৩০ ওভারও টিকল না বাংলাদেশ

Mahmudullah
মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়ছেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ, ছবি: ফিরোজ আহমেদ

আরও একটি ব্যাটিং ধস। আরও একবার অসহায় আত্মসমর্পণ। যেন প্রথম ইনিংসের অ্যাকশন রিপ্লে হয়েছে দ্বিতীয় ইনিংসেও। ১০০ থেকে ১২৩। ২৭ বলের মধ্যে এই ২৩ রানেই পড়েছে শেষ ৬ উইকেট।

শনিবার মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে টেস্টের তৃতীয় দিনে শ্রীলঙ্কা সেরেছে কেবল আনুষ্ঠানিকতা। ব্যাটে-বলে, মেজাজে, মানসিকতায়ও বাংলাদেশকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের শিষ্যরা। তৃতীয় দিনের দ্বিতীয় সেশনের অনেক আগেই বাংলাদেশকে ১২৩ রানে অল আউট করে ২১৫ রানের জয় লঙ্কানদের। দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ২৯.৩ বল টিকতে পেরেছে বাংলাদেশের ইনিংস। দুই টেস্ট ম্যাচ সিরিজ তাই অনায়াসে ১-০ তে জিতে নিল দিনেশ চান্দিমালের দল।

দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের হন্তারক অফ স্পিনার আকিলা ধনঞ্জয়া। অভিষিক্ত অফ স্পিনার ৫ ওভারের স্পেলেই ২৪ রানে পেয়েছেন ৫ উইকেট। তিনি বল করতে আসার পর বাংলাদেশের ইনিংসে চলেছে আসা-যাওয়ার মিছিল। দুই ইনিংস মিলিয়ে এই স্পিনার পেলেন ৮ উইকেট। ৪৯ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন অভিজ্ঞ রঙ্গনা হেরাথও। ওয়াসিম আকরামকে ছাড়িয়ে তিনিই এখন টেস্ট সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়া বাঁহাতি বোলার। 

ম্যাচ আসলে প্রথম ইনিংসেই শেষ করে ফেলেছিল বাংলাদেশ। বাকিটুকু যা হয়েছে সেটা আনুষ্ঠানিকতা হিসেবেও চালিয়ে দেওয়া যায়। ক্রিকেট গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা বটে, তবে কিছু কিছু ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিয়ে দেওয়া যায়। দ্বিতীয় দিনেই আসলে সে নিশ্চয়তা পেয়ে গিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। 

লিটন
ধনঞ্জয়ার বলে ক্যাচ দেন লিটন। ছবি: ফিরোজ আহমেদ
আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে আসা মেহেদী হাসান মিরাজ বলেছিলেন, তিনশোর বেশি তাড়া করে জেতার খুব আত্মবিশ্বাস আছে তাদের। তার কথায় ক্রিকেট নিয়ে সামান্য জ্ঞান রাখা লোকও  মুচকি হেসেছে, রোশেন সিলভা তো এমন ভাবনাকে কাণ্ডজ্ঞানের বাইরেই বলে দিয়েছিলেন। দেবেন নাই বা কেন? চতুর্থ ইনিংসে তিনশোর বেশি তাড়া করে জেতার রেকর্ডই হাতেগোনা। বাংলাদেশের সেরকম কোন ইতিহাস নেই। মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ডটা ২০৯ রানের। প্রথম ইনিংসে ১১০ রানে গুটিয়ে যাওয়া এই বাংলাদেশ অমন ইতিহাস গড়ে ফেলবে, কেবল খাতায় কলমেই তা সম্ভব।

স্পিনাররা টার্ন বাউন্স পাচ্ছিলেন প্রথম দিন থেকেই। তৃতীয় দিনে এসে পিচের ক্ষত আরও বড় হয়েছে। খেলার অ্যাপ্রোচ নিয়ে দ্বিধায় থাকা বাংলাদেশ মারবে না ধরবে ভেবে কুলিয়ে উঠতে পারেনি। তবে সবার ধারনার চেয়ে বেশি খারাপ অবস্থা হয়েছে। 'খুব আত্মবিশ্বাস' নিয়ে নেমেও ব্যাটিং হয়েছে যাচ্ছেতাই। খারাপ পরিস্থিতি সামলানোর কোন চেষ্টাই দেখা যায়নি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে। ওয়ানডে মেজাজে খেলেছেন সবাই, উইকেট বিলিয়ে দিয়েছেন একের পর এক। ওভারের হিসাবে দ্বিতীয় ইনিংসে আসলে এক সেশনও টিকতে পারেনি বাংলাদেশ। 

অথচ আগের দিনের ৮ উইকেটে ২০০ রান নিয়ে নামার পর আরও ২৬ রান যোগ করে তবেই ছেড়েছিল শ্রীলঙ্কা। রোশেন সিলভা তো ৭০ রানেই থেকেছেন অপরাজিত। ৩৩৮ রানের লিড। বাংলাদেশের জিততে ৩৩৯। পিচ, পরিস্থিতি বিবেচনায় নিলে এভারেস্টের চূড়ার চেয়েও বেশি।

বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় যিনি এনে দিতে পারতেন কাঙ্খিত শুরু সেই তামিম ইকবাল এই ইনিংসেও ব্যর্থ। দিলরুয়ান পেরেরাকে ফ্রন্টফুটে খেলতে এসে ভড়কে গেলেন। বল পায়ে লাগল, আবেদনে সাড়া দিলেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়েও রক্ষা নেই তামিমের। দলের তখন রান ৩, তামিমের ২।  ইমরুল কায়েস শুরু থেকেই হাঁসফাঁস করেছেন। বারবার বেরিয়ে এসে চাপ সরাতে চেয়েছেন।  পারেননি বেশিদূর আগাতে। ১৭ রানে পেরেরার বলে পুশ করতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লাগিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন উইকেটের পেছনে।

ওয়ানডাউনে নেমে মুমিনুল হক খেলছিলেন স্বচ্ছন্দে। ইতিবাচক মানসিকতা ছিল ব্যাট করার ধরনে। জীবন পেয়েছিলেন, তা কাজে লাগানোর আভাস মিলছিল। লাঞ্চের পর আর টিকেননি। লঙ্কানদের সবচেয়ে অভিজ্ঞ কাণ্ডারি রঙ্গনা হেরাথ উইকেটের পেছনে বানিয়েছেন তাকে। মুশফিকুর রহিমের ঘাতকও হেরাথ। চুম্বকের মতো তাকে ক্রিজ থেকে টেনে এনে স্টাম্পিং বানিয়েছেন। ক্রিজে গিয়েই অবশ্য মুশফিক ছিলেন অস্থির। অকারনে রিভার্স সুইপের চেষ্টা চালিয়েছেন, স্বস্তি ছিল ব্যাট করার ধরণে। 

মুশফিকের আউটের আগেই আক্রমণে এসে উইকেট নেওয়ার উৎসব করেন অফ স্পিনার আকিলা। শেষ ৬ উইকেটের ৫টাই নিয়েছেন তিনি। লিটন দাসকে দিয়ে শুরু আকিলার উইকেট উৎসব। টার্ন আর বাউন্সে ভড়কে যাওয়া লিটন ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে ক্যাচ দেন ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে। মাহমুদউল্লাহরও একই দশা। তার ক্যাচ অবশ্য গেছে স্লিপে। দুই ইনিংস মিলিয়ে মাত্র খেলেছেন মাত্র ৫ বল, করেছেন ১ রান। নিজের জায়গা আবার প্রশ্নবিদ্ধ করে আউট হয়েছেন দৃষ্টিকটুভাবে। 

মেহেদী হাসান মিরাজ এক ছক্কা মেরে ক্যাচ দিয়েছেন উইকেটের পেছনে। আব্দুর রাজ্জাক, তাইজুল ইসলাম ম্যাচের আয়ু বাড়তে দেননি। টপাটপ ফিরে চা-বিরতির অনেক আগেই ম্যাচের এপিটাফ লিখে ফেলতে সহায়তা করেছেন কেবল।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

 
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ২২২
 
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১১০
 
শ্রীলঙ্কা ২য় ইনিংস: ২২৬
 
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৩৩৯) ২৯.৩ ওভারে ১২৩ (তামিম ২, ইমরুল ১৭, মুমিনুল ৩৩, মুশফিক ২৫, লিটন ১২, মাহমুদউল্লাহ ৬, সাব্বির ১, মিরাজ ৭, রাজ্জাক ২, তাইজুল ৬, মুস্তাফিজ ৫*; লাকমল ০/১১, পেরেরা ১/৩২, হেরাথ ৪/৪৯, দনঞ্জয়া ৫/২৪)।
 
ফল: শ্রীলঙ্কা ২১৫ রানে জয়ী
 
সিরিজ: ২ ম্যাচের সিরিজ শ্রীলঙ্কা ১-০ ব্যবধানে জয়ী
 
ম্যান অব দা ম্যাচ: রোশেন সিলভা
 
ম্যান অব দা সিরিজ: রোশেন সিলভা

Comments

The Daily Star  | English

Depositors leave troubled banks for stronger rivals

Depositors, in times of financial uncertainty, usually move their money away from troubled banks to institutions with stronger balance sheets. That is exactly what unfolded in 2024, when 11 banks collectively lost Tk 23,700 crore in deposits.

10h ago