কোটা সংস্কারের দাবিতে দিনভর বিক্ষোভ, রাতভর সংঘর্ষ

​সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গতকাল রবিবার উত্তাল ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। সারাদিন শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলার পর সন্ধ্যার দিকে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করলে দুপক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে শাহবাগ, টিএসসিসহ ও এর আশপাশের এলাকাগুলো রণক্ষেত্রের রূপ পায়।
শাহবাগে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে টিয়ার গ্যাসের শেল ছুড়ছে পুলিশ। ছবি: আমরান হোসেন/পলাশ খান

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গতকাল রবিবার উত্তাল ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। সারাদিন শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলার পর সন্ধ্যার দিকে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করলে দুপক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে শাহবাগ, টিএসসিসহ ও এর আশপাশের এলাকাগুলো রণক্ষেত্রের রূপ পায়। এসময় সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগও পুলিশের সাথে যোগ দেয়। গত রাতে এই সংঘর্ষে অন্তত ৭৫ জন আহত হয়েছেন।

দুপুর আড়াইটা থেকে আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রায় পাঁচ ঘণ্টা শাহবাগ অবরোধ করে রাখার পর একশনে নামে পুলিশ। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে শত শত টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে পুলিশ। জলকামান থেকে গরম পানিও ছিটানো হয়। ছাত্ররা বিক্ষিপ্তভাবে পুলিশকে প্রতিরোধের চেষ্টা করে। রাত পৌনে ২টার দিকে ছাত্ররা ফটক ভেঙে উপাচার্যের বাসভবনে ঢুকে পড়েন। এসময় তারা জানতে চায় ক্যাম্পাসে গুলি কেন?, পুলিশ কেন? এক পর্যায়ে ছাত্ররা সেখানে ভাঙচুর চালিয়ে তিনটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে গেছে।

এর আধা ঘণ্টা বাদে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপাচার্যের বাসভবন থেকে সরিয়ে দেয়। সেসময় বেশ কয়েকটি গুলির শব্দ শোনা যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আরেকটি দল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদের পাশে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকে। এর প্রায় একশো গজ দূরে পাবলিক লাইব্রেরির সামনে অবস্থান নিয়েছিল আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শাহবাগে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। স্টার ফাইল ছবি

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে রবিবার দুপুর থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে গণপদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেন দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা।

কেন্দ্রীয়ভাবে বেলা ২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে এই পদযাত্রা শুরু হয়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনের রাস্তা দিয়ে বের হয়ে রাজু স্মৃতি ভাস্কর্য হয়ে নীলক্ষেত ও কাঁটাবন ঘুরে শাহবাগ মোড়ে এসে অবস্থান নেন কয়েক হাজার আন্দোলনকারী।

সংঘর্ষের এক পর্যায়ে গত রাত পৌনে ২টার দিকে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আসেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আজ সকাল ১১টায় তিনি আন্দোলনকারীদের সাথে আলোচনায় বসতে চেয়েছেন। তবে কোথায় বৈঠক হবে তা তিনি জানাননি।

এর আগে রাত ৮টার দিকে ছাত্রদের শাহবাগ মোড় থেকে ছাত্রদের তুলে দেয় পুলিশ। এসময় তারা ধাওয়া দিয়ে ছাত্রদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের দিকে ঢুকিয়ে দেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান টিএসসি এলাকায় এসময় দুপক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল বিনিময় হয়। দাবির সপক্ষে স্লোগান দিতে দিতে রাস্তায় টায়ার ফেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্সের নেতৃত্বে ৫০ জন নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালান।

তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে মোতাহার বলেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ ভাঙচুর থেকে আন্দোলনকারীদের বিরত রাখার চেষ্টা করছিলেন।

যে সংগঠনের ব্যানারে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলছে সেই বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সমন্বয়ক হাসান আল মামুন রাত সাড়ে ১০টার দিকে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছাত্র ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।

আন্দোলনকারীদের দাবি, বিদ্যমান কোটাপদ্ধতি সংস্কার করে কমাতে হবে। চাকরিতে কোটা সব মিলিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে তারা।

Comments

The Daily Star  | English

Yunus’ economic gambit paying off

Two months ago, as Professor Muhammad Yunus waded into Bangladesh’s unprecedented political turmoil, he inherited economic chaos by default.

1h ago