দক্ষিণ কোরিয়ায় গাড়ি শিল্পের সাথে পাল্লা দিচ্ছে জ্যোতিষীরা!

​“আর কদিন পরেই উজ্জ্বল হয়ে উঠবে আপনার ভবিষ্যৎ”, অথবা “সামনে ভীষণ বিপদ”- জ্যোতিষীদের এমন কথায় যুক্তিবাদীদের বিশ্বাস রাখা কষ্টকর হলেও কারও কারও মন যে দুর্বল হয় না সে কথা হলফ করে বলা যায় না। এই বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়েই দেশটিতে গড়ে উঠেছে বিশাল বাণিজ্য যা এখন পাল্লা দিচ্ছে গাড়ি শিল্পকেও।
fortune teller korea

“আর কদিন পরেই উজ্জ্বল হয়ে উঠবে আপনার ভবিষ্যৎ”, অথবা “সামনে ভীষণ বিপদ”- জ্যোতিষীদের এমন কথায় যুক্তিবাদীদের বিশ্বাস রাখা কষ্টকর হলেও কারও কারও মন যে দুর্বল হয় না সে কথা হলফ করে বলা যায় না। এই বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়েই দেশটিতে গড়ে উঠেছে বিশাল বাণিজ্য যা এখন পাল্লা দিচ্ছে গাড়ি শিল্পকেও।

কোরিয়ান ইকোনমিক ডেইলির বরাত দিয়ে সম্প্রতি দ্য ইকোনমিস্ট এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ায় “ভবিষ্যৎবক্তাদের” বাজার হতে যাচ্ছে প্রায় তিনশ ৭০ কোটি মার্কিন ডলার। যার তুলনা কেবল হতে পারে দেশটির গাড়ি শিল্পের সঙ্গে।

জীবনে চলার পথে কতকিছুই না জানার আগ্রহ থাকে মানুষের। চাকরি, প্রেম, বিয়ে, পরিবার ও স্বাস্থ্যের মতো ব্যক্তিগত বিষয়ের পাশাপাশি দেশের ভবিষ্যৎ নিয়েও মানুষের জানার যে অদম্য ইচ্ছা। তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ দেখা যায় কোরীয় সমাজে।

দক্ষিণ কোরিয়ায় চলমান অর্থনৈতিক মন্দার কারণে দেশটিতে বেড়েছে “শমন” ও জ্যোতিষীদের কদর। পেশাগত দিক থেকে এই দুই ধরনের লোকদের কাজ এক হলেও ভবিষ্যৎ বলার পদ্ধতিগত ভিন্নতার জন্যে সৃষ্টি হয়েছে দুটি ধারা। জ্যোতিষীরা গ্রহ ও নক্ষত্রের অবস্থান হিসাব করে মানুষের ভবিষ্যৎ বলার দাবি করে। আর “শমন” হলেন এমন একজন যিনি ভবিষ্যতের ভালো-মন্দ ঘটনাকে প্রভাবিত করতে পারেন বলে দাবি করেন।

আশ্চর্যজনক হলো, পাঁচ কোটির কিছু বেশি জনসংখ্যার দেশ দক্ষিণ কোরিয়ায় শমন ও জ্যোতিষীর সংখ্যা ১০ লাখের মতো। তাঁদের মধ্যে অর্ধেকের রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়। কোরিয়ান কিউংসিন ফেডারেশন এবং কোরিয়ান ফরচুন টেলিং অ্যাসোসিয়েশন এর মোট নিবন্ধীকৃত সদস্যের সংখ্যা ছয় লাখ। এছাড়াও, অনিবন্ধীকৃত সদস্য রয়েছেন আরও চার লাখ। অথচ, মাত্র এক দশক আগেও এই সংখ্যাটি ছিলো ঠিক অর্ধেক।

fortune teller korea

দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মতে, জ্যোতিষীরা বিভিন্ন ধর্মমতের হলেও ধর্মের ভিত্তিতে তাদের দেখা হয় না। বরং তাদেরকে দেখা হয় একটি পেশায় কর্মরত মানুষ হিসেবে।

শমনদের ওপর প্রায় ৩০ বছর ধরে গবেষণা করছেন ইনস্টিটিউট অব মুচিয়ন কালচার এর প্রধান জো সাং-জি। তিনি বলেন, “যেহেতু দেশের অর্থনীতি ভালো নয়, এর প্রভাব পড়েছে শমনদের পেশাতেও। কিন্তু, এর মধ্যেও ‘ভবিষ্যৎবক্তাদের’ সংখ্যা দিনকে দিন বেড়েই চলছে।”

তিনি জানান, অর্থনৈতিক মন্দাভাবের কারণে মানুষের মধ্যে এক ধরনের “আধ্যাত্মিক” চর্চার প্রভাব রয়েছে। এর ফলে তারা জ্যোতিষবিদ্যার দিকে ঝুঁকে পড়ছে।

কোরিয়ান ফরচুন টেলিং অ্যাসোসিয়েশন এর সঙ্গে জড়িত এবং ভবিষ্যৎবাণী করাকে যারা একটি পেশা হিসেবে গড়ে তোলার জন্যে কাজ করছে সেই প্রতিষ্ঠানটির দৃষ্টিতে, “যেহেতু চাকরি পাওয়াটা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে, তাছাড়া দেশে প্রবীণ লোকদের সংখ্যা বাড়তির দিকে, তাই ভবিষ্যৎবাণী করাকে পেশা হিসেবে নিলে সারাজীবন কাজ করে খাওয়ার একটা নিশ্চয়তা থাকে।”

প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত রয়েছেন এমন একজন জানান, “বেকার যুবক ও গৃহিণীরা সপ্তাহের কর্মদিবসগুলোতে এসে জ্যোতিষী-বিদ্যার ওপর ক্লাস করেন। আর যারা পেশাজীবন থেকে অবসরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা ক্লাস করেন রাতের শিফটে।”

প্রতিদিনই জ্যোতিষবিদ্যার ওপর নতুন নতুন ক্লাস শুরু হচ্ছে এবং প্রতিদিনই নতুন নতুন মানুষ এসব ক্লাসে অংশ নিচ্ছেন। তাঁরা বইয়ের পাশাপাশি ভবিষ্যৎবাণীর অ্যাপগুলোও ব্যবহার করছেন বলে জানান সেই ব্যক্তি।

Comments

The Daily Star  | English
expediency

Expediency triumphs over principle in electoral politics

It appears that all of the ruling party’s efforts revolve around the next election, not considering longer-term ramifications for the itself.

4h ago