মানুষের জন্য সবচেয়ে প্রাণঘাতী প্রাণী কোনটি?

জানেন কি পৃথিবীর ভয়ঙ্করতম প্রাণী কোনটি? এটা কি বাঘ? হাঙ্গর? অথবা হতে পারে কি কুমির?
প্রাণঘাতী প্রাণী

জানেন কি পৃথিবীর ভয়ঙ্করতম প্রাণী কোনটি? এটা কি বাঘ? হাঙ্গর? অথবা হতে পারে কি কুমির?

বন্য পরিবেশে এসব শিকারি জন্তুর ভয়ে মানুষের আত্মারাম খাঁচাছাড়া হওয়ার যোগাড় হলেও এদের কিন্তু কোনোভাবেই “ভয়ঙ্করতম প্রাণঘাতী” বলা চলে না। তার চেয়ে বরং যেসব ক্ষুদ্র প্রাণিকে “তুচ্ছ” হিসেবে দেখা হয় তাদের মধ্যে অতিক্ষুদ্র মশার কারণেই পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

এখানে এক নজরে দেখে নেওয়া যাক পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাণঘাতী প্রাণী কোনগুলো।

মশা

মশার তুচ্ছতা বোঝাতে বাংলায় একটি প্রবাদই প্রচলিত রয়েছে, “মশা মারতে কামান দাগা”। কিন্তু আকারে ক্ষুদ্র হলে কী হবে; নানা রোগ জীবাণুর বাহক এই মশার বিচরণ সর্বত্র। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর মশাবাহীত রোগে সাত লাখ ২৫ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। মশা যেসব রোগ ছড়ায় তার মধ্যে শুধুমাত্র ম্যালেরিয়াতেই প্রতি বছর প্রায় ২০ কোটি মানুষ আক্রান্ত হয়। এদের মধ্যে মারা যায় প্রায় সাত লাখ মানুষ। এছাড়াও ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, পীত জ্বর ও এনসেফেলাইটিসের মতো মারাত্মক সব রোগ ছড়ায় মশা।

মানুষের মৃত্যুর কারণ হয় এমন প্রাণীদের মধ্যে সংখ্যার দিক থেকেও আর সবাইকে হার মানিয়েছে মশা। মশাকে নির্বংশ করার নিরন্তর চেষ্টা চলার পরও পৃথিবীর সর্বত্রই এর দেখা মেলে। প্রজাতির সদস্যের সংখ্যার দিক থেকে পিঁপড়া আর উইপোকার পরই মশার স্থান।

মানুষ

মানুষ যেমন একা বসবাস করতে পারে না, তেমনি প্রায় ১০ হাজার বছর আগে মানুষ সমাজবদ্ধ হওয়ার পর থেকেই মানুষ মানুষকে হত্যা করে চলেছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র যুদ্ধ বিগ্রহেই এখন পর্যন্ত ১৫ কোটি থেকে ১০০ কোটি মানুষ নিহত হয়েছে। এখন প্রতি বছর প্রায় চার লাখ ৭৫ হাজার মানুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছে।

সাপ

পৃথিবীতে প্রতি বছর ৫০ হাজার মানুষ সাপের কামড়ে মারা যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বিষধর প্রজাতিটি হলো ইনল্যান্ড তাইপ্যান। এর বিষ এতোটাই মারাত্মক যে কামড়ানোর ৪৫ মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে একজন মানুষের মৃত্যু হতে পারে। ইনল্যান্ড তাইপ্যানের ছোবল খাওয়া প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষই মারা যায়। তবে সংখ্যায় বিরল হওয়ায় এই প্রজাতির সাপের কামড়ে খুব বেশি মানুষ মারা যায় না।

সাপের মধ্যে ভাইপারের কামড়ে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায়। বিষাক্ততার দিক থেকে ভাইপারের বিষ প্রথম ১০ এর মধ্যে না থাকলেও এই প্রজাতির সাপ মানুষের আবাসস্থলে বেশি সংখ্যায় দেখা যায়। শুধুমাত্র ভাইপারের কামড়েই পৃথিবীতে প্রতি বছর প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ মারা যায়; যা অন্য যেকোনো বিষধর সাপের তুলনায় বেশি।

ইনল্যান্ড তাইপ্যান সাপের দেখা মেলে শুধুমাত্র মধ্য অস্ট্রেলিয়ায়। অন্যদিকে ভাইপারের সবচেয়ে বেশি দেখা মেলে বিষুব রেখার উত্তরের দেশ পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলঙ্কাসহ মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার কিছু কিছু এলাকায়।

কুকুর

বিশ্বস্ত প্রাণী হিসেবে কুকুরের খ্যাতি অনেক। প্রাণিজগতের মধ্যে কুকুরকেই প্রথম পোষ মানিয়েছিল মানুষ। কিন্তু, প্রভুভক্ত এই প্রাণীটির কারণেই প্রতি বছর প্রায় ২৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। জলাতঙ্কে আক্রান্ত কুকুরের মাধ্যমে মানুষেরও জলাতঙ্ক হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রেই কুকুরের মাধ্যমে জলাতঙ্ক রোগ ছড়ায়। এর মধ্যে শুধুমাত্র ভারতেই মারা যায় প্রায় ২০ হাজার মানুষ।

তবে জলাতঙ্ক ছাড়া কুকুরের কামড়ে মানুষের মৃত্যুর ঘটনা বেশ বিরল। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর ৪৫ লাখ মানুষকে কুকুর কামড়ালেও এর মধ্যে মারা যায় মাত্র ৩০ জনের মতো মানুষ।

টেটসি মাছি

আকারের দিক থেকে সাধারণ মাছির আকারের হলেও এই মাছি মেরুদণ্ডী প্রাণীর রক্ত খেয়ে বাঁচে। এই মাছির কামড়ে আফ্রিকান ট্রাইপ্যানোসোমনিয়াসিস নামের একটি পরজীবীঘটিত রোগ হয়। এই রোগে ঘুমে সমস্যা, জ্বর, মাথা ও অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, বমি ও মস্তিষ্ক ফুলে যেতে পারে। ধারণা করা হয় প্রতি বছর আফ্রিকায় সাব-সাহারা অঞ্চলে ২০-৩০ হাজার মানুষ আফ্রিকান ট্রাইপ্যানোসোমনিয়াসিস রোগে আক্রান্ত হয়। এদের মধ্যে প্রায় ১০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।

কুমির

কুমিরকে মানব-শিকারি প্রাণী হিসেবে ধরা না হলেও সুযোগ পেলে কাউকেই আক্রমণ করতে পিছপা হয় না কুমির। প্রতি বছর শুধুমাত্র আফ্রিকাতেই কয়েকশো মানুষ কুমিরের আক্রমণের শিকার হয়। এই আক্রমণগুলোর মধ্যে এক তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। প্রত্যন্ত এলাকায় কুমিরের আক্রমণের অনেক ঘটনাই শেষ পর্যন্ত অজানা থেকে যায়। ধারণা করা হয় প্রতি বছর অন্তত এক হাজার মানুষ কুমিরের পেটে যায়।

সিংহ

শক্তি ও হিংস্রতার জন্য সিংহ পশুরাজ খেতাব পেলেও মানুষের সঙ্গে তার তেমন কোনো সংঘাত নেই। সারা পৃথিবীতে বছরে শখানেক মানুষ সিংহের আক্রমণের শিকার হন।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh Public Administration Ministry's Logo

2 deputy commissioners among 3 transferred ahead of polls

The Ministry of Public Administration today announced transfers of at least three government officials, including two deputy commissioners, ahead of the upcoming national parliamentary election

3h ago