‘তুলে নেওয়া-চোখ বাঁধা’ সংস্কৃতি

কোটা সংস্কার আন্দোলন ‘ভয়ের সংস্কৃতি’র ভিতকে কিছুটা নাড়া দিতে সক্ষম হয়েছে। ভয়ের সংস্কৃতি তো এমনি এমনি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। পরিকল্পিতভাবে তা করা হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে যে ভয় মানুষের মনে ঢুকিয়ে দেয়া গেছে, তা যদি নড়বড়ে হয়ে পড়ে, বা পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়, প্রতিষ্ঠাতাদের চিন্তিত হওয়ারই কথা।
quota reformation protest in Bangladesh
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ছবি: পলাশ খান

কোটা সংস্কার আন্দোলন ‘ভয়ের সংস্কৃতি’র ভিতকে কিছুটা নাড়া দিতে সক্ষম হয়েছে। ভয়ের সংস্কৃতি তো এমনি এমনি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। পরিকল্পিতভাবে তা করা হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে যে ভয় মানুষের মনে ঢুকিয়ে দেয়া গেছে, তা যদি নড়বড়ে হয়ে পড়ে, বা পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়, প্রতিষ্ঠাতাদের চিন্তিত হওয়ারই কথা। কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের উপর কোনো কারণ ছাড়া যে নির্দয় নিপীড়ন চালানো হলো, টিয়ারসেল- রাবার বুলেট ছুঁড়ে ক্ষত বিক্ষত করা হলো, ব্যবহার করা হলো জলকামান, সবই করা হলো ভয়ের সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখার জন্যেই।যাদের ভয় দেখানোর জন্যে প্রায় যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে আক্রমণ করা হলো, সেই শিক্ষার্থীরা ছিলেন নিরস্ত্র।খালি হাতের শিক্ষার্থীরা যে ভয়কে তাচ্ছিল্য করে উড়িয়ে দিতে পারে, এই বিবেচনা হিসেবে রাখা হয়নি।সবচেয়ে প্রতিকূল সময়ে ভয়কে জয় করে, বরাবরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রুখে দাঁড়ায়।আবারও দাঁড়াল।ভয় দেখানোওয়ালারাও থেমে থাকল না। নেতৃত্বের চরিত্রহননের চেষ্টা সফল হলো না। প্রধানমন্ত্রীর ‘কোটাই থাকার দরকার নেই’ ঘোষণায় আন্দোলন স্থগিত হলো।’ হামলার প্রেক্ষিতের মামলা’ তুলে নেওয়ার দাবির পর,মামলা তোলা হলো না ‘তুলে নেওয়া’ হলো আন্দোলনের তিন নেতা ফারুক হাসান,নুরুল হক নুরু এবং রাশেদ খানকে।তাও সফল হলো না।

ফলে অনেকগুলো পক্ষ বেশ অস্থির হয়ে পড়েছে।যা তাদের কৃতকর্মে প্রকাশ হয়ে পড়ছে।

‘কি বললেন’ ‘কি করছেন’ ‘কি করবেন’- বেশ দ্বিধাগ্রস্ত তারা।

বিস্তারিত নয়, সংক্ষিপ্তভাবে কয়েকটি প্রসঙ্গ উল্লেখ করা যেতে পারে।

 

ক. ‘তথ্য জানার জন্যে তাদেরকে ডেকে আনা হয়েছিল’- ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার দেবদাস ভট্টাচার্য।

খ. ‘তিনজনের প্রত্যেককে দুই পাশ থেকে দু’জন ধরে গাড়িতে তুলে নিয়ে দ্রুত চলে যায়’- প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা।

গ. ‘আমাদের টেনে হেচরে জোর করে গাড়িতে তুলে চোখ বেঁধে হেলমেট পড়িয়ে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়’- ছেড়ে দেয়ার পর ক্যাম্পাসে ফিরে কথাগুলো বলেন ফারুক, রাশেদ, নূরুল।

ঘ. ‘তাদের চোখ বাঁধা হয়নি। কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল’ সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন ডিবি।

ঙ.‘আমাদের ঠিক ওভাবে চোখ বাঁধা হয়নি’- ডিবির সংবাদ সম্মেলনের পর একটি টেলিভিশনকে বলেছেন রাশেদ।

 

১. একটি আন্দোলন বিষয়ে তথ্য জানা পুলিশের অধিকার। জাতীয় স্বার্থে পুলিশকে তা জানতে হবে, গোয়েন্দারা ‘আগে-পরে’ সরকারকে তা জানাবেন। যারা আন্দোলন করছেন তাদের থেকেও তথ্য জানতে হতে পারে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে লাখ লাখ শিক্ষার্থী-চাকরি প্রার্থীরা সম্পৃক্ত। তথ্য জানার জন্যে আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারীদের পুলিশ বা গোয়েন্দা পুলিশ ডেকে নিতেই পারে। যদি নেতারা আত্মগোপনে থাকেন, খুঁজে বের করাটাও পুলিশের কাজ।এক্ষেত্রে  নেতারা সবাই প্রকাশ্যে, কেউ আত্মগোপনে নয়। খটকা তৈরি হলো ‘ডেকে নিয়ে যাওয়া’র ধরণ থেকে।তারচেয়েও বড় খটকা আন্দোলন যে এই পর্যায়ে যেতে পারে, তা আগে জানলেন না গোয়েন্দারা। এখন তারা ‘চোখ বেঁধে’ ডেকে নিচ্ছেন। চাবি হারিয়েছে অন্ধকারে, খুঁজছেন আলোয় এসে!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলনে আহতদের দেখতে নেতৃবৃন্দ ঢাকা মেডিকেলে গিয়েছিলেন। সাত আটটি মোটরসাইকেল তাদের রিকশা আটকেছে। জোর করে ধরে গাড়িতে তোলা হয়েছে। হেলমেট পড়িয়ে চোখ বাঁধা হয়েছে।

এটা ‘ডেকে নেয়া’র ঠিক কোন প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়ে? বিষয়টি তো এমন নয় যে, তাদের পূর্বে ডাকা হয়েছিল কিন্তু তারা যায়নি।

‘চোখ বেঁধে’ ধরে নিয়ে যাওয়ার নাম আর যাই হোক ‘ডেকে নেয়া’ হতে পারে না। ‘তথ্য জানার জন্যে’ যাদের ‘ডেকে নেয়া’ হলো, তাদের কাছে কোনো তথ্য  জানতে চাওয়া হলো না, কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দেয়া হলো। এটা এক ধরনের অস্থির আচরণের প্রকাশ। ‘ভয়’ দেখানোর কৌশল। কিছুটা নড়ে যাওয়া ‘ভয়ের সংস্কৃতি’র ভিত শক্ত করার কৌশল।এখন যতই বলা হোক, চোখ বাঁধা হয়নি- মনে হয় না তা কেউ বিশ্বাস করছে বা করবে।

‘ওভাবে চোখ বাঁধা হয়নি’- ডিবি বলার পর, বলেছেন আন্দোলনের একজন নেতা রাশেদ। তিনি নির্ভয়ে সত্য বলছেন, না ভয় তাকে বা তাদেরকে ক্রমশ জাপটে ধরছে- প্রশ্নটা জনমনে বড়ভাবেই থাকছে।

তর্কের স্বার্থে ধরে নেওয়া যাক ‘চোখ বাঁধা’ হয়নি। তো?

চোখ না বাঁধলেই সবকিছু জায়েজ হয়ে গেল?

‘টেনে হেঁচরে’ কালো গ্লাসের মাইক্রোবাসে তোলার নাম ‘ভুল বোঝাবুঝি’?

সবচেয়ে বড় সত্য, জোর করে ধরে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যাওয়া রক্ত শীতল করা আতঙ্কের। চোখ বেঁধে নিলেও আতঙ্কের, চোখ বেঁধে না নিলেও আতঙ্কের। চোখ বেঁধে যদি নাও নিয়ে থাকেন, তার মানে এই নয় যে কাজটি ভালো বা সঠিক হয়েছে। ঘটনাক্রম প্রমাণ করছে, আন্দোলনকারীদের দাবি সরকার প্রকাশ্যে মানলেও, ভেতরে ভেতরে তীব্রভাবে ক্ষুদ্ধ। আন্দোলনকারীদের চরিত্রহনন এবং ভয় দেখানোর প্রক্রিয়া, তারই প্রমাণ বহন করছে।

 

২. ভয় দেখানোর সঙ্গে চোখ বাঁধার একটা সম্পর্ক যেন চিরন্তন।১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী জামায়াতের আল বদর, আল শামস, বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে গিয়েছিল চোখ বেঁধে। তাদের কেউ ফিরে আসেনি, সবাইকে হত্যা করা হয়েছিল।

ধরার পর কারা চোখ বাঁধেন, কেন বাঁধেন- তা সবচেয়ে ভালো জানেন রাজনীতিবিদরা।

গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আওয়ামী লীগ- বিএনপির রাজনীতিবিদদের ধরার পর গাড়িতে উঠিয়ে চোখ বাঁধা হয়েছিল।সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামীকে চোখ বেঁধে অপহরণ করা হয়েছিল,ছাড়াও হয়েছিল চোখ বাঁধা অবস্থাতেই।

নারায়ণগঞ্জে সাত জনকে ধরে চোখ বাঁধা হয়েছিল। হত্যাও করা হয়েছিল চোখ বেঁধে।ভয়ের সংস্কৃতি সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যে একটা ‘অন্ধকার’ পরিবেশ তৈরি করা খুব জরুরি।

ভয়ের সংস্কৃতি স্থায়ীভাবে টিকিয়ে রাখার জন্যেই নারায়ণগঞ্জের গডফাদার হত্যা করিয়েছিল কিশোর ত্বকীকে। লক্ষীপুরের গডফাদারও সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখার জন্যে রাতের অন্ধকারে অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলামকে হত্যা করে, টুকরো করে কেটে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছিল। ফেনির গডফাদার যে কত মানুষ হত্যা করেছে, তার হিসেব নেই।

 

৩. বিশ্ববিদ্যালয়ে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে ছাত্রলীগ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নয়, হল এবং বিশ্ববিদ্যলয় পরিচালনা করে ছাত্রলীগ।কোন ছাত্র কোন হলে থাকবে, কোন ছাত্র হলে থাকবে না বা থাকতে দেওয়া হবে না- তা নির্ধারণ করে ছাত্রলীগ। শিক্ষকদেরও অনেক কিছু তারাই নিয়ন্ত্রণ করে।ভিসিসহ শিক্ষকরাও তাদের তোয়াজ করে চলেন।

মূলত ভয়ের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করেই ছাত্রলীগ প্রতিপক্ষ ছাত্র সংগঠনকে ক্যাম্পাস থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনও তারা ভয় দেখিয়ে দমন করতে চেয়েছিল।ইট - গুলি - লাঠি সবই ব্যবহার করেছিল বহিরাগত ক্যাডারদের সঙ্গে নিয়ে। ছাত্রলীগের নিপীড়নে অতীষ্ট শিক্ষার্থীরা কোনো কিছুতেই ভয় পায়নি। ভিসির বাড়ি ভাঙ্গচুর হয়েছে। চার পাঁচটি মামলা হয়েছে।’অজ্ঞাতনামা’ বিপুল সংখ্যক আসামী, হয়রানি বা ভয় দেখানোর অংশ।শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী অবশ্যই এই মামলা প্রত্যাহার করা দরকার। মামলা প্রত্যাহারের অর্থ এই নয় যে, অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া যাবে না। শাস্তি দিতে হবে, তদন্ত করে সুনির্দিষ্ট আসামীদের চিহ্নিত করে মামলা করতে হবে। পরিত্যাগ করতে হবে, জামায়াত- শিবির ট্যাগ দেওয়া সংস্কৃতি। অপরাধী সনাক্তের তদন্তের ক্ষেত্রে সততার পরিচয় দিতে হবে। কিন্তু, প্রকৃত তদন্ত হচ্ছে বলে মনে হয় না।সত্য জানতে হলে, বহিরাগতদের বিষয়ে জানতে হবে। তদন্ত করে সত্য জানার সাহস সরকারি বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আছে কিনা, সন্দেহ আছে।

কোটা সংস্কারের মত নায্য দাবির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ছাত্রলীগ নেতৃত্ব সমর্থন শুন্য হয়ে অসহায় অবস্থায় পড়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে তাদেরকে উদ্ধার করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিন দিন আগে যে ছাত্রলীগ কোটা সংস্কারের বিরুদ্ধে মিছিল করেছে,যে নেতার নেতৃত্বে বহিরাগতদের নিয়ে শহীদউল্লাহ হলের শিক্ষার্থীদের উপর আক্রমণ হয়েছে, তিন দিন পরে কোটা বাতিলের পক্ষে তাদের আনন্দ মিছিল করতে হয়েছে। ভয় দেখাতে গিয়ে নিজেরাই ভয় পেয়ে গিয়েছিল।

নিজেদেরকে সবচেয়ে অসম্মানকভাবে দেশের মানুষের সামনে শিক্ষক সমিতি নিজেরাই নিজেদের তুলে ধরেছেন।প্রথমাবস্থায় তারা কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র আবিস্কারের চেষ্টা করেছে। ভিসির বাড়ি ভাঙ্গচুরকারীদের বিচার চেয়েছে, নির্যাতিত- রক্তাক্ত শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ান নি, কথা বলেননি।ভয় যারা দেখাতে চেয়েছেন তাদের পক্ষ নিয়েছেন। অভিভাবক হিসেবে শিক্ষার্থীদের উপর প্রায় ১৬ ঘন্টা ধরে চলা নির্যাতন বন্ধ করার কোনো উদ্যোগ নেননি। ভিসির বাড়ি ভাঙ্গচুর হয়েছে ত্রিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ মিনিট ধরে।ভিসি- প্রক্টোরিয়াল বডি- শিক্ষক সমিতি, তা প্রতিরোধের উদ্যোগ নেননি।অথচ ক্যাম্পাসে তখন কয়েক’শ পুলিশ ছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি বা ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে বিশ্বিদ্যালয় প্রশাসন যোগাযোগ করেছিল কিনা, তাও পরিস্কার করে বলা হয় নি।

ভিসিসহ সবাই আবার তড়িঘরি করে পূর্বের অবস্থান থেকে সরে এসে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে একত্বতা প্রকাশ করেছেন। ‘বিরোধীতা’ যেমন প্রশ্ন তৈরি করেছিল, ‘পক্ষ’ নেওয়াও নানা প্রশ্ন তৈরি করেছে।

অসহায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তীনতা বাড়ছে। উনিশজন শিক্ষক ভিসির কাছে চিঠি লিখেছেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যে। এখনও যে কিছু সংখ্যক সত্যিকারের শিক্ষক আছেন, এটা তার প্রমাণ।আবার দৈন্যতার চিত্রও ফুটে উঠেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় ১৮০০, খোলা চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মাত্র ১৯ জন!

 

৪. কিছু গুম- খুন- অপহরণ করে ভয়ের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করা যায়। মানুষ ভয় পেলেও, ক্ষুদ্ধ থাকে।সালাম দেন ভয় থেকে, শ্রদ্ধা থেকে নয়।

সুযোগ পেলেই ক্ষুব্ধতার প্রকাশ ঘটে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে যা দেখা গেল। ভয় কেটে যেতে পারে, তখন কী হবে- মানসিকভাবে এমন অবস্থায় থেকে সিদ্ধান্ত নিলে তা সাধারণত সঠিক হয় না। একের পর এক ভুল পদক্ষেপ যেন তারই ইঙ্গিত বহন করছে।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

9h ago