‘কিছু মানুষ কাজের জায়গাটিকে রাজনীতির অঙ্গন বানিয়ে ফেলতে চান’

প্রায় দুইমাস দেশের বাইরে শুটিং করে সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন শাকিব খান। দেশে ফিরে দুইদিন বিশ্রাম নিয়ে আবারো শুটিংয়ে ফিরেন তিনি। অনেকদিন কোনো গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেননি জনপ্রিয় এই নায়ক। এফডিসিতে বসে শুটিংয়ের ফাঁকে কথা বলেন দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনের সঙ্গে।
Shakib Khan
অভিনেতা শাকিব খান। ছবি: স্টার

প্রায় দুইমাস দেশের বাইরে শুটিং করে সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন শাকিব খান। দেশে ফিরে দুইদিন বিশ্রাম নিয়ে আবারো শুটিংয়ে ফিরেন তিনি। অনেকদিন কোনো গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেননি জনপ্রিয় এই নায়ক। এফডিসিতে বসে শুটিংয়ের ফাঁকে কথা বলেন দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনের সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন- জাহিদ আকবর

স্টার অনলাইন: প্রায় দুই মাস পর দেশের মাটিতে শুটিং করছেন। দেশের বাইরে দীর্ঘ শুটিং শেষে দুদিন বিশ্রাম নিয়েই আবার কাজ?

শাকিব খান: একটু ব্যস্ততা যাচ্ছে। তাই বিরতিহীন কাজ করতে হচ্ছে। সিডিউল নিয়েও জটিলতা রয়েছে। সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ তো আর আমার হাতে থাকে না। আমি বুঝি, একজন শিল্পীর একটানা এভাবে কাজ করা উচিত নয়। কারণ এভাবে কাজ করলে সে তার বেস্ট আউটপুটটা কখনোই দিতে পারে না। ভালো মানের কাজ করতে হলে অবশ্যই একজন আর্টিস্টের জন্য কিছুটা বিশ্রাম জরুরি। তারপরও কিছু কিছু বিষয়ে কিছু কারণে সেক্রিফাইস তো করতেই হয়।

স্টার অনলাইন: কাজের মান ধরে রাখা যাচ্ছে কী?

শাকিব খান: সব সময়ই চেয়েছি কোয়ালিটি কাজ করতে। কোয়ানটিটি বাড়াতে চাইনি। বছরে দু-তিনটি সিনেমাই করতে চাই। যে সিনেমাগুলো আমার আইডেনটিটি হয়ে থাকবে। আর এ সিনেমাগুলোই জাতীয় কিংবা আন্তজার্তিক স্বীকৃতি বয়ে আনবে। সে পথে অনেকটাই এগুচ্ছে আমাদের ইন্ডাস্ট্রি। আমাদের সবাইকে এখন কোয়ালিটির দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।

অনেক সময় অনুরোধে ঢেঁকি গিলতে হয়। অনেকদিন ধরেই তো ইন্ডাস্ট্রিতে আছি, অনেকের সঙ্গেই সখ্যতা আছে। সেদিক থেকে কিছু কাজ করতে হয়। আর এ করাটাই কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির জন্য খারাপ হয়ে যাচ্ছে। সামনে আর অনুরোধে ঢেঁকি গিলবো না। ওই ধরনের কাজগুলো শেষ করে সুন্দরভাবে শুরু করতে চাই।

স্টার অনলাইন: অনুরোধে ঢেঁকি না গিললে অনেকেই মনক্ষুন্ন হবেন।

শাকিব খান: কাউকে খুশি করা কিংবা মনক্ষুন্ন করার দায়-দায়িত্ব তো আমি নিয়ে রাখি নাই। এমন সেক্রিফাইস করতে গিয়ে অনেক কোয়ালিটিহীন কাজ করে ফেলেছি। যেটা ইন্ডাস্ট্রির বৃহত্তর স্বার্থে বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

স্টার অনলাইন: একটানা শুটিংয়ের মধ্যে রয়েছেন, নিজের জন্য সময় পাচ্ছেন কি?

শাকিব খান: গত প্রায় দুই মাস ধরে তো দম ফেলারও সময় পাচ্ছি না। সেখানে নিজেকে আবার সময় দেওয়ার কথা আসে কী করে! তাই হাতে বর্তমানে যে কাজগুলো রয়েছে সেগুলো শেষ করে নিজের জন্য কিছুটা সময় বের করব। কয়েকটা দিন একেবারেই নিজের মতো করে কাটাব।

স্টার অনলাইন: ভালো কাজের প্রতি আপনি কতটা মনোযোগী?

শাকিব খান: যখন ‘শিকারি’ বা ‘নবাব’ করেছি, কিংবা তার পরও বেশ কিছু কাজ করেছি, সেটি যারা আমাকে খুব কাছ থেকে জানেন, তারা সবই জানেন, আমি ভালো কাজের জন্য কতটা মুখিয়ে থাকি। আমি চাই, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে। ভালো কাজ করতে। যাতে বর্হিবিশ্বের সিনেমার বাজারগুলোর সঙ্গে আমরাও সমান তালে এগিয়ে যেতে পারি।

স্টার অনলাইন: এক একটা চরিত্রের জন্য অনেক পরিশ্রম করেন আপনি। চরিত্রটা হয়ে গেলে সেখান থেকে বের হওয়ার জন্য কী কী করেন?

শাকিব খান: চেষ্টা করি কাজের মধ্যে বৈচিত্র্য ধরে রাখতে। কিন্তু, সব সময় একেবারে নিখুঁতভাবে করতে পারি না। একটি সিনেমা শেষ হওয়ার পর আরেকটি সিনেমা শুরু করতে তো মাঝে কয়েকদিন সময় যায়। তখন যতটুকু সময় পাই গেটআপ, লুক, চরিত্রটি নিজের মধ্যে সেট করে নিই। বারবার নিজের ভাবনায় সে চরিত্রটিকে আরও বেশি নিজের করে নেওয়ার জন্যে সময় দিই।

স্টার অনলাইন: শাকিব খান দেশে না থাকলে ইন্ডাস্ট্রিতে প্রাণ থাকে না। চলার পথে আসা বাধাগুলো অতিক্রম করে পথ চলার জন্য অনুপ্রেরণা পান কোথায় থেকে?

শাকিব খান: সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমত; দর্শকদের ভালোবাসা। বড় গাছে হাওয়া বেশি লাগে, সেটা তো আমি অনেক বড় জায়গা থেকেই শুনেছি। এটা তো ক্যারিয়ারের অংশও। তোমার যদি অনেক বড় লম্বা ইনিংস খেলতে হয় তাহলে অনেক স্ট্রাগল করতে হবে। দর্শকদের জন্যই আমি আজ শাকিব খান হয়েছি, তাদের ভালোবাসাই আমার এসব বাধা অতিক্রম করার জন্য অনুপ্রেরণা যোগায়।

স্টার অনলাইন: দেশের সিনেমার অবস্থা বর্তমানে মন্দা। এতো এতো ছবি হচ্ছে, আর সব ছবিই কি সফল, আপনি কী বলেন?

শাকিব খান: যারা বলেন সব ছবি সফল সেটা শুধু বলার জন্যই বলা। শুধু তো আওয়াজ দিয়ে লাভ নেই। যারা ইন্ডাস্ট্রির খোঁজ-খবর রাখেন তারা জানেন কয়টা ছবি হিট আর কয়টা ব্যর্থ। এসব আওয়াজ না দিয়ে ভালো কনটেন্ট তৈরির দিকে মনোযোগী হওয়া উচিত। কারণ দর্শক দিন শেষে ভালো কনটেন্ট চায়। আর কনটেন্ট ভালো না হলে ছবি ব্যবসা-সফল হবে সেটা ভাবাও ঠিক নয়।

স্টার অনলাইন: গুজব তো শাকিব খানের জীবনের নিত্যসঙ্গী, নতুন কোনো গুজব যখন শোনেন, শুরুতেই মেজাজ খারাপ হয় না?

শাকিব খান: একটা কথা বলি, নায়করাজ আজ বেঁচে নেই, তিনি বলে গিয়েছিলেন আমাকে, শাকিব যতদিন এসব থাকবে ততদিন বুঝবে তুমি ঠিক লাইনে আছো। তাই আমিও বিষয়টিকে ওভাবেই দেখি। অতটা মাথা ঘামাই না। পৃথিবীর সকল তারকাদের জীবন ঘিরেই নানান ধরনের গুজব প্রচলিত। এটা তো স্টারডমের একটা অংশ। ব্যক্তিজীবনে সে সবের কোনো ঠাঁই নেই। সময়ের সাথে সাথে পরিণত হওয়ার কারণে ওসব নিয়ে এখন আর মেজাজ খারাপ হয় না।

স্টার অনলাইন: যৌথ প্রযোজিত ‘ভাইজান’ নামে নতুন একটি সিনেমাতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। সে বিষয়ে কিছু বলবেন কি?

শাকিব খান: দ্বিতীয়বারের মতো বড় পর্দায় জুটি বাঁধতে যাচ্ছি আমি আর শ্রাবন্তী। আগামী ২ মার্চ থেকে শুটিং শুরু হবে। সিনেমাটি পরিচালনা করবেন জয়দীপ মুখার্জি। ছবিতে দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করব আমি। এতে পায়েল সরকারও রয়েছেন। আর জয়দীপের পরিচালনায় এটি আমার চতুর্থ ছবি। এর আগে ‘শিকারি’, ‘নবাব’, ‘চালবাজ’-এ একসঙ্গে কাজ করেছি আমরা। আটাশ বছর আগের এক ঘটনাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ছবির গল্প।

স্টার অনলাইন: যৌথ প্রযোজনার বাইরে দেশীয় প্রযোজনায় ‘আমি নেতা হবো’ ছবিটি নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। এ নিয়ে আপনার মন্তব্য কী?

শাকিব খান: এটা তো অনেক ভালো একটা ব্যাপার। সেটাই তো আমরা চাই, দেশীয় ছবি একটা ভালো জায়গায় যাক। এর মধ্যে যে বিষয়টা থাকে তা হলো দেশে ভালো ছবি করতে গেলেও ভারতের সগযোগিতা নিতে হয়। ‘ঢাকা অ্যাটাক’ এর পরিচালক দীপঙ্কর দিপনের ইন্টারভিউ দেখলাম, তারও কিন্তু ইন্ডিয়ার সাপোর্ট নিতে হয়েছে। কারণ আমার এখানে একটা জিনিস না থাকলে আমি কী করব? আমাদের এখানে তো এখনও সংকট রয়েছে! টেকনোলজির দিক থেকে আমরা যে পিছিয়ে রয়েছি সেটাও সত্য। আমরা যে প্রযুক্তির ব্যবহার করতে চাই, তা বাংলাদেশে চার ডবল টাকা দিলেও পাবো না। তাহলে আমি এখানে কেনো শুট করব?

এফডিসিতে অনেক যন্ত্রপাতি আছে কিন্তু সেগুলো চালানোর কোনো লোক নেই। কিছু মানুষ আবার কাজের জায়গাটিকে রাজনীতির অঙ্গন বানিয়ে ফেলতে চান।

স্টার অনলাইন: ‘চিটাগাইঙ্গা পোয়া ও নোয়াখাইল্লা মাইয়া’ অনেকদিন পর এমন টাইপের সিনেমা করছেন। এই ধরনের সিনেমার প্রতি দর্শকদের আগ্রহ রয়েছে কি?

শাকিব খান: কমেডি নির্ভর ছবি তো, পুরো ছবিই এন্টারটেইনমেন্টে ভরা। দর্শকেরা বেশ এনজয় করবেন। এ ছবির গানগুলো চমৎকার। এখন পর্যন্ত এ ধরনের গান আমার করা হয়নি! আগামী ২৩ মার্চ ছবিটি মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়াও, ‘চালবাজ’ ছবিটিও মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে। দেখা যাক কী হয়।

স্টার অনলাইন: অবসর আপনার কীভাবে কাটে?

শাকিব খান: যেভাবে কাজের রুটিন তৈরি করা থাকে তার বাইরে আড্ডা আর গল্পেই সময় কেটে যায়। খুব একটা সে গন্ডির বাইরে বের হওয়ার সুযোগ থাকে না। তারপরও যতটুকু সম্ভব হয় নিজের মতো নিজেকে সময় দেই।

স্টার অনলাইন: সিনেমা দেখার সুযোগ হয় কি?

শাকিব খান: হিন্দি, ইংলিশ, মালায়লাম ছবি দেখা হয়। যে কোনো দেশের যে কোনো ভালো ছবি পেলেই দেখা হয়। আমি যখন এয়ারে থাকি তখন অন্যান্য ভাষার সিনেমা দেখি। অস্ট্রেলিয়া যেতে যেতে চার-পাঁচটা দেখছি। আবার আসতে আসতে চার-পাঁচটা দেখছি। ‘আয়নাবাজি’ বেশ ভালো লেগেছে। ‘ঢাকা অ্যাটাক’-ও ভালো লেগেছে।

স্টার অনলাইন: অপু বিশ্বাসের সঙ্গে ডির্ভোস নিয়ে কিছু বলবেন কি?

শাকিব খান: ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কিছু বলতে চাই না। শুধু এটুকু বলি একটা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য উভয়পক্ষের মধ্যে শ্রদ্ধা থাকতে হয়। তা এখন আর অবশিষ্ট নেই। তবে আমার সন্তান আব্রামের ভালোর জন্য আমার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব। ওকে ভালো স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার ব্যবস্থা করা, ওকে ভালো রাখা, ওকে প্রতিষ্ঠিত করার ব্যাপারে সব ধরনের সাপোর্ট থাকবে আমার দিক থেকে। আইন অনুয়ারী যেটা হবে সেটা আমার উকিল করছে। এর বেশি কিছু বলবো না।

Comments

The Daily Star  | English

Religious affairs ministry directs DCs to maintain peace, order at mazars

The directive was issued in response to planned attacks on shrines, allegedly aimed at embarrassing the interim government

42m ago