নারায়ণগঞ্জে সাব রেজিস্ট্রারের ঘুষ নেওয়ার ভিডিও, মিনিটেই ৩ ফাইল স্বাক্ষর

​টেবিলের বাম পাশে বেশ কয়েকটি দলিল। চেয়ারে বসেই একের পর এক সই করতে শুরু করেন সাব রেজিস্ট্রার। এক মিনিটের মধ্যে তিনটি দলিলে তড়িৎ গতিতে স্বাক্ষর করেছেন তিনি। তবে প্রত্যেকটি স্বাক্ষরের আগে তার বাম পাশের ড্রয়ারে পৌঁছে দিতে হচ্ছে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা।

টেবিলের বাম পাশে বেশ কয়েকটি দলিল। চেয়ারে বসেই একের পর এক সই করতে শুরু করেন সাব রেজিস্ট্রার। এক মিনিটের মধ্যে তিনটি দলিলে তড়িৎ গতিতে স্বাক্ষর করেছেন তিনি। তবে প্রত্যেকটি স্বাক্ষরের আগে তার বাম পাশের ড্রয়ারে পৌঁছে দিতে হচ্ছে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা।

এ চিত্র প্রকাশ পেয়েছে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার কর্মকর্তার প্রকাশ্য ঘুষ গ্রহণের একটি ভিডিওতে। তার নাম এছহাক আলী মণ্ডল।

ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, দলিল লেখকেরা তাদের দলিলে স্বাক্ষরের সময় পাশে দাঁড়িয়েই টাকা দিচ্ছেন এছহাক আলীর হাতে কখনো বা তার ড্রয়ারে। এর মধ্যে একটি দলিলের বিপরীতে টাকার অংক কম হওয়ায় সেটা ফেরত দিয়ে ওই দলিল লেখককে ভর্ৎসনাও করেন। পরে আবার নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পাওয়ার পর স্বাক্ষর করেন।

গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার সাব রেজিস্ট্রার অফিসে কোনো দলিল রেজিস্ট্রি না হওয়ায় সেখানকার দলিল লেখক ও সাব রেজিস্ট্রারের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলাকালীন ওই ভিওিটি বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়ে। পরে খোঁজ নিয়ে ওই ভিডিও ও ঘুষ গ্রহণের সত্যতা পাওয়া গেছে। ভিডিওতে যে অফিসটি দেখা যাচ্ছে সেটি আড়াইহাজার উপজেলা সাব রেজিস্ট্রারের কার্যালয় ও ঘুষ গ্রহণকারী ব্যক্তিটি এছহাক আলী মণ্ডল বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

আড়াইহাজার উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সেক্রেটারি নূরুল আমিন জানান, আড়াইহাজারের সাব রেজিস্ট্রার গত পাঁচ মাস আগে বদলি হওয়ার কারণে বন্দর উপজেলার সাব রেজিস্ট্রার এছহাক আলী মণ্ডলকে গত তিন মাস আগে সেখানে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি সেখানে যোগ দেওয়ার পর থেকেই প্রতিটি দলিলের জন্য মোটা অংকের ঘুষ দাবি করেন দলিল লেখকদের কাছে। ঘুষ না দিলে সেই দলিল আর রেজিস্ট্রি হয় না। তার ঘুষ চাওয়া ও অন্যান্য অনিয়মের কারণে দেড় শতাধিক দলিল লেখক গত বুধবার থেকে কর্মবিরতি পালন করছে।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাব রেজিস্ট্রি অফিসের এক কর্মচারী জানান, সরকার দলীয় বেশ কয়েকজন দলিল লেখক তাদের প্রভাব খাটিয়ে জোরপূর্বক অবৈধ দলিল রেজিস্ট্রি করার জন্য সাব রেজিস্ট্রারকে চাপ দেয়। তারা সরকারি ফি ছাড়াই দলিল সম্পাদন করতে চেয়ে ব্যর্থ হয়ে সাধারণ দলিল লেখকদের জিম্মি করে কর্মবিরতি পালন করছে ও দলিল রেজিস্ট্রি বন্ধ রাখছে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা রেজিস্ট্রার সাবেকুর নাহার বলেন, “বৃহস্পতিবার রাতেই আমি ভিডিওটা দেখেছি। যেহেতু শুক্র ও শনি দুইদিন বন্ধ সেহেতু রোববার এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

এ বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য সাব রেজিস্ট্রার এছহাক আলী মণ্ডলের মোবাইলে একাধিকবার কল ও মেসেজ পাঠানোর পরও তার দিক থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

Comments

The Daily Star  | English
expediency

Expediency triumphs over principle in electoral politics

It appears that all of the ruling party’s efforts revolve around the next election, not considering longer-term ramifications for the itself.

6h ago