতার বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনার তৌফিক হাসান, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল সমিতির সভাপতি মাজাহারুল ইসলাম এবং বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. শামসুজ্জামান খানও সেমিনারে বক্তব্য রাখেন।
‘বাংলাদেশের সাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। এই বিষয়ে আলোচনা করেন বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন। বাংলা সাহিত্যে কিভাবে মুক্তিযুদ্ধ চেতনা হিসেবে কাজ করেছে তার বেশ কিছু ঘটনার বর্ণনা করেন। বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। বাংলাদেশের মানুষের মূল চেতানাই মুক্তিযুদ্ধ। তাই তাদের কর্মে-সৃষ্টিতে মুক্তিযুদ্ধ বহতা নদীর মতো বয়ে চলে।
Comments