নির্বাচন রঙ্গ

নির্বাচন রঙ্গ

যারা ইতিহাস পড়তে ভালোবাসেন তাদের জন্য একটা অন্যরকম নির্বাচনী ইতিহাস গড়ার গল্প বলি।

২০০১ সালে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ পৌরসভা নির্বাচনে একজন ভোটারও ভোট দেননি। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নির্বাচন কর্মকর্তারা অপেক্ষা করে ছিলেন। কিন্তু কেউ ভোট দিতে আসেননি। ওই নির্বাচনে যারা চেয়ারম্যান এবং সদস্য প্রার্থী ছিলেন তাদেরও কেউ ভোট দিতে আসেননি। শূন্য ভোট; বিধায় কেউ নির্বাচিত হতে পারেননি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন নির্বাচন আগে কেউ কখনো দেখনি। এ ইতিহাস গড়তে অবদান রেখেছিলেন আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।

ওই নির্বাচনের যখন তফসিল ঘোষণা করা হয়, তখন ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ। স্থানীয় আওয়ামী লীগের লোকজন বিএনপিসহ অন্য কোনো দলের কাউকে প্রার্থী হতে দেননি। কিছু আইনি জটিলতায় ওই নির্বাচনের ভোট গ্রহণ পিছিয়ে যায়। ২০০১ সালের অক্টোবরে ক্ষমতায় আসে বিএনপি। সে বছর শেষদিকে সন্দ্বীপ পৌরসভা নির্বাচনের ভোটে গ্রহণের দিন ঠিক করা হয়। এবার বিএনপির নেতাদের পালা। ভোটের আগেই আওয়ামী লীগের লোকজনকে তারা এলাকা ছাড়া করেন। এবং ভোটের দিন কোনো ভোটারকে কেন্দ্রমুখী হতে দেননি। এভাবেই রচিত হয় ইতিহাস।

এ ইতিহাসে খুশি হতে পারেননি সে সময়ের প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম এ সাঈদ। তিনি মহা ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন। কমিশনের বৈঠক ডেকে সেনাবাহিনী মোতায়েনের মাধ্যমে সন্দ্বীপ পৌরসভা নির্বাচনে ভোট গ্রহণের নতুন দিন ঠিক করেন।

সতেরো বছর পর আবার ইতিহাস রচিত হলো। এবার সন্দ্বীপ থেকে এক সময়ের শিল্পনগরী হিসেবে পরিচিত খুলনায়। গত মঙ্গলবার খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একটি ভোটকেন্দ্রে ৯৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ ভোট পড়েছে। ১০ নম্বর ওয়ার্ডের নয়াবাটি হাজী শরিয়তুল্লাহ বিদ্যাপীঠে এই ঘটনা ঘটেছে। রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে থাকা ফলাফল বলছে, কেন্দ্রটির ১,৮১৮ জন ভোটারের মধ্যে মাত্র একজন বাদে সবাই তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। আশ্চর্যজনকভাবে এর একটিই অর্থ দাঁড়ায়, স্থানীয় ভোটার তালিকার শুধুমাত্র একজন বাদে আর সবাই সেদিন তাদের এলাকায় উপস্থিত ছিলেন এবং ভোট দিয়েছেন। চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার মতই তথ্য বটে! এ ব্যাপারে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এরকম ভোট পড়া অস্বাভাবিক... কিছু অনিয়মের কারণে এমনটা হয়ে থাকতে পারে।’ বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে জানাবেন কি না, প্রশ্ন করা হলে তিনি আর কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি।

সতেরো বছর আগে সন্দ্বীপ পৌরসভা নির্বাচনে একজন ভোটারও ভোট দিতে না পারায় যে ইতিহাস রচিত হয়েছিল খুলনায় তার উল্টো ইতিহাস রচিত হলো। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা এ ইতিহাস গড়ার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব নিতেই পারেন। সন্দ্বীপে আওয়ামী লীগের নেতাকে নির্বাচিত হতে দিবেন না বলে বিএনপির নেতা-কর্মীরা কাউকে ভোট দিতে দেননি। আর খুলনায় বিএনপি নেতাকে পরাজিত করতে ওই কেন্দ্রে একজন বাদে সবার ভোট প্রদানের ব্যবস্থা করেছে।

সন্দ্বীপের ঘটনার পর নির্বাচন কমিশন ক্ষুব্ধ হয়েছিল। খুলনা নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশন খুশি; বলেছে, চমৎকার নির্বাচন হয়েছে। কমিশন চাইলে খুলনার সাফল্যে উদযাপন করতে পারেন। সতেরো বছর আগের ইতিহাসে যেমন অংশীদার ছিল নির্বাচন কমিশন; এখনও নতুন ইতিহাসের অংশীদার নির্বাচন কমিশন।

তাহলে দেখা যাচ্ছে, অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জয়লাভ করে যেমন ইতিহাস গড়া যায় তেমনি বিকল্পভাবেও ইতিহাস গড়া যায়; যেমন হয়েছিলো সন্দ্বীপ এবং যেমন ঘটলো খুলনায়। কে কোন ইতিহাস লিখতে চান সেটা যার যার নিজের মেধা মনন রুচির উপর নির্ভর করছে।

Comments

The Daily Star  | English

Police struggle as key top posts lie vacant

Police are grappling with operational challenges as more than 400 key posts have remained vacant over the past 10 months, impairing the force’s ability to combat crime. 

11h ago