পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গুলি, বোমাবাজি
পশ্চিমবঙ্গে চলমান পঞ্চায়েত নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্যে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক সংঘর্ষ। গতকাল সোমবারও পৃথক দুটি ঘটনায় দুজন নিহত হওয়ার খবর মিলেছে। আহত সংখ্যাও ছাড়িয়েছে হাজারের বেশি। সংঘর্ষের ঘটনাগুলোতে বন্দুক, পিস্তল, হাত বোমা, লাঠি ও ধারালো অস্ত্র ব্যবহার হতে দেখা গেছে।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ দেওয়ার পর নতুন করে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার চূড়ান্ত তারিখ ছিল সোমবার। কিন্তু এদিনই পশ্চিমবঙ্গে শাসক ও বিরোধী দলের মধ্যে তুমুল রাজনৈতিক সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোটা পশ্চিমবঙ্গের গ্রাম-বাংলা।
সোমবার সকাল ১১টা থেকে মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া হয় যা চলেছে বিকাল ৩টা পর্যন্ত। বিরোধী বিজেপি, কংগ্রেস এবং সিপিএমের অভিযোগ, শাসক তৃণমূল কংগ্রেস সন্ত্রাস সৃষ্টি করে বিরোধীদের পঞ্চায়েতে মনোনয়নপত্র জমা দিতে দিচ্ছে না।
এদিকে পঞ্চায়েত নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা নিয়ে সবগুলো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নির্ধারিত বৈঠকটিও সোমবারের বিকালের পরিবর্তনে আজ মঙ্গলবার করা হয়েছে। এই বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ওপর ভিত্তি করে নতুন করে নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশ করবে রাজ্য নির্বাচন কমিশন।
সোমবার বীরভূমের সিউড়ি ও উত্তর চব্বিশ পরগনার গোপালনগর ও বসিরহাটের দু’জনের মৃত্যু হয়। বিজেপির দাবি করেছে, নিহতরা তাদের দলীয় কর্মী। সিউড়িতে নিহত ব্যক্তি বিজেপির সংখ্যালঘু সেলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তবে রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস বীরভূমে নিহত ব্যক্তিকে নিজেদের দলের সক্রিয়-কর্মী বলেই উল্টো দাবি করায় মৃতদেহের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
মুর্শিদাবাদের বহরমপুরের কংগ্রেসের বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তীকে বাঁশ দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়। আহত বিধায়কের অভিযোগ এই ঘটনা ঘটিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থকরা।
এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ মেদিনীপুর, বর্ধমান, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, জলপাইগুড়ি, হুগলী ছাড়াও বিভিন্ন জেলা থেকে অশান্তির খবর পাওয়া যাচ্ছে। কলকাতা, জলপাইগুড়ি সহ রাজ্যের বেশ কিছু জায়গায় সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণের খবর পাওয়া গিয়েছে। কলকাতার আলীপুরের এক নারী সাংবাদিককে আটকে রাখা হয়। এমন কি কলকাতার একটি প্রভাবশালী বাংলা দৈনিক-পত্রিকার সাংবাদিককেও হেনস্থার অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে।
এদিকে বিজেপি নেতা মুকুল রায় দাবি করেছেন, তৃণমূল কংগ্রেস গুলি, বোমা ছুড়ে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে বিজেপি প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দিয়েছে। একই অভিযোগ করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এবং বামফ্রন্টের নেতা সূর্যকান্ত মিশ্রও। যদিও তৃণমূলের পরিষদীয় দল নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং পৌরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম দুজনই ওই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে পাল্টা বিজেপির বিরুদ্ধে অন্য রাজ্য থেকে সশস্ত্র কর্মী এনে রাজ্যে অশান্তি ছড়ানো অভিযোগ তোলেন।
প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয় এ মাসের ২ তারিখ। ৯ এপ্রিল তা শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে মনোনয়নপত্র জমার দিন থেকেই শাসক তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যব্যাপী সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করে বলে অভিযোগ তোলেন বিরোধী শিবির। বিষয়টি গড়ায় আদালতে। প্রায় এক সপ্তাহ নির্বাচন প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার পর নতুন করে আদালত এক দিনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে নতুন করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার নির্দেশ দেয় রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে।
পূর্ব ঘোষিত নির্বাচনের তারিখ ছিল যথাক্রমে ১, ২ এবং ৫ মে। পশ্চিমবঙ্গের গ্রাম পঞ্চায়েতের ৪৮ হাজার ৬৫০টি আসন, পঞ্চায়েত সমিতির ৯ হাজার ২১৭টি আসন এবং জেলা পরিষদের ৮২৫টি আসনে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।
Comments