খেলা

ছক্কা মেরে বাংলাদেশকে ফাইনালে তুললেন মাহমুদউল্লাহ

শেষ দুই বলে দরকার ছিল ৬ রান। মাহমুদউল্লাহ সেই সমীকরণ মিলিয়েছেন দারুণ এক শটে। ছক্কা মেরে বাংলাদেশকে নিদহাস কাপের ফাইনালে তুলেছেন তিনি। তার আগে নো বল না দেওয়া নিয়ে খেলা থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিল বাংলাদেশ।
Mahmudullah
ছক্কা মেরে দলকে জিতিয়ে মাহমুদউল্লাহর উল্লাস। ছবি : এএফপি

শেষ দুই বলে দরকার ছিল ৬ রান। মাহমুদউল্লাহ সেই সমীকরণ মিলিয়েছেন দারুণ এক ফ্লিক শটে। ইশুরু উদানাকে ছক্কা মেরে বাংলাদেশকে নিদহাস কাপের ফাইনালে তুলেছেন তিনি। তার আগে নো বল না দেওয়া নিয়ে খেলা থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিল বাংলাদেশ।

কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে বারেবারে রঙ বদলানো ম্যাচে বাংলাদেশ ১ বল হাতে রেখে জিতেছে ২ উইকেটে। এই জয়ে ত্রিদেশীয় নিদহাস কাপের ফাইনালে উঠল সাকিব আল হাসানের দল। ১৮ মার্চ ফাইনালের প্রতিপক্ষ ভারত। 

১৮ বলে ৩ চার আর ২ ছক্কায় ৪৩ রানের ইনিংস খেলে বাংলাদেশের জয়ের হিরো মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তার ঝলকে ঢাকা পড়ে গেছে তামিম ইকবালের ফিফটি। 

শেষ দুই ওভারে দরকার ২৩ রান। মাত্রই আউট হয়ে গেছেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, পড়ে গেছে ৬ উইকেট। মাহমুদউল্লাহ ছিলেন বলে আশাও তখন বেঁচে বাংলাদেশের। ওই ওভারে আসে ১১ রান। রান আউটে কাটা পড়েন মেহেদী হাসান মিরাজ। শেষ ওভারে দরকার ১২। সবচেয়ে বড় কথা স্ট্রাইকে নেই মাহমুদউল্লাহ। শেষ ওভারটাই হলো নাটকীয়তায় ভরপুর।

নতুন ব্যাটসম্যান মোস্তাফিজুর রহমানকে বাউন্সারে পরাস্ত করলেন ইশুরু উদানা। পরের বলে আবার বাউন্সার। এবার বাউন্সারে পরাস্ত হলেও রান নিতে গেলেন ব্যাটসম্যানরা। নন স্ট্রাইকিং প্রান্তে পৌঁছার আগেই রান আউট মোস্তাফিজ। তবে দুই বাউন্সারের কারণে নো বল ডাকার আবেদন করে বাংলাদেশ। তর্ক বিতর্ক শেষে ব্যাটসম্যানদের খেলা থেকে বেরিয়ে আসার নির্দেশও দেন অধিনায়ক সাকিব। পরে খেলতে রাজী হয় বাংলাদেশ। পরের বলেই চার মেরে দলকে খেলায় ফেরান মাহমুদউল্লাহ। পরের বলে নেন ২ রান। তার পরের বল ফ্লিক করে ছক্কা মেরে বাংলাদেশকে যাদুময় মুহুর্ত এনে দেন মাহমুদউল্লাহ।

১৬০ রানের লক্ষ্য তাড়ায় বাংলাদেশের শুরুটা হয় নড়বড়ে। একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ২১৫ রান তাড়ায় ব্যাটে তান্ডব তুলেছিলেন লিটন দাস। এই ব্যাটসম্যান এবার আউট হয়েছেন দৃষ্টিকটুভাবে। আকিলা ধনঞ্জয়ার অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল না লাগালে ওয়াইড পেতেন। সেই বলে বেরিয়ে এসে ক্যাচ দেন মিড অনে।

ডান-বাম কম্বিনেশন রাখতে ওয়ানডাউনে প্রোমোশন পাওয়া সাব্বির রহমান দুই চারে শুরুর পর হয়েছেন স্টাম্পিং। ৩৩ রানে দুই উইকেট হারালেও পথ হারায়নি বাংলাদেশ। দারুণ ফর্মে থাকা মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গে নিয়ে দলকে এগিয়ে নেন তামিম ইকবাল। এই দুজনের ৬৪ রানের জুটিতে খেলায় ফিরে বাংলাদেশ।

একটা সময় মনে হচ্ছিল সহজ জয়ের পথেই আছে বাংলাদেশ। তখনই বাঁহাতি স্পিনার আমিলা আপনসোর বলে ক্যাচ দেন কাভারে। ফিফটি করার পরই গুনাথিলেকাকে বেরিয়ে এসে মারতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তামিম। এদিন পাঁচ নম্বরে নামা সৌম্য সরকার প্রায়ই একইভাবে আউট হন ১০ রান করে। হঠাৎ ছন্দপতন। তবু মাহমদুউল্লাহ আর সাকিব তো আছে। সমীকরণও কঠিন না। শেষ চার ওভারে লাগত ৪০। ১১ রান তুলে এগিয়ে থাকল বাংলাদেশই। ১৮তম ওভারে ফের মোড় ঘোরান ইশুরু উদানা। মাত্র ৬ রান দিয়ে আউট করে ফেলেন সাকিবকে। শেষ দিকে জড়ো হওয়া শঙ্কার মেঘ সরিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। মাথা ঠান্ডা রেখে দলকে জিতিয়েই উল্লাস করেন।

এর আগে  শ্রীলঙ্কার টপ অর্ডার ধসিয়ে দিয়ে দারুণ শুরু করেছিল বাংলাদেশের বোলাররা। তবে কুশল পেরেরা আর থিসারা পেরেরা মিলে টেনে তুলেন স্বাগতিকদের। এই দুজনের ফিফটিতে ২০ ওভারে ১৫৯  উইকেটে রান করে শ্রীলঙ্কা। কিছুটা মন্থর পিচে এই পুঁজি পরে হয়ে যায় লড়াই করার জন্য যথেষ্ট।

দলকে অক্সিজেন জুগিয়ে ৩৯ বলে ৬১ রান করে ফেরেন কুশল পেরেরা।অধিনায়ক থিসিরার ব্যাট থেকে আসে ৩৭ বলে ৫৮ রানের কার্যকর ইনিংস। অথচ এই দুজনের ব্যাটিংয়ের আগে রীতিমতো ধংস্বস্তুপ ছিল লঙ্কানদের ইনিংস।

৪৭ দিন পর এই ম্যাচ দিয়েই ফেরেন সাকিব। টস জিতে নিজেই প্রথম বলটা হাতে নেন। প্রথম উইকেটটাও তার পকেটে যায়। সেই শুরু। শরীরী ভাষায় বদলে যাওয়া বাংলাদেশ সঙ্গে সঙ্গে তেতে উঠে। পাওয়ের প্লেয়ের প্রথম ৬ ওভারে ৩৫ রানের মধ্যেই লঙ্কানদের চার উইকেট তোলে টগবগিয়ে ফুটল যেন টাইগাররা।

এই টুর্নামেন্টে এখনো নিজের সেরাটা খুঁজে ফেরা মোস্তাফিজুর রহমান উঠলেন জেগে। প্রথম দুই ওভারে মাত্র ৪ রান দিয়ে নিলেন দুই উইকেট। বাংলাদেশের বিপক্ষে আগের তিন ম্যাচেই তিন ফিফটি করা কুশল মেন্ডিস, ঝড় তোলা দাসুন শানাকার উইকেট তোলার মাঝে তার ওভারেই রান আউট হয়ে ফিরলেন উপুল থারাঙ্গা।

আগের ম্যাচ মার খেলেও এই ম্যাচে মেহেদী হাসান মিরাজও যেন পেলেন ছন্দ। তার বলে টাইমিংয়ে গড়বড় করে আউট হন জীবন মেন্ডিস। ৪১ রানের লঙ্কানদের অর্ধেক ব্যাটসম্যান নেই। 

লঙ্কানদের আশা হয়ে টিকে ছিলেন কেবল কুশল পেরেরা। তার সঙ্গে যোগ দিলেন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক থিসিরা পেরেরা। দুজনে মিলে উইকেট খানিকটা সময় কাটালেন। থিতু হয়ে খুললেন হাত। মোস্তাফিজের তিন নম্বর ওভার থেকে নেন ১৮ রান। ব্যাটল হারিয়ে বসা স্বাগতিকরা তখনই ফিরতে শুরু করে ম্যাচে। ৩২ বলে পঞ্চাশ করে ফেলেন কুশল পেরেরা।

বাঁহাতি স্পিনার নাজমুল ইসলাম অপুকে এক ওভারও বল করতে আনা হয়নি। প্রথম দুই ওভার দারুণ বল করেও ক্রিজে দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান দেখে আর বল করতে আসেননি সাকিব। মোস্তাফিজের শেষ ওভারেও ১৭ রান তুললেন থিসারা। ১৯তম ওভারে সৌম্য সরকারের বলে ফেরেন পেরেরা। তবে তার আগে ৩৯ বলে ৬১ রান। ৬ষ্ঠ উইকেট জুটিতে ততক্ষণে হয়ে গেছে ৯৭ রান। ওই ওভারেই সৌম্যর বলে ছক্কা হাঁকিয়ে ৩৩ বলে ফিফটি পূরণ করেন অধিনায়ক থিসারা। লঙ্কানরা পায় লড়াইয়ের পূঁজি। 

তবে থিসারাদের ঘরের মাঠে ম্যাচ শেষে উল্লাস করেছে বাংলাদেশই। গত মাসে বাংলাদেশের মাঠে এসে সব ফরম্যাটে সিরিজ জিতেছিল শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কার আড়ম্বর মঞ্চে গিয়ে অনেকটা যেন শোধ তুলল বাংলাদেশ। 

 

Comments

The Daily Star  | English
VIP movements in Dhaka

VIP movements are Dhaka’s undiagnosed illness

If the capital's traffic condition makes you angry, you're normal

15h ago