রোহিঙ্গারা বিচার চায়

বিচার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কাছে নিপীড়নের বিচার চাইছেন রোহিঙ্গারা। গতকাল পালংখালী ক্যাম্প থেকে তোলা ছবি। স্টার

মাথায় টুপি পরা এক ব্যক্তি হাতে পোস্টার নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ইংরেজিতে তিনটি শব্দ লেখা ছিল পোস্টারটিতে। বাংলায় এর অর্থ দাঁড়ায়, ‘আমরা বিচার চাই।’ জাতিসংঘের কাছে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত মানুষ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া লাখো রোহিঙ্গার এখন এটিই দাবি।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা গতকাল কক্সবাজারে সরেজমিনে রোহিঙ্গাদের অবস্থা দেখেছেন; রাষ্ট্রীয়ভাবে নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণ ও নাগরিকত্বের অধিকার হারানো বিতাড়নের শিকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়টির সঙ্গে কথা বলেছেন। আজ তারা মিয়ানমার যাবেন।

কিন্তু রোহিঙ্গাদের জন্য সুবিচার নিশ্চিত করতে কতটা ভূমিকা রাখতে পারবেন তারা? জাতিসংঘে রাশিয়ার উপ স্থায়ী প্রতিনিধি দিমিত্রি পলিয়ানস্কি গতকাল কক্সবাজারে বলেন, “নিরাপত্তা পরিষদের কাছে এমন কিছু নেই যেটা দিয়ে রোহিঙ্গাদের সমস্যা নিমিষেই সমাধান করে ফেলা যায়।” তবে তিনি এটাও বলেছেন, “এটা খুবই জটিল একটি সমস্যা... আমরা সবচেয়ে ভালো সমাধান বের করার চেষ্টা করব।”

প্রায় একই কথার প্রতিধ্বনি করে চীনের উপ স্থায়ী প্রতিনিধি বলেছেন, “সমস্যাটির সহজ কোনো সমাধান নেই কিন্তু আমরা সবাই একযোগে কাজ করলে একটি উপায় বের হবে বলেই আমার বিশ্বাস।”

রোহিঙ্গারা তাদের ওপর অন্যায়ের প্রতিকারের জন্য গত আট মাস ধরে তাকিয়ে ছিল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের দিকে। মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধে বাধ্য করার জন্য সেখানে একাধিকবার প্রস্তাব উত্থাপিত হলেও রাশিয়া ও চীন তাতে ভেটো দিয়ে এর পথ রুদ্ধ করেছিল। বাংলাদেশে এসে রোহিঙ্গাদের দুর্দশা প্রত্যক্ষ পরার পর গতকাল দেশ দুটির প্রতিনিধিরা যে বক্তব্য দিলেন তাতে তাদের পূর্বের অবস্থান থেকে পরিবর্তনের আশা করা যাচ্ছে না। তবে কাচিনদের ওপর মিয়ানমার সরকারের শুরু করা নিপীড়নে পরিস্থিতির বদল হলেও হতে পারে। মিয়ানমার ছেড়ে কাচিনরা এখন চীনের দিকে পালিয়ে যাচ্ছে।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের দলটি গতকাল কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ড পরিদর্শনে যায়। মৃত্যুর হাত থাকে পালিয়ে এসে খোলা আকাশের নিচে হাজারো রোহিঙ্গা সেখানে মাসের পর মাস থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন। নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধি দলটি সেখানেও রোহিঙ্গাদের মুখ থেকে নিপীড়নের কথা শুনেছেন যে নিপীড়নের বর্ণনা বার বার উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে।

আজ প্রতিনিধি দলটি মিয়ানমারের কাছে শুনবেন কেন রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন চালানো হয়েছে, সারা বিশ্ব যাকে বলছে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’। সেখান থেকে তারা নিউইয়র্কে ফিরে গিয়ে তারা রাষ্ট্রপরিচয়হীন এই মানুষদের জন্য করণীয় নির্ধারণে আলোচনায় বসবেন।

গতকাল নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিরা যেসব রোহিঙ্গার কাছ থেকে তাদের দুর্দশা-নির্যাতনের কথা শুনেছেন তাদের মধ্যে একজন ছিলেন পারভিন। গত বছর তার স্বামীকে চোখের সামনে হত্যা করে তাকে ধর্ষণ করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। পারভিনের জীবনের গল্প শুনে নিরাপত্তা পরিষদের তিন জন প্রতিনিধি তাদের চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। তবে চোখের পানির দাগ মুছতেও তারা কালক্ষেপণ করেননি।

গত বছর ২৫ আগস্ট রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর ৩০টি চৌকিতে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির হামলার পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নির্বিচারে রোহিঙ্গা নিধন শুরু করে। নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে তখন থেকে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর বলছে, রোহিঙ্গাদের শত শত গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে ধর্ষণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলেও তারা জানিয়েছে। গণমাধ্যমের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো গণহত্যারও প্রমাণ মিলেছে।

Comments

The Daily Star  | English

7 colleges to continue operating under UGC until new university formed

Prof AKM Elias, principal of Dhaka College, to be appointed as the administrator

25m ago