‘মানুষ পুড়ছিল, চিৎকার করছিল’
কাঠমান্ডুতে বিধ্বস্ত হওয়া উড়োজাহাজটি থেকে যাদের জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে তাদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশি নাগরিক শাহরিন আহমেদ (২৯)। ত্রিভুবন বিমানবন্দরের পাশে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর এর ভেতরের অবস্থার বর্ণনা দিয়েছেন তিনি।
নেপালের দ্য হিমালয়ান টাইমসকে তিনি বলেছেন, “আমার এক বন্ধুর সাথে আমি নেপাল যাচ্ছিলাম। বিমানবন্দরে অবতরণের ঠিক আগমুহূর্তে উড়োজাহাজটি বা দিকে কাত হয়ে যায়। লোকজন চিৎকার করতে শুরু করেন। পেছনে তাকিয়েই দেখি আগুন। আমার বন্ধু বলছিল তার সামনে দৌড়াতে। কিন্তু দৌড়ে যেতেই তার গায়ে আগুন লেগে সে পড়ে যায়।”
কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজ টিচিং হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে এভাবেই ইউএস বাংলা এয়ারওয়েজের ফ্লাইট বিএস ২১১ এর শেষ মুহূর্তের বর্ণনা দিচ্ছিলেন শাহরিন। দুর্ঘটনায় তিনি নিজেও দগ্ধ হলেও শেষ মুহূর্তে প্রাণ নিয়ে বের হতে পেরেছিলেন।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত শাহরিন বলেন, “মানুষ আগুনে পুড়ছিল আর চিৎকার করছিল। তারা পড়ে যাচ্ছিল। তিন জন উড়োজাহাজটি থেকে লাফিয়ে নিচে পড়ে। অবস্থা ছিল ভয়াবহ। সৌভাগ্যবশত কেউ একজন আমাকে টেনে বের করে আনে।”
পেশায় শিক্ষক শাহরিন নেপালের কাঠমান্ডু ও পোখরায় ঘুরতে যাচ্ছিলেন। হাসপাতালের একজন ডাক্তার জানান, তার পেছনের ১৮ শতাংশ জায়গা পুড়ে গেছে। এছাড়া তার পায়েও চোট লেগেছে। তার অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে অস্ত্রোপচার করতে হবে।
আরেক বাংলাদেশি যাত্রী মেহেদি হাসান কাঠমান্ডু যাচ্ছিলেন তার স্ত্রী, এক বোন ও বোনের মেয়ের সঙ্গে। জীবনের প্রথম বিমান ভ্রমণেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয় তাকে। সংবাদপত্রটিকে তিনি বলেন, “আমার সিট ছিল পেছন দিকে। যখন আগুন দেখতে পাই, আমার পরিবারের অন্যদের দিকে তাকাই। আমরা জানালার কাচ ভেঙে ফেলার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু সম্ভব হয়নি। শুধু ভাবছিলাম কেউ এসে আমাদের বের করুক। আমি আর আমার স্ত্রী উদ্ধার হয়েছি। কিন্তু আমার কাজিন ও তার মেয়ের খোঁজ পাচ্ছি না।”
শাহরিন ও মেহেদী যে হাসপাতালটিতে চিকিৎসাধীন সেখানে বিমান দুর্ঘটনায় আহত আরও ১২ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আহত চারজনকে সেখান থেকে আরেকটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রতিনিধিরা হাসপাতালটি পরিদর্শন করেছেন।
Comments